।।লন্ডন।।

লন্ডনে আনন্দধারা
লন্ডনে গতকাল চৈত্রসংক্রান্তি দিনে লন্ডনে আনন্দধারা সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বর্ষবরণ ১৪৩২’ উদযাপন করে। পূর্ব লন্ডনের রিচমিক্স হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংগঠনের কর্ণধার ডা. ইমতিয়াজের নেতৃত্বে বাঙালির আবহমান ঐতিহ্যিক গানে মুখরিত হয়ে ওঠে, আনন্দউচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন উপস্থিত সুধী শ্রোতা দর্শক। ১৪ এপ্রিল পয়লাবৈশাখে পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ১৪৩২। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ইউকে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অংশ নেবেন উদীচী ও সত্যেন সেন পারফর্মিংয়ের ক্ষুদে শিল্পীরা।লন্ডনে আরো কয়েকটি সংগঠন বৈশাখী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন স্থানে। এতে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিয়ে যেমন শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মীরা মুখিয়ে আছেন, একইভাবে শ্রোতা দর্শকরাও আগ্রহ নিয়ে রয়েছেন।রঙিন সাজে সাজবেন সকলে। দেশের আমেজ উপভোগ করবেন প্রবাসে।
।।ঢাকা।।
উৎসবে রঙিন পহেলা বৈশাখ। বাংলা ১৪৩২ সালের প্রথম দিনে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ঊৎসবের আমেজ। ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে এক ভিন্ন আবহে এবার বর্ষবরণ চলছে। প্রথম প্রহরে সকাল ৬টায় রাজধানীর রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে সূচনা হয় নতুন বছরের। এই ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের এবারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল— ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’।
ভোরের প্রথম সূর্যকিরণে শুরু হওয়া এই আয়োজনে পরিবেশিত হয় ২৪টি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা—এর মধ্যে ছিল ৯টি সম্মেলক গান, ১২টি একক সংগীত এবং ৩টি আবৃত্তি। শিল্পীরা মেরুন পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা, এবং নারীরা মেরুন পাড়ের অফ-হোয়াইট শাড়িতে সজ্জিত ছিলেন। এই রঙের সাথেই মিল রেখে সাজানো হয়েছিল মঞ্চ। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ছায়ানটের ইউটিউব ও ফেসবুক পেজ ছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে।
রাজধানীতে দিনভর বর্ষবরণ আয়োজন
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন শিল্পী ও দর্শনার্থীরা। ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ড. সারওয়ার আলী বলেন, ‘গাজার শিশু হত্যা ও মানবতার বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের প্রতিবাদ জানাই। তাদের স্মরণে আমরা এক মিনিট নীরবতা পালন করছি।’ এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে।
এদিকে বর্ষবরণের আরেকটি বড় আয়োজন ছিল চারুকলা অনুষদের আনন্দ শোভাযাত্রা, যা সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর প্রদক্ষিণ করে আবার চারুকলায় ফিরে আসে।
শোভাযাত্রায় অংশ নেন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য এবং নানা বয়সী মানুষ। মুখোশ, বিশালাকৃতির বাঘ, পাখি, মাছ, পাপেট এবং বিভিন্ন মোটিফ নিয়ে শোভাযাত্রাটি ছিল একেবারে চোখধাঁধানো। এবারের আয়োজনে বিশেষভাবে উঠে এসেছে প্রতিবাদের সুর—‘ফ্যাসিবাদের অবসান’ থিম, ‘পানি লাগবে পানি’ মোটিফ এবং শেখ হাসিনার মুখাবয়ব ফুটিয়ে তোলা শিল্পকর্ম সবই জানিয়ে দিয়েছে, এ বর্ষবরণ শুধুই উৎসব নয়, বরং এক প্রতীকি প্রতিরোধও।
শোভাযাত্রা ঘিরে ছিল না অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয়ের কঠোরতা। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রথম সারিতে না থেকে উৎসবমুখর মানুষের পাশে পাশে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, যাতে উৎসবের স্বাভাবিক ছন্দে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।
এবারের বৈশাখে রাজনৈতিক দৃশ্যপটও ছিল ভিন্ন। দীর্ঘদিনের নিস্পন্দ পরিবেশের অবসান ঘটিয়ে এবারের নববর্ষ যেন সত্যিকারের মুক্তির বার্তা বয়ে এনেছে। আলপনা, গান, রঙ, আর মানুষের ঢল—সব মিলে নববর্ষ হয়ে উঠেছে একটি নতুন সূর্যের আহ্বান।
রমনা, টিএসসি, চারুকলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে মুখর ছিল ঢাকাবাসী। উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে শহরের অলিগলিতেও। বৈশাখী গানে মুখরিত বাংলার জনপদে, আজ ‘এসো হে বৈশাখ’ শুধু একটি সুর নয়—এ যেন নতুন দিনের, নতুন সমাজচিন্তার, নতুন আশার এক সংগ্রামী উচ্চারণ।