নতুন সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত এক প্রভাত, আর সেই আলোয় মুখরিত রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর। ভোরের প্রথম আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে স্বাগত জানানোর সুরেলা আয়োজন—চ্যানেল আই ও সুরের ধারার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
প্রকৃতির ছায়ায়, খোলা আকাশের নিচে শুরু হয় বর্ষবরণের সঙ্গীতযাত্রা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের তিনজন সরোদ বাদক উদ্বোধনী পরিবেশনায় তুলে ধরেন বাংলা নববর্ষের আত্মিক আমন্ত্রণ।
এরপর একে একে মঞ্চে ওঠে দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত, লোকসংগীত আর পঞ্চকবির সুর—প্রতিটি পরিবেশনায় ছিল সুরে সুরে নতুন বছরের ছোঁয়া। শিশু শিল্পীদের কণ্ঠে ‘আলো আমার আলো ওগো’ পরিবেশনা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে, যেন আলোয় ভরে ওঠে চারদিক।
সমবেত কণ্ঠে ‘প্রভাত বীণা তব বাজে’ পরিবেশন করে সুরের ধারা, আর এর ঠিক পরেই আসে পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করা ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর গান, যা অনুষ্ঠানটিকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
পর্যায়ক্রমে মঞ্চে আসেন শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী (‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’) এবং প্রিয়াংকা গোপ (‘আমি অকৃতি অধম বলেও…’)—তাঁদের গানে ছিল দর্শকদের আবেগে ভাসিয়ে নেওয়ার শক্তি।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত শিল্পীদের একক ও দলীয় সংগীতে গলা মেলালেন সবাই। স্বাতী সরকার শোনালেন হৃদয়ছোঁয়া গান ‘ওগো দুঃখ জাগানিয়া’, আর লোকসঙ্গীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় পরিবেশন করলেন সময়ের উপমা মেলে ধরা গান—‘পাল্টে গেল পঞ্জিকারও পাতা…’। শারমিন আক্তারের কণ্ঠে ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’ গাইতে গাইতে শ্রোতারা যেন আরও গভীরভাবে মিশে গেলেন এই উৎসবের আবহে।
অন্যদিকে, রবীন্দ্রসরোবরের এক পাশে চলতে থাকল আরেক রঙিন আয়োজন—লাইভ পেইন্টিং। শিল্পী অশোক কর্মকার, জাহিদ মুস্তফা, এলিস গোমেজ, রঞ্জন বিশ্বাসসহ অনেকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন নববর্ষের চিত্রকল্প। সকাল ছয়টার সাদা ক্যানভাস ধীরে ধীরে রঙে রঙিন হয়ে উঠে ফুটে ওঠে এক শিশু, বাবার কাঁধে চড়ে বাঘের মুখোশ পরে বর্ষবরণের উৎসবে অংশ নিচ্ছে—একটি নিখুঁত প্রতিচ্ছবি নতুনকে বরণের।
চিত্রশিল্পীরা বললেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতিকে যুক্ত করাই তাদের উদ্দেশ্য। সুর, রঙ, আলো ও ভালবাসায় পূর্ণ হয়ে উঠল নববর্ষের প্রথম সকাল।
এভাবেই চ্যানেল আই-সুরের ধারার আয়োজনে আবারও নতুন বছরকে বরণ করে নিলো সুর, ছবি আর মানুষের হৃদয়।