[কখনো কখনো পুলিশের ভূমিকায় থেকেও পুলিশেরা মানুষের মতো হয়ে যান।আর সংকটটা তখনই তৈরি হয়। তখন আর মানুষ তাঁকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে আস্থা পায় না। সে মানুষের মতো হয় যায়। পুলিশকে আমার কেন এতো ভয়?]
।। শাকুর মজিদ ।।
পুলিশ- এই নামটা আমি প্রথম লেখা পড়ি তাবিজের মতো একটা পুটলিতে। বৃস্টির দিনে ঘরে বসে খেলা হবে। চার জনের খেলা। চারজন চারটা পুটলি পাবে। সাদা কাগজে হোমিওপ্যাথির পুরিয়ার মতো ভাজ করা কাগজ। একেকটায় একেক জনের নাম লেখা থাকতো। চোর, ডাকাত, বাবু আর পুলিশ। একেকজনের একেক নম্বর । চোরের নম্বর সব চেয়ে কম। ডাকাতের একটু বেশি, এরপর পুলিশের নম্বর। আর যিনি বাবু হতেন, মানে যার জিনিস খোয়া গেছে, তার নম্বর বেশি। এমন কিছু।
আমাদের চাওয়া ছিলো, ‘চোর’ লেখা পুটলিটা যেনো আমাদের হাতে না পড়ে। কারন ‘পুলিশ’ লেখা কাগজ যে পেতো তাকেই চোর ধরতে হতো। ধরা পড়লে পুলিশ নম্বর পেয়ে যেতো আর চোর শূন্য পেতো।
সেই সময় আমি প্রথম বুঝি যে চোর ধরা হচ্ছে পুলিশের কাজ।
কিন্তু তখনো আমি কোন পুলিশ দেখি নাই। যখন দেখি, আমার বয়স তখন দশ-এগারো, শুনি আমাদের গ্রামে পুলিশ আসছে।
আমাদের বাড়ি গ্রামের শেষ মাথায়। এরপর আরো লোকালয় নাই। আছে ধানি ক্ষেত আর জলভূমি। কিন্তু দেখি দুপুর থেকেই গ্রামের সব লোক আমাদের বাড়ির পাশ দিয়া দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে বলছে, ‘পুলিশ আ’র, দৌড়া’।
গ্রামে পুলিশ আসবে, তাই কোন পুরুষ গ্রামে থাকছে না। তার কারন, এই গ্রামের সাথে পাশের গ্রামের মারামারি হয়েছে, সেখানে মার্ডার হয়েছে একজন। গরুর ধান খাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি এবং এরপর লাঠি দিয়ে মাথায় বাড়ি। স্পট ডেড। যিনি এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তিনি সবার আগে লাপাত্তা। থানায় মামলা হয়েছে। আজ পুলিশ আসবে সরেজমিন তদন্তে। গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলবে। কিন্তু গ্রামের সবাই আতংকিত। তাঁদের ধারনা, আসামিকে না পেলে অন্য যে কাউকে ধরে নিয়ে যেতে পারে। এই ভয় তাঁদের। এবং পুলিশের মুখোমুখি যাতে হতে না হয় সে কারনে গ্রামের প্রায় সকল পুরুষ গ্রামছাড়া।
পুলিশ সেদিন কিন্তু আসে নি। পরের দিনও না। কিন্তু গ্রাম পুরুষশূন্য। গ্রামের মানুষ পুলিশের ভয়ে আতংকিত। যিনি অপরাধ করেছিলেন, তিনি তো হাওয়া, কিন্তু যারা অপরাধই করে নাই, তারাও গ্রামে থাকছে না। তারা এটা জানে বাঘে ছুইলে আঠারো ঘা, আর পুলিশ ধরলে ছত্রিশ ঘা। তাই পুলিশকে তাঁদের এতো ভয়।
একদিন খবর পেলাম, এক বাড়িতে পুলিশ এসেছে। আমি দৌড়ে গেলাম পুলিশ দেখতে। গিয়ে দেখি উঠানের উপর চেয়ার পেতে দেয়া হয়েছে। চেয়ারে বসে কয়েকজন চা-বিস্কুট খাচ্ছেন। এঁদের পরনে বাদামি রঙের পোশাক। হাতে রাইফেল। সবাই বলছে- এরা পুলিশ।
সেই বাড়িতে এক বৃদ্ধ আর মহিলারা আছেন। পুলিশের হাতে একটা রেডিও। তিনি এটা দেখিয়ে বৃদ্ধকে বলছেন- এই রেডিওর লাইসেন্স কোথায়?
