চট্টগ্রামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইস্পাত, গার্মেন্ট, টেক্সটাইল ও সারসহ একাধিক শিল্প খাত মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত সাত মাসে অন্তত ৫০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং নতুন বিনিয়োগের অপেক্ষায় থাকা শতাধিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।
চট্টগ্রামে দেশের ৬২ শতাংশ ইস্পাত কারখানা অবস্থিত। তবে উৎপাদন ব্যয় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। গ্যাসনির্ভর এসব কারখানায় গ্যাস সরবরাহ ও চাপে ঘাটতি এবং দফায় দফায় দাম বৃদ্ধিই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৩ সালে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ। সর্বশেষ গত ১৩ই এপ্রিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নতুন শিল্প ও ক্যাপ্টিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম আরও ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে। এখন নতুন সংযোগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গ্যাসের ইউনিটপ্রতি দাম ৪০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৩০ টাকা।
ইস্পাত শিল্পের নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাতের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আলমাস শিমুল বলেন, “উৎপাদন খরচ বাড়লেও গুণগত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদামতো গ্যাস না থাকায় অনেক কারখানা উৎপাদন বজায় রাখতে পারছে না।”
একই সুরে বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “মূল্য নির্ধারণে সুশাসনের অভাব রয়েছে। ভোক্তার কাঁধে উৎপাদন ও সিস্টেম লসের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
এদিকে, গ্যাস সংকটে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) গত ১১ই এপ্রিল থেকে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। প্রতিদিন গড়ে ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হলেও তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কারখানার প্রধান উত্তম চৌধুরী।
চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাস চাহিদা ৩১২ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ সীমাবদ্ধ ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুটে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা এবং সিএনজি স্টেশনে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) তথ্য অনুযায়ী, গৃহস্থালি, ইস্পাত, কাচ, সিমেন্ট ও গার্মেন্টস খাতে সরবরাহের জন্য পরিমাণ অপর্যাপ্ত।
পোশাক খাতে গ্যাস সংকট সরাসরি উৎপাদনের গুণগত মানে প্রভাব ফেলছে বলে জানান বিজিএমইএর কর্মকর্তারা। গত সাত মাসে বন্ধ হওয়া ৫০টি পোশাক কারখানার মধ্যে ১৮টি বিজিএমইএ, ২টি বিকেএমইএ, ১টি বিটিএমএ এবং ৯টি বেপজা আওতাধীন।
চট্টগ্রামের সাদ মুসা শিল্প পার্ক ও মিরসরাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে নতুন শতাধিক কারখানার কার্যক্রম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মিরসরাইয়ে চীনের কুনমিং আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি, পিএইচপি স্টিল, বসুন্ধরা, এসিআই, অনন্ত অ্যাপারেলসসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে এসব প্রকল্পও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব-এর জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, “সিস্টেম লস না কমিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ না করলে এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে।”