অনেক সময়ই পত্রিকার শিরোনাম দেখি “ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে”। এমন খবর দেখে আমরা অনেকেই রেগে যাই, সমাজ উচ্ছন্নে গেছে, ধর্ষককে ফাঁসি দেয়া হোক, এরকম কিছু লম্ফঝম্পের পর হালকা ইয়ে করে শুয়ে পড়ি। ধর্ষক-ধর্ষিতা সংসার করে। অনেক সময় ধর্ষিতাকে যৌনপল্লীতে বিক্রয়ও করে দেয়া হয়। আমরা আর ফলোআপে আগ্রহ বোধ করি না।
এরকম কাহিনীর পেছনের রাজনীতিটা খুব কঠিন কিছু না। যেমন ধরেন আপনি কোনো মেয়েকে পছন্দ করেন, মেয়ে হালকা রাজি বা পিছলা রাজি; কিন্তু মেয়ের বাপ মোটেই রাজি না। এরকম কেসে মেয়েকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়ের বাপ লোকলজ্জায় আপনার সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দিবে। দিয়ে ঝামেলা মুক্ত হবে। ট্রিকটা হলো যে মেয়ে তার বাপের “সম্পদ”, সে মেয়েকে তার বাপের “ঝামেলা” বানিয়ে ফেলুন। এই টেকনিক শুধু ছেলেরা প্রয়োগ করবে, তা নয়। ধরেন আপনি মেয়ে, কোনো ছেলেকে পছন্দ করেন। কিন্তু ছেলে আবার পিছলা। সে আপনার সঙ্গেও লাইন মারে, আবার আরো ২/৪টা মেয়েও লাইনে আছে। এমতাবস্থায় কোনো এক সন্ধ্যায় ছেলেকে আপনার বাড়িতে “কেউ নেই” লোভ দিয়ে ডাকুন, দরজা বন্ধ করুন; তবে আগে থেকেই পাড়ার ছেলেপেলেদেরকে নির্দেশনা দিয়ে রাখুন। দরজা বন্ধ করার পর আপনার ব্লাউজের হুক পুরোপুরি খোলার আগেই পাড়ার ছেলেরা হৈচৈ করে দরজা খোলাবে। হাতেনাতে কট করবে। কাজীও আগে থেকে প্রস্তুত থাকবে। ছেলে তার বাড়িতে কন্টাক্ট করার আগেই তড়িঘড়ি করে কবুল বলিয়ে ফেলুন। তারপর সুখেশান্তিতে ঘরসংসার করুন।
বাংলাদেশে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ইউনূস ঠিক এই ট্রিকটিই প্রয়োগ করছে। বাংলাদেশকে “সম্পদ” থেকে সে ইতোমধ্যেই “ঝামেলা” বানিয়ে ফেলেছে। বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন, কী বলতে চাইছি। তবে আমার মতো একটু টিউবলাইট পাঠকদের জন্য আরেকটু খোলাসা করি।
ইউনূস রাজনীতি করে বাংলাদেশে কিছু উল্টে-পাল্টে ফেলবে, এটি তার কাছের লোকজনও মনে করে না। তবে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা, সে ব্যবসায়ী মানুষ। সুতরাং, দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা তার জন্য সহজ হবে। এই ধারণার কারণ বছরের পর বছর ধরে ইউনূসের পক্ষে মিডিয়ার পেইড প্রচারণা। ইউনূসের ব্যবসায়ের ঠিঁকুজি ধরে টান দিলেই দেখা যাবে সেখানে সবই দুই নম্বরী কাজ-কারবার। বেশি উদাহরণে যাবো না। নিজের ও পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন ট্রাস্ট বানিয়ে কর ফাঁকি দেয়াই তার দুই নম্বরী বিজনেসের যথেষ্ট উদাহরণ। কিন্তু, অন্য দেশের সঙ্গে বিজনেস করতে গেলে তো দুই নম্বরী করে কাজ হবে না। ফেয়ার বিজনেস তখনই হয়, যখন দুই পক্ষেরই উইন-উইন সিচুয়েশন থাকে। জঙ্গীর হাতে হোস্টেজ বাংলাদেশে পৃথিবীর কোনো দেশই বিনিয়োগ করে টাকা হারানোর ঝুঁকিতে যাবে না। বরং, অবস্থার উন্নতি না হলে আস্তে আস্তে তারা বিজনেস গোঁটাতে থাকবে। সেটিই হচ্ছে।
কিন্তু, পুরোপুরি গুজবভিত্তিক মেটিকুলাস ইউনূসের অবৈধ সরকারকে তো সেই ট্রিক করেই ক্ষমতায় থাকতে হবে। গত ৮ মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইউনূসের পজিটিভ অবদান একটা বড় “শূন্য”। নোতুন কোনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি, নোতুন কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি, প্রোডাক্টিভ খাতে আমদানি বন্ধ। অবাধে চলছে লুটপাট। এ অবস্থায় সে এই ৮ মাস পরে এসে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য লোকজনকে ডেকে আনার লোকদেখানো উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, বিনিয়োগের জন্য তো বিনিয়োগ করার মতো লোকজন আসছে না। ফ্রি চা-চু খাওয়ার জন্য যে দুয়েকজন আসছে, তাদের সামনেই মবের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে ই’জরাইলবিরোধী কর্মসূচীর নামে দেশের দোকান-পাট অবাধে লুটপাট করা হলো। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়া সেনাবাহিনীকে কোথাও দেখা যায়নি, পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে, কোনো বাধা দেয়নি। সব লুটপাট নির্বিঘ্নে শেষ হওয়ার পর এখন লোকদেখানো কিছু গ্রেফতার চলছে।
এখানে নিনজা টেকনিকটা হলো, এমনিতেই বিদেশি বিনিয়োগ আসতো না। আসবে কোথা থেকে? আপনি ঘোষণা দিয়ে শ’য়ে শ’য়ে কলকারখানা আগুনে পুঁড়াবেন। দেশের মিডিয়া কন্ট্রোল করলেও বিদেশিরা কি অন্ধ যে, তারা সে খোঁজখবর রাখে না! সুতরাং, নো চান্স। কিন্তু আইওয়াশ দেয়ার জন্য কয়েকজনকে ডেকে আনা হয়েছে। গুতেরেসের ইফতার পার্টির মতো একবেলা ফ্রি লাঞ্চ। এখন ইউনূস বলতে পারবে, এই বাটা-কেএফসি ভাঙচুরের জন্যই বিদেশি বিনিয়োগ পেছাচ্ছে। একে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র বলেও চালিয়ে দেয়া যাবে। আবার লুটপাটের সময় পুলিশ যেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেও কাউকে গ্রেফতার করেনি, এখন সেখানে বেছে বেছে আওয়ামী লীগেরও কয়েকজনকে ধরে মিডিয়ায় ছড়ানো যাবে তারাই আসলে ইউনূসের ভালো চায় না, বিদেশি বিনিয়োগ ঠেকাতে এসব আওয়ামী লীগেরই কারসাজি!