আসামী ধরতে এসে পুলিশ রেডিওর লাইসেন্স খুঁজছে। আমার মনে আছে ঘটনাটি।
অনেক বড় হয়ে জেনেছি, পুলিশ মানুষের বন্ধু। কিন্তু পুলিশকে আমার বন্ধু মনে হয় না, তাঁকে আমার ভয় হয়।
মানুষ স্বভাবগত ভাবেই অপরাধপ্রবণ। জন্মের পর যে শিশুটি তার মায়ের কোলে বেড়ে ওঠে সেই মায়ের কাছে তার প্রথম অপরাধগুলো ধরা পড়ে। মা থেকে পরে পরিবারের অন্য লোক, পরে বাড়ির মানুষ, পাড়ার মানুষ। একে একে সবার কাছ থেকে তাঁকে তালিম নিয়ে অপরাধগুলো থেকে সে মুক্ত হতে চায়। জন্মের পর থেকেই যে মানুষগুলো তাঁকে এই শিক্ষা দেয়, এটাই ‘পুলিশিং’। যারা তালিম দিচ্ছে তারাও যে কখনো অপরাধ করে নাই, তা নয়। এঁদের মধ্য থেকে যে জানে কোন কাজটা আসলে তার করার কথা নয় অথচ করছে, এই শিক্ষা আগে যিনি পেয়ে যান, তিনি পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ন হন মাত্র। এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি পুলিশিং করতে করতে কখনো আবার সাধারন মানুষের মতো হয়ে যান তখন তিনি অপরাধীকে বাঁচানোর ওসিলায় আসলে নিজের স্বার্থ কায়ম করেন। পুলিশ তিনি তখন আর থাকেন না। তা সে খাকী পোষাকের পুলিশ হোক বা আমাদের মতো সিভিলিয়ান হোক।
সমাজ তো আগে পুলিশ পায় নাই। আগে চোর পেয়েছে, পরে তাঁকে ধরার লোক হিসেবে পুলিশকে নিয়েছে। মানুষেরা যদি মনুষ্যত্ব নিয়ে জীবন যাপন করতো তবে সমাজ কাঠামোতে পুলিশের প্রয়োজন হতো না। কিন্তু এটা অসম্ভব। কারন মানুষ জন্মগত ভাবেই অপরাধী শ্রেণীর। কারন ক্ষমতা যিনি ধারন করেন, তিনি তখন তার পক্ষে যায় এমন কানুন কে নিয়মে পরিণত করে ফেলেন বলে তার কাজটিকে শুদ্ধ বলে মনে করা হয়। মানুষ অন্য প্রাণীগুলোর চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বলেই অপর প্রানীকে হত্যা করে তাঁকে ভক্ষণ করে, এখানে মানুষ কিন্তু মানুষের বিচারে অপরাধী নয়, কারন এই কাণ্ড করাটাকে তারা ঠিক বলে নিজেরাই রায় দিয়ে বসেছে। মুরগির যদি বিচার করার ক্ষমতা থাকতো, মানুষকে তারা প্রতিদিন মৃত্যুদণ্ড দিতো। কিন্তু মুরগীর হাতে ক্ষমতা নাই বলে আই্ন মুরগীর নিয়মে চলে না, আইন চলে যার হাতে ক্ষমতা আছে সেই মানুষের নিয়মে। আবার বাঘ যখন মানুষ মেরে খেয়ে ফেলে মানুষের ক্ষমতা নাই বাঘকে মানুষের আদালতে এনে বিচার করা। ক্ষমতা যার বেশি আইন তার হয়ে যায়।
আমাদের পুলিশের হাতে বন্দুক আছে, চোরের হাতে লাঠি। লাঠি জানে সে বন্দুকের মতো ক্ষমতা তার নাই, তাই সে পালায়, বন্দুকের মুখোমুখি হয় না। পুলিশকে তাই চোরের এতো ভয়। যেকারনে এক মাদক ব্যবসায়ী অবলিলায় বলতে পারে- মাদক নিয়ে আমার কোন সমস্যা নাই, আমার সমস্যা- পুলিশ।
প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে যাঁদের ইতিহাস পাওয়া যায় , যেমন ব্যাবিলিওনীয়, চীনা, মিশরী বা গ্রিকদের সভ্যতার ইতিহাসে এমন শ্রেণীর মানুষের কথা জানা যায় যে রাজন্যবর্গরা তাঁদের নিয়োগ দিতো তাঁদের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য। এথেন্সে পেরিক্লিসের রাজসভাকে সুরক্ষিত রাখতে ৩০০ কৃতদাসকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। নিরাপত্তা রক্ষীদের দায়িত্ব ছিলো রাজার সম্মান রক্ষা, নাগরিকের অধিকার রক্ষায় কোন অপরাধি যদি বাধা দেয়, তাঁদের জীবন দিয়ে হলেও তা যেন প্রতিরোধ করে। দাসদের জীবন যেহেতু তার মনিবের ক্রয় করা সেহেতু এই দাসের জীবন বাজি রেখে তার মনিবের নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতেন।
