একজন শিক্ষক ফেসবুক লাইভে সত্য কথা বলেছে—আর তার জবাবে সরকার কী করেছে? মামলা! হ্যাঁ, এই হল আজকের বাংলাদেশ। এখানে শিক্ষক মানেই চুপচাপ চাকরি করো, বেতন নিয়ে চুপ করে থাকো, অন্যায় দেখেও কিছু বলবে না—নইলে রাষ্ট্র তোমার গলা চেপে ধরবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রকাশ্যে বললেন—“বেতনে না পোষালে অন্য পেশায় যান।” এই রকম বেকুব, ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য একজন রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে, অথচ কেউ টু শব্দটি করছে না! মাহবুবর রহমান করেছিল—এই সাহসটাই ছিল তার অপরাধ।
কিন্তু আপনি কি জানেন, এই ‘অপরাধের’ সাজা কী? দমনমূলক মামলা, শোকজ, চাকরি হারানোর হুমকি! রাষ্ট্র এখন এমন এক ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে, যেখানে একজন শিক্ষক যদি নিজের সম্মান রক্ষার জন্য একটা শব্দও উচ্চারণ করে, তাকে থেঁতলে দিতে উঠে পড়ে লাগে প্রশাসন।
এই মামলাটা কেবল মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে না—এটা হাজার হাজার শিক্ষকের মুখে তালা লাগানোর চেষ্টা। কারণ রাষ্ট্র চায় না কেউ প্রশ্ন করুক। রাষ্ট্র চায় না কেউ মুখ খুলুক। রাষ্ট্র চায় সবাই হোক ‘হ্যাঁ-মানুষ’, সবাই হোক থুতু গিলেও হাসিমুখে থাকা চাকর।
উপদেষ্টা নামের এই আমলাটি যে মন্তব্য করেছেন, সেটি শুধুই অযোগ্যতা নয়—এটা শিক্ষক সমাজের প্রতি অবমাননার সর্বোচ্চ সীমা। শিক্ষকদের কাজ এখন শুধু ক্লাস না, এখন তাদের কাজ হলো সরকারের দালালি করা? যারা এই ব্যবস্থার ভেতরে থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটা শব্দ বলবে, তাদের জবাবদিহির নামে কচুকাটা করা হবে?
এটাই এখন “বাংলাদেশ ২.০”—যেখানে সাহস দেখানো মানেই শাস্তি। রাষ্ট্র তার সমস্ত শক্তি দিয়ে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে হামলে পড়েছে, যেন সে দেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত! অথচ তার অপরাধ একটাই—সত্য বলেছে। সরকারের মুখে আঙ্গুল তুলেছে। আর ঠিক সেই কারণেই রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
এটা শুধু শিক্ষক না, এটা আমাদের সবাইকে একটা বার্তা দেওয়া—“তোমরা মানুষ না, তোমরা শুধু চাকা ঘোরানো যন্ত্র। চাকা বন্ধ করলেই ভেঙে গুড়িয়ে দেবো।” এই হলো রাষ্ট্রের নতুন ডায়লগ।
শুধু একটাই কথা—তারা ভুলে গেছে, আগুনে আগুন দিলে তা আরও বেড়ে ওঠে।