লালমনিরহাট শহরের বিডিআর রোডে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্মারক মঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ম্যুরালটি ভাঙার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ম্যুরালটি ভাঙার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (৩১ মার্চ) এক বিবৃতিতে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ দাবি জানিয়েছেন।
উদীচীর বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের মূল চেতনা কোনোভাবেই একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। দুটি ক্ষেত্রেই মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্য থেকে মুক্তি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পেলেও বৈষম্য থেকে মুক্তি না পাওয়ার কারণেই সাধারণ মানুষকে ১৯৯০ বা ২০২৪ সালের মতো বারবার রাজপথে আন্দোলন করতে হয়েছে, আত্মাহুতি দিতে হয়েছে; কিন্তু ’৭১ ও ’২৪–কে মুখোমুখি বা সাংঘর্ষিক অবস্থানে নেওয়ার কথা বলে একটি অপশক্তি সচেতনভাবে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই অপচেষ্টা প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে দেরি না করে ম্যুরালটি সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন উদীচীর নেতারা।
তারা বলেন, ১৪০ ফুট দীর্ঘ ম্যুরালটিতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকার, ’৭১-এর গণহত্যা, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণসহ জাতির গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা চিত্রিত ছিল। যা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলছিল। এই ম্যুরাল দেখে সাধারণ মানুষ তথা তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারত। বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের আগে দুই দফা ম্যুরালটি ঢেকে রাখা হয়। তখন জেলা প্রশাসক দাবি করেছিলেন, চব্বিশের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে এটি ঢেকে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন জেলা প্রশাসক। তখন জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেছিলেন, ‘অনেকের আপত্তির কারণে ও জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।’
এ নিয়ে গত ২৭ মার্চ প্রতিবাদ ও তীব্র ঘৃণা জানায় সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)।
২৯ মার্চ জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের সংগঠক রাসেল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি বলেন, দেশে অনেক কিছুই ঘটছে। আমাকে সংবাদ সম্মেলন করতে দেওয়া হয়নি। আমাদের বার্তা একটাই, আমরা ’৫২, ’৭১-কে ২৪-এর মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাই না।’
সবশেষ ৩০ মার্চ সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ম্যুরালটি ভাঙার কাজ করেন শ্রমিকরা।