বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকার বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করছেন গাজীপুরে টিএনজেড গ্রুপের তিনটি পোশাক কারখানার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকের কেউ কেউ তিন মাস ও কেউ কেউ চার মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস পাবেন। আজ শনিবার দুপুরেও শ্রমিকদের নানা স্লোগান দিয়ে বেতন বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করতে দেখা যায়।
ছয় বছর ধরে টিএনজেড গ্রুপের ফ্যাক্টরি অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন নার্গিস বেগম। অসুস্থ স্বামী, এক ছেলে ও শাশুড়ি নিয়ে তাঁর পরিবার। তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। অসুস্থ স্বামীর ওষুধ কিনতে পারছেন না। বাসাভাড়া বাকি।
নার্গিস বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর ওষুধের জন্য প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে লাগে। সেটিও জোগাড় করতে পারছেন না। অনেকের কাছ থেকে ধার (ঋণ) নিয়েছেন, সেগুলো দিতে পারছেন না।
এক বছর তিন মাস ধরে টিএনজেড গ্রুপের ফ্যাক্টরি অপারেটর হিসেবে কাজ করেন সামছুন নাহার। তিনি বলেন, গত রোববার থেকে তাঁরা এখানে আন্দোলন করছেন। তিন মাসের বকেয়া পাবেন। সাত রাত, সাত দিন তাঁরা এই শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। কারও কোনো রকম আশ্বাস পাননি।
ঈদে বাড়ি যাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাড়ি যাব কীভাবে, টাকা ছাড়া তো যাওয়া যাবে না। টাকা ছাড়া তো গাড়িতেও ওঠায় না।’
শ্রমিকদের আন্দোলনে হতাশ হয়ে বসে আছেন চম্পা আক্তার। ৯ বছর ধরে তিনিও এই একই ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ফ্যাক্টরিতে কাজের সুবাদে গাজীপুরের জয়দেবপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। স্বামী অটোরিকশা চালান। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনিও সাত দিন ধরে এই ভবনের সামনে বেতন–বোনাসের দাবিতে অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাননি বলে জানান চম্পা আক্তার। কীভাবে ঈদ কাটাবেন কিংবা কীভাবে পরিবার চলবে, সেটি নিয়ে অনিশ্চিত তিনি।
ময়মনসিংহের নান্দাইল গ্রামের জোসনা আক্তার দুই ছেলেকে মায়ের কাছে বাড়িতে রেখে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করছেন। বেতন ছাড়া বাড়ি যাবেন না বলে জানান তিনি।
তিন বছর দুই মাস ধরে টিএনজেড গ্রুপের কারখানায় কাজ করেন অনিতা রায়। তিনিও তিন মাসের বেতন এবং বোনাস পাবেন। পরিবার ছেড়ে সাত দিন ধরে বেতন–বোনাসের দাবিতে এই সড়কে অবস্থান তার।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কোনো আশ্বাস পাইনি। তবে এতটুকু জানতে পেরেছি, আজ শ্রমসচিব আমাদের সঙ্গে বসতে চান। সাত দিন ধরে শ্রমিকেরা বেতন–বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছেন। অথচ শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব দূরের কথা, কোনো কর্মকর্তাই এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো কথা বা যোগাযোগ করেননি।’
মোশরেফা মিশু বলেন, ‘আমরা চাই শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন না দিলেও আপাতত এক মাসের বেতন ও বোনাস যাতে দেওয়া হয়, তাহলে অন্তত শ্রমিকেরা বাড়িতে গিয়ে কোনো রকম ঈদ করতে পারবে। তবে লিখিত দিতে হবে দ্রুত তাঁদের বকেয়া বেতন পরিশোধের।