বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন এখন একটি চিহ্নিত, ধারাবাহিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশ্রয়প্রাপ্ত প্যাটার্নে রূপ নিয়েছে। কথিত “ধর্ম অবমাননা” আজ কেবল এক ছুতা—যার আড়ালে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষকে শিক্ষা, পেশা, এমনকি জীবনের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। ধর্মীয় অনুভূতির নামে বিচার বহির্ভূত শাস্তি, গণপিটুনি, চাকরি থেকে তাড়ানো, প্রশাসনের চুপ থাকা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ নিঃশ্বাসরুদ্ধ বাস্তবতার মুখোমুখি।
১৩ এপ্রিল ২০২৫: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী প্রণয় কুন্ডু ও বিকর্ণ দাস দিব্য ফেসবুকে একটি পোস্ট ও মন্তব্য শেয়ার করার অভিযোগে “ধর্ম অবমাননার” নামে ১৬ এপ্রিল সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়। এরপর সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপের স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে, তনয় সরকার, দিপু বিশ্বাসসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব ‘অসম্পূর্ণ’ বা ‘অসম্পূর্ণরূপে সন্তোষজনক’—এই অজুহাতে আরও বহিষ্কার। তদন্ত শেষ না হতেই অভিযুক্তদের ফরম ফিলাপের অধিকার অনিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিল, সংখ্যালঘুদের জন্য এই রাষ্ট্রে শিক্ষা অর্জনের অধিকারও শর্তসাপেক্ষ।
২২ এপ্রিল ২০২৫: ঢাকার তেজগাঁওয়ের কোহিনূর ক্যামিকেল কারখানার প্রোডাকশন অফিসার বিধান বাবু, কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শ্রমিক উগ্রবাদীদের হাতে অপমানিত হন। ফাঁসির দাবিতে শোরগোল ওঠে। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়—কোনো তদন্ত বা আইনি মূল্যায়ন ছাড়াই। কারখানার ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান, উভয়ই ছিল মৌনদর্শক।
একইদিন, রাজশাহীর বুলনপুর ঘোষপাড়ার স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে আলাপকালে সাগর কুমার সাহা নামের এক যুবকের উপর সংঘবদ্ধভাবে হামলা হয়। তার অপরাধ—কথিতভাবে মহানবী সম্পর্কে ‘অবমাননাকর’ কথা বলা। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাকে পুলিশের সামনেই বেধড়ক মারধর, গলায় জুতার মালা পরানো হয়। কেউ থামায়নি। কেউ প্রশ্ন তোলেনি।
এইসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। ধর্মীয় মৌলবাদীরা এখন আর আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী নয়, বরং রাষ্ট্র তাদের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে—আর সংখ্যালঘুরা পরিণত হয়েছে অনিরাপদ শ্রেণিতে। যেখানে তাদের কথাবার্তা, লেখালেখি, এমনকি ব্যক্তিগত আলাপচারিতাও এখন ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হচ্ছে—শুধুমাত্র তাদের পরিচয়ের কারণে।
আরেকটি ভয়ঙ্কর সত্য হলো—এই দেশেই, এই সময়েই, ইসলাম ধর্ম নিয়ে গালমন্দ, বিকৃত কটূক্তি, সাম্প্রদায়িক উস্কানি যখন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কেউ ছড়ায়—তখন প্রশাসনের মুখে কুলুপ। মামলা হয় না, গ্রেপ্তার তো দূরের কথা। এই দ্বিমুখী নীতি শুধু অসাংবিধানিক নয়, এটি রাষ্ট্রের চরিত্রকে মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার সরাসরি প্রক্রিয়া।
এই চিত্র নতুন নয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক #নির্যাতন, #দখল, #হামলা এবং রাষ্ট্রীয় নীরবতা—সব মিলিয়ে স্পষ্ট যে, সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এবং এই পরিকল্পিত নিপীড়নের মূল কুশীলব হলো রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের ক্ষমতালোভী নেতৃত্ব, যারা একদিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ মুখোশ পরে, আরেকদিকে মৌলবাদীদের হাতে #সংখ্যালঘুদের তুলে দেয় চুপচাপ।
এই নষ্ট শাসনের শিকড়ে যে নামটি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা এবং ঘৃণারই যোগ্য, সে হলো ইউনুস। তার শাসনে সংখ্যালঘুদের ঘর পুড়ে, ভবিষ্যৎ ভাঙে, জীবন বিপন্ন হয়—আর সে নির্বিকার। সে জানে, যত বেশি ধর্মের নামে ভয় ছড়ানো যাবে, ততদিন তার #অবৈধ শাসন টিকে থাকবে।