যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় ফৌজদারি অপরাধ বিষয়ক আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসির নেতৃত্বে দেশটির প্রখ্যাত আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এ একটি অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
অভিযোগটি আইসিসি সনদের ১৫নং ধারার আওতায় দায়ের করা হবে। এই ধারা অনুসারে, অভিযোগটি ভুক্তভোগীদেরকে আইসিসির কাছে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন ও তদন্তের আবেদন করার অনুমতি দেয়।
২০২৪ সালের ৮ই আগস্ট ড. ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সাংবাদিক, পুলিশ কর্মকর্তা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর সহিংস হামলা ও অকারণ ও হিংসাত্মক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ রয়েছে: (১) হত্যাকাণ্ড, (২) মিথ্যা অপরাধে সাংবাদিকদের বেআইনি কারাদণ্ড, (৩) নিয়ন্ত্রণহীন জনতার হিংসা এবং (৪) ধর্মীয় হিংসার প্ররোচনা, যেমন বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলা ও হিন্দুদের মন্দির-প্রতিমা ধ্বংস। অথচ, বাংলাদেশে এই অভিযোগের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ইউনূস-সরকার।
এই ১৫নং ধারার অভিযোগটি বাংলাদেশে ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের কাছ থেকে সংগৃহীত প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে।
এই সহিংসতার ঘটনা ও হামলাগুলোর ব্যাপকতা এবং সুপরিকল্পিত ধরণ এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পরিকল্পিত এবং আইসিসি সনদের ৭নং ধারার আওতায় হত্যা, নিপীড়ন এবং মানবিক স্বাধীনতার গুরুতর হরণ হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।
স্টিভেন পাওলস কেসি বলেন, “কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যদি আইসিসির এখতিয়ারভুক্ত অপরাধের শিকার ব্যক্তিরা নিজ দেশে ন্যায়বিচার না পান, তবে এই অপরাধগুলো আইসিসির নজরে আনা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে একটি কঠোর ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে পারে।”
জনৈক ভুক্তভোগী, শাহিন আলমের ছোট ভাই শামীম মোল্লাকে ড. ইউনূসের ক্ষমতা গ্রহণের পর তার অনুসারীরা অপহরণ করে হত্যা করে।
শাহিন আলম বলেন, “আমার ভাইকে নির্মমভাবে একটি সহিংস হামলার মাধ্যমে বিনা দোষে হত্যা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আইনশৃঙ্খলাহীনতায় নিমজ্জিত হয়েছে। চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর আটক জঙ্গি সদস্যদের জেল থেকে বের করে বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার জন্য ন্যায়বিচার পেতে এবং দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।”
বিশ্লেষকদের মতে, আইসিসিতে এই অভিযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক মঞ্চে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।