।। শামীম আহমেদ।।
জুলাই অভ্যুত্থান ও অগাস্ট ষড়যন্ত্রের ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহ একটি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে সেনাবাহিনীর ধাতানি খাবার পর। স্ট্যাটাসটির পদে পদে কান্নার চিহ্ন, হতাশার চিহ্ন আর “আব্বু আমাকে বাঁচাও” টাইপের আকুতি। স্ট্যাটাসের শুরুতে সে উল্লেখ করেছে যে কয়েকদিন আগে সে জাতিকে “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” বিষয়ে সতর্ক করেছিল এবং এখন নিশ্চিত করছে এটি ঘটতে পারে।
পরবর্তীতে হাসনাত লিখেছে এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। পরিকল্পনা হচ্ছে সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন চৌধুরী এদের নিয়ে একটি “পরিশুদ্ধ” আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতিতে ফিরবে। এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন হাসনাতের ভাষ্যমতে এই যে ভারতীয় পরিকল্পনা সেটি সে কীভাবে জানল? এখানেই ঘটনা মজার মোড় নিয়েছে। হাসনাত লিখেছে ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় হাসনাতদের কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই পরিকল্পনা উত্থাপন করে। তার মানে হাসনাতের ভাষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের অধীনস্থ? যেহেতু এটি ভারতের পরিকল্পনা! তা যদি না হয়, তাহলে ভারতের পরিকল্পনায় পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার পরিকল্পনা সেনাবাহিনী কেন হাসনাতকে জানাবে? বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচিৎ হাসনাতকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গিয়ে আদর যত্ন করা এবং তাদের ভারতের আজ্ঞাবহ বাহিনী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য মোস্তফা ফারুকীর সেট ডিজাইনে তৈরী করা ‘আয়না ঘরে’ প্রেম ভালোবাসা দেয়া!
এরপরের টুইস্ট হচ্ছে হাসনাতটা কে? তাকে ভারত বা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা জানাতে হবে কেন? জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যখন লক্ষ লক্ষ সাধারণ শিক্ষার্থী প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছিল, তখন হাসনাত ও তার গং ব্যস্ত ছিল ষড়যন্ত্রে। স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী কেন এমন অকালকুষ্মান্ডদের তাদের পরিকল্পনা জানাবে? ভারতের যদি দরকার পড়ে তাহলে তারা সেটা সেনাবাহিনীকে জানালেই হয় যেহেতু সেনাবাহিনী ছাড়া বাকি সকল পক্ষ অবৈধ। হাসনাত যে রাজনৈতিক দল করেছে সেটার নাম আমার মনে থাকে না, অপ্রয়োজনীয় জিনিস মনে না থাকাই ভালো বলে। ইউনূস ও পঞ্চতান্ডবের সরকার পুরোপুরি অবৈধ, তাদেরকেও কিছু জানানোয় দায় সেনাবাহিনী বা ভারতের আছে বলে মনে করি না। ভারতের যা আলোচনা তা তারা করবে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সাথে। সেটি বিএনপি বা আওয়ামী লীগ যেই হোক না কেন!
টুইস্ট যদি আরও বাড়াতে চান তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের জুলাই মাসের অভিযোগ-অনুযোগগুলো নিয়ে ভাবুন। কোটা নির্মূলের আন্দোলন যে আসলে ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের পরিবারের কোটা চালুর আন্দোলন সেটা তো এখন সবাই বুঝে গিয়েছে। এরপরের দাবী ছিল দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। এখন ইউনূস ও পঞ্চতান্ডব ক্ষমতায় আছে ৭ মাস, নির্বাচনের নাম-গন্ধও নাই। নির্বাচিত আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ক্ষমতার বাইরে ১৭ বছর। জাতীয় পার্টি আছে লাইফ সাপোর্টে। এদিকে জীবনে রাজনীতি না করা, রাজনীতি না বোঝা হাসনাতের কাছে সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগকে পুনর্প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা পেশ করে কোন এখতিয়ারে?
