বৈষম্যবিরোধী ছাত্র (বৈছা) আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার টঙ্গী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান ইউসুফকে রাস্তায় হত্যার চেষ্টা করেছেন অভিনেত্রী শমী কায়সার, এমন একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আদালত।
৯ই এপ্রিল, বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিএম ফারহান ইশতিয়াক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এএসআই) সাদিকুজ্জামান। পরে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।এদিন শমীকে সকাল ৯টায় সিএমএম আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। সকাল সোয়া ১০টায় তাকে আদালতে তোলা হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো শমী কায়সারকে ভোলার এমপি জ্যাকবের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা যায়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৈছা চলাকালে গত ৪ঠা আগস্ট টঙ্গী সরকারি কলেজের অনার্স প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান ইউসুফ দুপুরে মিছিল নিয়ে উত্তরা পূর্ব থানার আজমপুরে পৌঁছালে শমী কায়সারসহ আসামিদের ছোড়া গুলি তার বাম কাঁধে লাগলে তাৎক্ষণিক মাটিতে পড়ে যান। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সুস্থ হন তিনি।
গত ২২শে আগস্ট ১১ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন জুবায়ের। এতে শমী কায়সারও একজন আসামি।
এর আগে, গত ৮ই ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন জানান শমী কায়সার। সেই আবেদনের শুনানির পর তাকে তিন মাসের জন্য জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে ১২ই ডিসেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত সেই জামিন আদেশ স্থগিত করেন।
তার আগে, গত ৫ই নভেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে শমীকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। পরদিন ৬ই নভেম্বর ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক বিএনপি কর্মীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে দেয় আদালত। সেই মামলায় শমী কায়সার ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, কণ্ঠশিল্পী মমতাজসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়।
এছাড়া, গত ১৪ই অক্টোবর মাগুরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন সময় কটূক্তির অভিযোগে শমী কায়সারের নামে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা হয়। ১৩ই অক্টোবর মাগুরা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন মোহাম্মদ রেজওয়ান কবির নামে এক বিএনপি কর্মী।
প্রসঙ্গত, অভিনয় থেকে বিরতি নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন ই-ক্যাবের সভাপতি ছিলেন শহিদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা শমী কায়সার। গত বছরের ১৪ই আগস্ট দেশের ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
শমী কায়সার আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া ২০২৪-র নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তবে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি।
শমী ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। শহিদ বুদ্ধিজীবী সন্তান শমী নব্বই দশকের নামকরা অভিনেত্রী ছিলেন। তার মা পান্না কায়সার একজন লেখিকা এবং সাবেক সংসদ সদস্য। সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দুজা চৌধুরীর স্ত্রী মায়া চৌধুরী হলেন পান্না কায়সারের বোন। শমী কায়সার এবং রাজনীতিবিদ মাহি বি. চৌধুরী খালাতো ভাই-বোন।