বরিশালে বিএনপির ৩ নেতা গ্রেফতার, ১২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা * বিএনপির নতুন কমিটির প্রতিবাদে মীরসরাইয়ে বিক্ষোভ, হামলা ভাঙচুর, আহত ১০ * মুরাদনগরে বিএনপির ৩২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৬
টেন্ডার বাগাতে সেনা সদস্যকে অপহরণ
টেন্ডার দখল করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে অপহরণ, মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে বরিশাল বিএনপির ১২ প্রভাবশালী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রদলের তিন নেতাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে সেনাসদস্যরা। বিএনপির নতুন কমিটির প্রতিবাদে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বিক্ষোভ, হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ জন। কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির ৩২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ছয়জন। ব্যুরো ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
বরিশাল : অপহরণের শিকার সেনা কর্মকর্তার চাচা আব্দুল মতিন কাজীর করা মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি, যুবদল, মহিলা দল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আরও নয় শীর্ষ নেতাকর্মীকে। এ নয়জনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।
সোমবার ২৪ মার্চ ছিল বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন মেঘনাসহ কয়েকটি নদীর বালুমহাল ইজারা দেওয়ার টেন্ডার দাখিলের দিন। মামলার বাদী মতিন কাজী জানান, টেন্ডার দাখিল করতে তিনি চাঁদপুর থেকে বরিশালে আসেন। রোববার দুপুর ১টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে টেন্ডার জমা দিয়ে বেরুনোর পরপরই অভিযুক্তরা তাকে ও তার সঙ্গে থাকা ভাতিজা সেনাসদস্য জাফরকে ধমকানো শুরু করে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। তাদের অনুমতি ছাড়া কেন টেন্ডার জমা দেওয়া হলো সেই কৈফিয়তও চান তারা। এ সময় মতিন কাজীর সঙ্গে তার আরেক আত্মীয় মো. আবুল বাছেদ ছিলেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে বেরুনোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে টেন্ডারবাজরা। এ সময় মতিন ও বাছেদ দৌড়ে পালাতে পারলেও জাফরকে অপহরণ করে কাছেই একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। এ সময় নিজেকে সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল পরিচয় দিয়ে আইডি কার্ড দেখালে তারা তার আইডি কার্ড ভেঙে ফেলে এবং মোবাইল ফোনসহ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। জমা দেওয়া টেন্ডার উঠিয়ে না নিলে হত্যার হুমকি দিয়ে জাফরকে ফেলে রেখে তারা চলে যায়। এদিকে পালিয়ে বাঁচার পর স্থানীয় সেনাক্যাম্পে গিয়ে জানানো হলে অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। গ্রেফতার করা হয় হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট দেওয়ান মো. মনির হোসেন, বরিশাল জেলা ছাত্রদলের (উত্তর) সহসভাপতি নূর হোসেন সুজন এবং হিজলা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য মো. ইমরান খন্দকারকে। পরে তাদের কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১২ জনসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবরই বলে আসছেন যে কারও ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় নেবে না বিএনপি। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
মীরসরাই (চট্টগ্রাম) : বিএনপি মীরসরাই উপজেলা, পৌর শাখা ও বারইয়ারহাট পৌর শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রতিবাদে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, হামলা ও ভাঙচুর করেছে প্রতিপক্ষ। সোমবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার স্বাক্ষরিত তিনটি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। এরপর সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দিনভর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হামলা ভাঙচুর, বিক্ষোভ মিছিল হতে থাকে। এতে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হন।
মীরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল হাসান লিটন বলেন, সোমবার রাত ৮টার দিকে একদল সন্ত্রাসী পৌর মার্কেটের দ্বিতীয়তলায় আমার কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় তাদের হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। মীরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা : মুরাদনগর থানায় হামলা এবং ছাত্র সমন্বয়ক ওবায়দুল হকের ওপর হামলার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ ৩২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির ছয় কর্মীকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হেয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন-বিএনপি কর্মী আবুল কালাম, মোহাম্মদ হোসেন, মো. ওহাব আলী, আবুল হাসান জুয়েল, মো. মুহসিন সরকার, মো. জসিম উদ্দিন।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে ছাত্র সমন্বয়ক ওবায়দুল হকের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি এবং মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওবায়দুল হক থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করে। থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে বিএনপির ৭০-৮০ নেতাকর্মী তাকে ছাড়িয়ে নিতে আসে। একপর্যায়ে লাঠিসোঁটা হকিস্টিক নিয়ে তারা থানার ফটকে হামলা চালায়।
বক্তব্য নেওয়ার জন্য উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিনকে ফোন করা হলেও তারা দুজনই ফোন কেটে দেন। যুগান্তর ডেস্ক প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম প্রিন্ট সংস্করণ।