এই হাসনাত আব্দুল্লাহ নির্বাচনে নামলে ইউনূসের মতো তল্পিতল্পা নিয়ে গুটাবে। ইউনূস ২০০৭ সালে নোবেল পেয়ে ভেবেছিল সে প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দল করে শূন্য জনপ্রিয়তা দেখে তল্পিতল্পা গুটিয়ে নির্বাচন বাদ দিয়ে ষড়যন্ত্রের রাস্তায় নামে। আর এই হাসনাতরা রাস্তায় নেমেছে ইউনূসের সেই ২০০৭ সালের ষড়যন্ত্রের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে। তাদের কাছে সেনাবাহিনীর অনুমোদন নিতে হয় আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর জন্য?
ভোটের জন্য নাকি এত কিছু, নির্বাচনের জন্য এত আন্দোলন, সুষ্ঠু ভোট দিতে না পেরে দেশের মানুষের কোষ্ঠকাঠিন্য, বাকস্বাধীনতার অভাবে গুলশান বনানীর প্রবাসী মধ্যবয়স্ক ষড়যন্ত্রকারীদের হাঁপানি হয়ে গেছে – এখন তাদের ও দেশের রাজনীতির, ক্ষমতার আলোচনা করে হাসনাত আব্দুল্লাহ’র মতো জঙ্গী, তাও ভারত আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে? তো আপনারা খুশী? আপনাদের ভোট ও বাকের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছেন?
আর হাসনাত যে বিরাট হ্যাডম দেখাচ্ছে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে, এটি তো সবাই অনেক আগে থেকেই জানে। ৪-৫ মাস আগে সাবের হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরানোর ইউনূসের প্রস্তাব নিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম। এটি তো হতেই পারে। শেখ হাসিনাকে ইউনূস, পঞ্চতান্ডব এরা এতটাই ভয় পায়, শেখ হাসিনা ছাড়া যে কোন আওয়ামী লীগ তারা মেনে নেবে। তারা জানে দেশের সর্ব বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, সবচেয়ে বেশী সমর্থক আওয়ামী লীগের (হ্যা ৫ অগাস্টের পরেও), এবং দেশকে আফগানিস্তান বানিয়ে দেয়ার পর এরা দেশে কোনো ভাবেই আর থাকতে পারবে না। তাই আওয়ামী লীগের সাথে যে অনাচার করা হয়েছে তার কাফফারা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের বি টিমকে মাঠে নামানো ছাড়া কারও কোনো উপায় নাই।
অগাস্ট ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মান সম্মান এমনিতেই ভূলুণ্ঠিত। হাসনাত, সার্জিস, নাহিদ, আসিফ এসব অর্বাচীনদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদের সেই সম্মান আর তলানীতে না নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরবে। প্রকাশ্যে ফিরবে। জনগণের দাবীতে ফিরবে। বাংলাদেশের মানুষ অনুরোধ করে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরাবে, কারণ তারা ৭ মাসেই দেখেছে ইউনূস ও পঞ্চতান্ডবের ষড়যন্ত্রে দেশ কোন জাহান্নামে পরিণত হয়েছে।
এইসব বিপথগামী বিভ্রান্ত মৌলবাদী তরুণদের বলতে চাই, “তোমরা রিয়ালিটি মাইনা নাও।” আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরবে, ক্ষমতায় ফিরবে। সেনাবাহিনী, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র আর ভারত সাথে থাকলেও ফিরবে; না থাকলেও ফিরবে। দেশে reconciliation ও হবে। জামাতের যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সাজা এখনও হয় নাই, তাদের সাজা হবে। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলাসহ শেখ হাসিনার উপর সকল আক্রমণে জড়িত বিএনপি ও সকল মৌলবাদীদের বিচার হবে। তারপর জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যায় জড়িত সকল ষড়যন্ত্রকারীর বিচার হবে। এরপর reconciliation হবে। তোমরা রিয়ালিটি মাইনা নাও। মার্চ ২১, ২০২৫
লেখক পরিচিতি: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