ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের ৭০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এবারের বৈশাখ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বৈশাখ। এ আয়োজনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের চাটুকারিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে আমরা শিক্ষকদের আয়োজন করা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা ও শোভাযাত্রা সমর্থন করছি না।’
প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপনে সাজসজ্জার দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর পড়লেও এ বছর সে দায়িত্ব শিক্ষার্থীদেরকে দেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৈশাখ উদযাপন বর্জন করেছেন অনুষদটির অধিকাংশ শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ২০১৭-১৮ সেশন তথা চারুকলা অনুষদের ৭০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের বৈশাখের আয়োজনের সাথে আমাদের কোনও প্রকার সম্পৃক্ততা নেই। মূলত বৈশাখ প্রতিবছর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট ব্যাচের তত্ত্বাবধায়নে এবং সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের যৌথ প্রয়াসে আয়োজিত হয়ে থাকে। যে আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থ অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শিল্পকর্ম বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। চারুকলার রীতি অনুযায়ী যা এ বছর আমাদের ব্যাচের দায়িত্ব হওয়ার কথা ছিল।
“কিন্তু এবারের আয়োজন একেবারেই চারুকলা অনুষদের পূর্বাপর রীতির ব্যতিক্রমীভাবে কোনরকম শিক্ষার্থীদের সম্মতি ও সম্পৃক্ততা ছাড়া শুধুমাত্র শিক্ষকদের সিদ্ধান্তে করা হচ্ছে যা আমাদের বিশ্বাস ও ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এছাড়া এবার একাডেমিকভাবে বৈশাখ আয়োজন করার এই সিদ্ধান্ত অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ছাত্র প্রতিনিধি কারও সাথে কোনরকম পূর্ব-আলোচনা ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট ছাত্র-শিক্ষক গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততায় খুবই অতর্কিতভাবে নেওয়া হয়েছে।”
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, শোভাযাত্রায় বানানো স্ট্রাকচারের ডিজাইন এবং আইডিয়া সম্পূর্ণ শিক্ষকদের দেওয়া, চারুকলার আপামর সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথে কোনোভাবেই সংযুক্ত এবং অবগত না। শহীদ আবু সাঈদের স্ট্রাকচার সম্পর্কেও আমরা অবগত ছিলাম না এবং কারও ব্যক্তিগত মতাদর্শে আঘাত দেওয়ার পক্ষেও না আমরা। এহেন কুরুচিপূর্ণ ও প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে নেওয়া হয়নি এবং চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের সাথে ছিল না।
অতএব এর জন্য অনলাইনে তৈরি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দায় সমগ্র চারুকলার নয় বরং দায়িত্বে থাকা নির্দিষ্ট কতিপয় আয়োজক এবং ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ওপর বর্তায়।
“আমরা প্রতিবছর চারুকলা অনুষদে আয়োজিত হয়ে আসা বৈশাখের আয়োজন নয় বরং স্বজনপ্রীতিদুষ্ট ও দেশের পরিবর্তনকালীন সময়ে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী ‘বৈশাখ ১৪৩২’-এর আয়োজন ও আয়োজক কমিটিকে চারুকলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এ বিষয়ে অনুষদটির প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত বশাক অর্ণব বলেন, আজ আমরা বিবৃতি দিয়েছি। কারণ যেভাবে বরাবরের মতো বৈশাখ হয় সেভাবে হচ্ছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করে তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া করা হয়েছে এই আয়োজন।
অনুষদটির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দস্তগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগে মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হতো। তারা চারুকলার সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে একাধিক কমিটি করে কাজ করতো। কিন্তু এ বছর আমাদেরকে ডাকা হয়নি। এবার আমাদেরকে কিছু না জানিয়েই মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এবার আমাদের ডিন এবং কিছু ছাত্র প্রতিনিধি যারা আমাদেরকে প্রতিনিধিত্ব করে না তাদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, আমাদেরকে ডাকা হয়নি। এভাবে আমাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। চোখের সামনে কাজগুলো হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু আমরা কেউ যাচ্ছি না, আমাদেরকে কেউ ডাকছেও না।
“এবার আমাদেরকে কোনও কিছুতেই ডাকা হয়নি মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম কী অথবা শোভাযাত্রার এক মাস আগে থেকেই আমাদের একটি লোগো প্রতিযোগিতা হতো সেখানে অনেকেই লোগো জমা দিতো সে ব্যাপারেও আমাদেরকে কোনও কিছু জানানো হয়নি।”
এ ব্যাপারে শোভাযাত্রা কমিটির আহ্বায়ক ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজাহারুল ইসলাম শেখ বলেন, বর্তমান ছাত্র-শিক্ষক, এলামনাইয়ের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই কাজটা হয় এবং অতীতেও হয়েছে। তবে মাঝখানে যেটা হয়েছিল এই আয়োজনের দায়িত্ব একটা ব্যাচকে দিয়ে দেওয়ার কারণে সবাই সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
ফলে এগুলোর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ কারণে আমি আমার অনুষদের সকল শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে তিনটা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা সকল ছাত্র-শিক্ষক ও সাবেক ছাত্র সকলের সমন্বয়ে কাজটি করবো এবং একাডেমিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এটা বিবেচিত হবে।
শিক্ষার্থীদের বয়কটের ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করছে তাদের মধ্যে আজ পর্যন্ত কেউ এসে বলেনি যে আমরা কাজটা করতে চাই। আমরা এই জায়গাটা সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। এখানে যে কেউ এসে কাজ করতে পারবে— সেটা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও। এখানে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং সেটা একটা অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত। যারা বিবৃতি দিয়েছে তারা অলরেডি পাস করে বেরিয়ে গিয়েছে। তাদের সাথে তো শিক্ষকদের একটা সমন্বয়হীনতা রয়ে গেছে। এছাড়া তারা একবারও এসে বলেনি যে তারা আয়োজনটা করতে চায়।
“এ ধরনের বিবৃতি হয়তো কোনও না কোনোভাবে এক ধরনের অসন্তোষ বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে”, বলে জানান চারুকলা অনুষদের ডিন।