বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আসিফ মাহমুদের প্রকাশ্য মন্তব্যের বিষয়ে আগে থেকেই পুরোপুরি অবগত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রধান উপদেষ্টার দুই ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, হাসনাত আবদুল্লাহর দুই দিন আগে ফেসবুকে লেখা একটি পোস্ট এবং আসিফ মাহমুদ শাজিব ভূঁইয়ার টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারের বিষয়বস্তু ইউনূসের “পূর্ণ জ্ঞান, অনুমোদন এবং সম্মতি” নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। এই দুই ছাত্রনেতা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তাদের এই বিস্ফোরক মন্তব্যের জন্য ইউনূসের কাছ থেকে সরাসরি সমর্থন পেয়েছিলেন।
আজ সকালে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। এদিকে, ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী প্রশাসনের তিন উপদেষ্টা (আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে) ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কমপক্ষে চার ঘণ্টা বৈঠক করেন।
গত ২১ মার্চ হাসনাত এবং আসিফ সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আক্রমণ করেন। এর ১০ দিন আগে তারা জেনারেল ওয়াকারের সঙ্গে ঢাকা সেনানিবাসে তার বাসভবনে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে সেনাপ্রধান তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তবে এই ১০ দিন নীরব থাকার কারণ কী, তা এখনও রহস্য।
সূত্রের দাবি, এই সময়ে তারা বিদেশে থাকা তাদের হ্যান্ডলারদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং বুঝতে পারেন যে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই নরম হবে না। গত মাসে জেনারেল ওয়াকার ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর এই ধারণা আরও স্পষ্ট হয়।
হাসনাত তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে একটি “পরিশোধিত আওয়ামী লীগ” প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা চলছে। অন্যদিকে, আসিফ টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, “সেনাপ্রধানের প্রধান ভেটো ছিল এই যে, যার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, তাকে (মোহাম্মদ ইউনূস) কেন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথম পছন্দ করা হবে।”
এই মন্তব্যগুলো ছাত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ এবং প্রধান উপদেষ্টা ও ছাত্র সমন্বয়কদের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল স্পষ্ট করে তুলেছে। আসিফের বক্তব্য, যা সম্পূর্ণভাবে ইউনূসের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের পতন ঘটাতে পারে এবং ইউনূসকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আরও আক্রমণের মুখে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “জেনারেল ওয়াকারের পেছনে দাঁড়ানো সেনাবাহিনী” এই দুটি ঘটনাকে সহজভাবে নেবে না। দেশের রাজনীতি এখন এমন এক “টার্নিং পয়েন্টে” রয়েছে, যেখান থেকে যেকোনো দিকে পরিস্থিতি মোড় নিতে পারে। তারা মনে করেন, ছাত্ররা আবারও রাস্তায় নামতে পারে এবং সম্মানিত ও ভীত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রচারণা শুরু করতে পারে।
হাসনাত এবং আসিফের এই সমন্বিত মন্তব্যের পরদিনই কট্টর ইসলামপন্থী ও ভারতবিরোধী রাজনীতিবিদ যেমন অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, যিনি নিরাপত্তা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেন। ঢাকার রাস্তার সভায় ফুয়াদ সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, তিনি “রাষ্ট্রপতি (মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পু) এর আশীর্বাদে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছেন।” তিনি চুপ্পুকে “শেখ হাসিনার আরেক দাস কুকুর” বলে গালিগালাজ করেন।