ঢাকা, ২৫ মার্চ: নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কারাদণ্ড ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ উঠেছে।
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিন তার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, ড. ইউনূসের সরকার সাংবাদিকদের উপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে এবং জামায়াত-ই-ইসলামীর মতো কট্টরপন্থী গোষ্ঠীকে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
রুবিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের হয়রানি ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ফারজানা রূপা ও শাকিল আহমেদের কথা উল্লেখ করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে হত্যার মামলায় “ভিত্তিহীন” অভিযোগ আনা হয়েছে। এই দম্পতিকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে এবং তাদের ছোট মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, প্রায় ১০০০ সাংবাদিককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যাদেরকে “অতিরিক্ত ধর্মনিরপেক্ষ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে রুবিনের দাবি।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিকও ইউনূস সরকারের নিশানায় পরিণত হয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন নিয়ে বিশেষজ্ঞ এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। রুবিনের মতে, এই পদক্ষেপগুলো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও সিরিয়ার হায়াত তাহরির আল-শাম নেতা আহমদ আল-শারার নীতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
২০০৬ সালে মাইক্রোক্রেডিটের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া ড. ইউনূস গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে রুবিনের দাবি, তিনি এখন “অগণতান্ত্রিক” পদক্ষেপের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের অধীনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করতে। রুবিনের মতে, “নোবেল শান্তি পুরস্কারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।”
এই অভিযোগের জবাবে ড. ইউনূস বা তার প্রতিনিধিরা এখনও সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তার সমর্থকরা দাবি করছেন, এই অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টার অংশ। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা তীব্রতর হচ্ছে, এবং এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।