কালের পরিক্রমায়, পঞ্চদশ শতকের গোড়ার দিকে ল্যাটিন ‘পলিশিয়া’ শব্দ থেকে ফরাসী ‘পলিস’ শব্দের উদ্ভব হল। এই ‘পলিস’ এসেছে ‘পলিসি’ শব্দ থেকে। যারা আইন প্রয়োগ, নাগরিকদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং সম্পত্তি নিশ্চিত করা এবং অপরাধ ও নাগরিক বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা কাজে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করবে, প্রয়োজনে তার নিজের প্রাণের বিনিময়ে। এখান থেকেই পুলিশ শব্দের উৎপত্তি খোদ ইংল্যান্ডে এবং এঁদের কাছ থেকে পুলিশ শ্রেনীর বিকাশ।
বৃটিশদের কাছ থেকে ফর্মুলা নিয়ে আমেরিকায় নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ চালু হয় উনিশ শতকের প্রথম দিকে আর মোঘলদের হাত থেকে বৃটিশরা যখন ভারতের পু্রোপুরি ক্ষমতা নিলো তখন তাঁদের নিরাপত্তা রক্ষা আর বৃটিশ বিরোধী ‘দাঙ্গাবাজ’ ঠেকানোর জন্য ভারতে, আরো স্পস্ট করে বললে আমাদের পশ্চিম বাংলায় পুলিশ আসে ১৮৫৮ সালের পরপরই। এর বছর তিনেক পর, রবীন্দ্রনাথে জন্মসন ১৮৬১ সালে ভারতে পুলিশবাহিনীর জন্য ফরমেট ঠিক করে দেয়া হলো।
বৃটিশের পুলিশ, দোর্দণ্ড প্রতাপ তার। আগের দিনের উপন্যাসে পড়েছি, হাফ প্যান্ট পরা পুলিশের ভয়ে জনসাধারন যেভাবে ভীত হতো তার বর্ণনা পড়ে শিহরিত হয়েছি। ধ্বীরাজ ভট্টাচার্য নামক এক লেখক তাঁর পুলিশ জীবনের যে কাহিনী লিখেছিলেন, সেসবও ভয় জাগানিয়া শিহরণ লাগিয়েছিলো আমাদের মনে।
এক লেখকের লেখায় পড়েছিলাম যে, ‘বৃটিশ পুলিশের আবার বেতন লাগবে কেন? এঁদের হাফ প্যান্ট পরিয়ে লাঠি হাতে ছেড়ে দাও, তারা করে খাবে নে।’
মূলতঃ এই সংলাপের ভেতর দিয়েই আমাদের সমাজে পুলিশের দ্বিচারিতার স্বাভাব বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু তারপরও সমাজ কাঠামো যেভাবে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং মানুষ যেভাবে পরস্পরের প্রতি আগ্রাসী, স্বার্থান্ধ হয়ে উঠেছে, যেখানে শুধু পুলিশকে দিয়ে সামাজিক পরিপূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্ভব নয়, যত না নাগরিকেরা নিজে শুদ্ধ না হয়।
আমাদের পুলিশকে মানুষের মতো হলে হবে না, তাঁকে পুলিশই হতে হবে। মানুষের মধ্যে শয়তানের বাস থাকে, পুলিশের মধ্যে শয়তান থাকতে পারে না। এ কারনে কখনো কখনো পুলিশের ভূমিকায় থেকেও পুলিশেরা মানুষের মতো হয়ে যান। আর সংকটটা তখনই তৈরি হয়। তখন আর মানুষ তাঁকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে আস্থা পায় না। সে মানুষের মতো হয় যায়।
এই পুলিশের জন্ম ও বিকাশ যে সকল জায়গায় হয়েছিলো তাঁর সব দেশের পুলিশের দেখা আমি পেয়েছি। পাকড়ানিও খেয়েছি।
