ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে সিলেটের বিবেকবান সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানালেনও উগ্রবাদী তৌহিদি জনতা কেএফসি রেস্টুরেন্ট, বাটা কোম্পানির দুটি শোরুম, ইউনিমার্ট, ডমিনোজ পিজ্জার রেস্টুরেন্টেও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এরমধ্যে বাটায় ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট করেছে ফিলিস্তিনপ্রেমিরা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অনেক দামি জুতা লুটে নিয়ে গেছে তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে ধিক্কার জানান অনেকেই।
এদিকে, এমন সহিংস ঘটনায় বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সারাবিশ্বে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখালেও সিলেট, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এমন হামলা ও লুটপাট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এমন সময় এসব বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে, যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সম্মেলন হচ্ছে দেশে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, বৈছা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, যারা জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী সহিংসতায় সক্রিয় ছিলেন, তাদের অনেকেই হামলা ও লুটপাটে ইন্ধন যুগিয়েছেন। সাথে ছিলেন বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররাও। জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বর্তমান ইউনূস-সরকারের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীদের দেখা গেছে ভাঙচুর ও লুটপাট করতে।
প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ভাঙচুর ও লুটপাট হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি নগরবাসীর কাছে। বরং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ঘটনা চাক্ষুস করছেন।
এমন সহিসংতার ঘটনার পর দুটি বহুজাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরাও আতঙ্কে আছেন।
জানা গেছে, তৌহিদি জনতার ব্যানারে সারাদেশের মতো সিলেটেও ইসরায়েলবিরোধী কর্মসূচি শুরু হয় সোমবার সকাল থেকেই। নগরের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে বিবেকবান সুধীজন অংশ নিলেও বেশিরভাগই ছিল সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী লোকজন। তৌহিদি জনতা নামধারী এই উগ্রবাদীরা ইতিপূর্বে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে কেন্দ্র করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ভাঙচুর করেছিল। তারা নানা ছুতোয় মুক্তিযুদ্ধ ও এ সম্পর্কিত স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুর করেন।
এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে বিএনপি, ছাত্রদল, গুপ্ত সংগঠন ছাত্রশিবির, জমিয়ত, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিসসহ বর্তমানে ইউনূস-সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনও জড়িত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল।
আজ ৭ই এপ্রিল, সোমবার বিকেল ৩টায় সিলেট মহানগরের মিরবক্সটুলা এলাকায় অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্ট এবং ৪টার দিকে দরগাগেইট ও ৫টার দিকে জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত বাটা শোরুমে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
কেএফসি রেস্টুরেন্টটি বিএনপি নেতা ফয়সাল চৌধুরীর মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ভবনে অবস্থিত। বিক্ষোভকারী তৌহিদি উগ্রবাদী জনতা কেএফসি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে এবং কোমল পানীয় বের করে নষ্ট করে ফেলে। কেউ কেউ লুটপাটও করে। এরপরই কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়।
একই সময়ে ইউনিমার্ট এবং ডমিনোজ পিজ্জাতেও হামলা ও ভাঙচুর করে। তৌহিদি জনতা আম্বরখানায় বাটা ও জিন্দাবাজারে বাটার শোরুমে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তারা বাটার দুটি শোরুমে প্রবেশ করে প্রচুর দামি দামি জুতাও নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে উগ্রবাদী গোষ্ঠী ঘোষণা দেয়, “গণহত্যাকারী ইসরায়েলি কোন প্রতিষ্ঠানের ঠাঁই হবে না এ দেশে। বাংলাদেশের মাটিতে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান কেএফসি ও বাটার শোরুমে থাকবে, এটি মেনে নেওয়া যায় না। আমরা তাদের সব কিছু গুঁড়িয়ে দেব।”
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীও এসে যোগ দেয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।