প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম। ঈদ মুবারক। সবাইকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা। ঈদ-উল-ফিতর মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পর ঈদের আনন্দে মুখরিত হয় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব। আত্মশুদ্ধির মাস শেষে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে মুসলমানরা। বাংলাদেশে এই উৎসবে শরিক হয় সব ধর্ম, বর্ণ ও জাতিসত্তার মানুষেরা। বাংলাদেশে এই উৎসব এই অঞ্চলের শত বছরের ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য বহন করছে। আনন্দের এইদিনে আমি প্রাণভরে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আমার দেশের জন্য, দেশের অভাগা মানুষের জন্য।
এই দেশের গরীব দুঃখী জনগণ যখনই দু’বেলা পেট পুরে খেয়ে আরেকটু ভালোভাবে বাঁচবার চেষ্টা করে তখনই এই স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশবিরোধী শত্রুরা ষড়যন্ত্রের ছক আঁকতে বসে। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে যাদের গাত্রদাহ হয় তারাই ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে বারবার সেটারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এবার তারা মেতেছে ধ্বংসোল্লাসে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করার প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে সেই আশঙ্কারই পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ঈদের উৎসবে মানুষের ঐক্যে, মানুষের জাগরণে সেই শঙ্কাকে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও সম্প্রীতিময় সমাজ ও দেশ রক্ষায়।
আমি জানি, এবারের ঈদ আনন্দে সবার শরিক হওয়া হবে না। বিগত প্রায় আট মাসে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। দখলদারদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পায়নি মাজার, খানকা ও দরগাহ শরীফও। বাংলায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার আটশো বছরে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সাথে সাথে অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পোষাকশিল্প সহ উৎপাদনমুখী শত শত শিল্প-কারখানা। ঈদের এই সময়ে প্রাপ্য বেতন ও বোনাসের দাবি জানানোর পরিণতিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শ্রমিকেরা।
নিরীহ ও বিপন্ন মানুষসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্যাতিত কোটি নেতাকর্মী আজ আমার মতোই আপনজনের সাথে ঈদ করতে পারছেন না। অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের সময়ে শহিদ সকলের পরিবারের সদস্যবর্গ এবং নির্মম নির্যাতন-নিপীড়নে আহত ও পঙ্গুতবরণকারী সহ কারাগারে বন্দী অজস্র নেতাকর্মীদের পরিবারের প্রতি আমি সহানুভূতি প্রকাশ করছি। আপনারাই আমার আপনজন। আপনাদের জন্য, বাংলাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের আপনজন হিসেবেই আমি জীবন বাজি রেখে লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আল্লাহ যখন এখনও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তখন আপনাদের নিয়েই আমি বাঁচতে চাই। আপনাদের হয়ে এবং আপনাদের জন্য আমার সংগ্রাম চলবে।
ঈদ উল ফিতরেরে পবিত্র দিনে রাব্বুল আল আমিনের কাছে আর্তি, তিনি যেন আমাদের সকলের প্রতি সহায় হোন। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আমাদের অবিচল থাকতে হবে। নিশ্চয়ই পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী এবং আমাদের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতিদানের ব্যবস্থা করবেন।
সবাইকে আবারও ঈদ মুবারক। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, আঁধার কেটে ভোর হোক।