বাস্তবে এমনকি আইএমএফও ঋণ দিচ্ছে না। শেখ হাসিনার সময়ে যারা ডেকে ডেকে ঋণ দিতো, তারাই এখন এই ঝুঁকির জন্য নাকচ করে দিচ্ছে। আইএমএফের শর্ত পূরনের জন্য ইউনূস জনগণের ওপর দ্বিগুণ-তিনগুণ ট্যাক্স চাপিয়েছে কয়েক মাস হলো; কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি।
ঋণই যেখানে পাওয়া যায় না, সেখানে আবার বিদেশি বিনিয়োগ!
কথা হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতি নষ্ট করে ইউনূসের লাভ কী? হ্যাঁ, এটা একটু বুঝা কঠিন, আবার খুব কঠিনও না। ইউনূস বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসেছে অবাধে লুটপাট করতে। তার সে কাজ ইতোমধ্যেই ৮০% অ্যাকমপ্লিশড। কিন্তু, সে আবার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এটা তার চারিত্রিক দুর্বলতা। একসাথে ৫০টা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হয়ে বসে থাকে। গ্রামীণের পদ ছাড়ার বয়স ১০ বছর পার হয়ে গেলেও সেই নিয়া কতো কিচ্ছা-কাহিনী করলো। সুতরাং, বাংলাদেশের ফ্রি ফ্রি ক্ষমতা সে এমনিতে ছাড়বে কেন! তবে আরেকটি কারণ আছে, সেটি করুণ। বাংলাদেশের গদিতে অবৈধভাবে ইউনূসের বসা একটি ওয়ানওয়ে পদক্ষেপ। এখান থেকে ফেরার তার কোনো উপায় নাই। নির্বাচিত সরকার এসেই সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে তাকে ফাঁসি দিয়ে দিবে। লুটপাট, ভাঙচুর, জেনোসাইডের বিচার পর্যন্তও যেতে হবে না। ট্রাম্পের আমেরিকায় পালাতে পারবে না। ইউরোপে যদি পালিয়ে যেতে পারে, তাহলে হয়তো একটা সুযোগ আছে। কিন্তু, ইউরোপও তার জন্য নিরাপদ নয়। সুতরাং, নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যই তাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। কোনো বিকল্প নেই।
ক্ষমতায় থাকতে হলে বাংলাদেশকে “সম্পদ” থেকে “ঝামেলা”য় রূপান্তরিত করতে হবে, যাতে সেই ঝামেলা কেউ গ্রহণ করতে রাজি না হয়। আজ যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ব্যাক করে, তারা একটি বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পাবে। ইউনূসের ভাঙচুর, লুটপাটের এই বাংলাদেশকে কোনো গণতান্ত্রিক শাসকই আগামী ২০ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ২০২৪-এর ৪ঠা আগস্টের অবস্থানেও নিতে পারবে না। অন্যদিকে এই বাংলাদেশকে শাসন করার শখ বিএনপিরও নেই। তারেক জিয়া দেশে ফিরছেন না, মির্জা ফখরুল সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর করার ফাঁকে ফাঁকে দুয়েকটা বিবৃতি দিয়েই কাজ শেষ করছেন। বিএনপির রুট লেভেলেও নির্বাচন নিয়ে কোনো তাড়াহুড়া নেই, যে যেভাবে পারছে লুটপাট-দখলে শামিল হচ্ছে। শেখ হাসিনা যদি কোনো যাদুবলেও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবার বসে যান, দেশের দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষ তাকেও আর পছন্দ করবে না। “আগেই ভালো ছিলাম” পার্টি যখন দেখবে আগের অবস্থানে আর যাওয়া সম্ভব নয়, তখন আরো বড়োসড়ো অরাজকতা হবে।
এসব ধ্বংসে, এসব অরাজকতায় ইউনূসের কোনো সমস্যা নেই। সে রাজনৈতিক দলের নেতা না, তাকে কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। ভবিষ্যতেও মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে না। তার একটাই উদ্দেশ্য নিজের আখের গোছানো। বিধ্বস্ত বাংলাদেশেই সেটি বেশি সম্ভব। সুজলা সুফলা বাংলাদেশকে অনেকেই শাসন করতে চাইবে, বিধ্বস্ত বাংলাদেশের “ঝামেলা” কে আর সেধে কাঁধে নিবে!
#ATeam 20250418