২০০১ সালে আমেরিকার মিশিগানে আমাকে পুলিশ ধরলো। ঠিক আমাকে না, আমার সাথী, যে আমাকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো তাঁকে ধরলো। তাঁর অপরাধ ছিলো সে একটা ভুল জায়গায় ইউটার্ণ নিয়ে শটকাটে যেতে চেয়েছিলো। দেড়শো ডলার জরিমানার সাথে আরো ৪ ঘন্টার আদালতবাস ছিলো সেদিন আমার কপালে।
২০০৬ সালে একবার লন্ডনে পুলিশ ধরে আমাকে। একটা ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে পিকাডেলি সার্কাসে ছবি তুলছিলাম আমি। দুই বাচ্চা বয়েসি পুলিশের মুখোমুখি দুই বার হয়েছিলাম, মনে আছে। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে। শেষে বললো, – আমরা দূঃখিত, আমাদের একটা ভুল অনুমানের উপর তোমাকে আমরা সার্চ করেছি। তবে এ কারনে যদি তুমি চাও, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পার, তোমার সেই অধিকার আছে।
এই বলে একটা প্রিন্টেড স্লিপ দিল আমার হাতে। সেখানে ঠিকানা আছে নিকটস্থ থানার। আমি চাইলে যেন তাঁর বিরুদ্ধে সেখানে গিয়ে মামলা করতে পারি এবং আমি ক্ষতিপুরণও চাইতে পারি। আমি প্রাণে বেঁচে ইস্ট লন্ডনের ট্রেন ধরি, কীসের মামলা আমার !
আমার নানী ছিলেন বৃটিশ পুলিশের খুব ভক্ত। লন্ডনের পুলিশ নিয়ে তিনি প্রায়ই বলতেন, এরা যদি কলেমাটা পড়ে ফেলতো তাহলে সবাই বেহেস্তে চলে যেতো।
কিন্তু আমাদের অঞ্চলে বৃটিশরা পুলিশি এনে দিয়েছিলে যে শহরে, সেখানে আমার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। ২০১৪ সালে কলকাতা থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে সাদা রঙের পুলিশের পোশাক পরা এক লোক আমার ট্যাক্সি আটকায় এবং আমার সাথে থাকা ‘বেআইনী’ বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩০ হাজার টাকা সে নিয়ে নেয়। আমাকে বলে লাল বাজার গিয়ে টাকা নিয়ে আসতে। আমি তাকে টাকাগুলো দিয়ে ঢাকার ফ্লাইট ধরি।
পুলিশ দেখেছি আমি অস্ট্রেলিয়াতেও। ২০১৯ সালে সেখানে গিয়ে শুনি সে দেশের সর্বোচ্চ বেতনভোগী পেশাশ্রেণি হচ্ছে পুলিশ আর শিক্ষক। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাতে তাঁদের জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আমরা দলবেঁধে ছবি তুলছি। ভেতরের ছবি, বাইরের ছবি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী যে চেয়ারে বসেন সেই চেয়ারের পাশে দাড়িয়েও ছবি তুলি। কোন পুলিশ এসে কিছু বলে না। বাইরের ছবি তোলার সময় দেখি আমার দিকে এগিয়ে আসছে একজন। সে পুলিশই। তার চোখ আমার অজমো পকেট ক্যামেরার সেলফি স্টিকের দিকে।
আমাকে বলে- হ্যাই ম্যান, হোয়াট আর ইউ ডুইং ?
আমি বলি- শুটিং উইথ মাই গান
হেসে দেয় পুলিশ। কাছে আসে। যন্ত্রটাতে হাত দিয়ে দেখে এটা সত্যই বন্দুক না, ছোট ক্যামেরা।
এবার তাঁকে বলি, তুমি আমার পাশে এসে দাড়াও, আমি তোমাকে নিয়ে একটা সেলফি তুলি।
পুলিশ আমার পাশে এসে দাঁড়ায়।
আমি বলি, স্মাইল প্লিজ।
অস্টেলিয়ার পুলিশ হা হা করে হেসে ওঠে।
আমি জানিনা, আমার দেশের পুলিশকে নিয়ে কবে আমি এরকম একটা ছবি তুলতে পারব।
লেখক: স্থপতি, সাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা।