বাংলাদেশ এখন এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে কেউ আর নিরাপদ নয়—নিজের ঘরেও না, আর বিদেশ থেকে কেউ এলে তো কথাই নেই। শ্রীলঙ্কা থেকে তিনজন নাগরিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে এসে অপহরণের শিকার হয়েছেন। তাদের জিম্মি করে পাঁচ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। এটা কেবল একটি অপরাধ নয়—এটা একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা, সরকারের দায়িত্ববোধ এবং বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর সরাসরি থুতু মারা। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, অথচ দেশের স্বঘোষিত উন্নয়নপন্থী সরকার নীরব। এই নীরবতা আসলে অপরাধীদের প্রতি নীরব সম্মতি। এটাই এখন বাংলাদেশ—যেখানে ক্ষমতাসীন সরকার ব্যস্ত নির্বাচনের নামে প্রহসন সাজাতে, বিরোধী কণ্ঠ দমন করতে, আর পুলিশ-প্রশাসন ব্যস্ত লাঠি চালাতে। বিদেশি নাগরিক জিম্মি হয়ে যাচ্ছে, অথচ তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই, পরিকল্পনা নেই, কার্যকর কোন প্রটোকল নেই। এটা ব্যর্থতা না, এটা চরম উদাসীনতা—আর সেই উদাসীনতা জন্ম নেয় যখন একটি সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে জোর করে ক্ষমতায় থাকে।
অপহৃতদের দেশে আনার নাম করে যেভাবে ফাঁদ পাতা হয়েছে, সেটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে—অপরাধীচক্র এই দেশে কতটা আত্মবিশ্বাসী। তারা জানে, এই সরকারের সময় কেউ তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখন একটিভ হয়? যখন কোনো সমাবেশ হয়, কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন তোলে, কিংবা কোনো শিক্ষক সরকারের বিরুদ্ধে একটা লাইন লেখে। তখনই শুরু হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, রিমান্ড, গুম—সব। কিন্তু একদল বিদেশিকে অপহরণ করে কোটি কোটি টাকা দাবি করলে, তখন প্রশাসনের কোথাও তৎপরতা থাকে না। কারণ ওখানে পিআর নেই, ওখানে ফেসবুক পোস্টে লাভ নেই, ওটা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে।
সারা পৃথিবী যখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নিজেদের দেশকে তুলে ধরতে চায়, তখন বাংলাদেশ তুলে ধরছে এক ভয়াবহ ছবি—যেখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে মানুষকে ধরে আটকে রাখা হয়, টাকা দাবি করা হয়, পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না—এটা ওই নষ্ট, অকার্যকর এবং অবৈধ সরকারের ছায়ায় জন্ম নেওয়া বাস্তবতা। ইউনুস সরকার গর্ব করে বলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ছি—কিন্তু এই স্মার্ট বাংলাদেশ আসলে কাদের জন্য? যারা চুরি করে ব্যাংক ফাঁকা করে, যারা নির্বাচন চুরি করে ক্ষমতায় আসে, যারা পুলিশের পোশাকে মানুষ পেটায়—তাদের জন্য?
এই অপহরণের ঘটনাই প্রমাণ করে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জায়গা নয়, বরং আতঙ্কের জায়গা। দেশের ভেতরে যেমন কেউ কথা বললেই গায়েব হয়ে যায়, তেমনি বাইরের কেউ বিনিয়োগ করতে এলে—তাকেও টাকা না দিলে ছাড়ে না। এটা একটা দেউলিয়া রাষ্ট্রের লক্ষণ—যেখানে ন্যায়বিচার নেই, নিরাপত্তা নেই, কেবল প্রোপাগান্ডা আর ভয় দেখানো আছে। একসময় বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে বলত—”এখানে অনেক সম্ভাবনা”—এখন তারা বলছে, “এখানে জীবননাশের আশঙ্কা”।
এই ঘটনার দায় সরাসরি সরকারের, যারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা জনগণের চেয়ে নিজেদের চেয়ারকে বেশি ভালোবাসে। আজ যদি এই সরকারের এক মন্ত্রীর আত্মীয় এমন অপহরণের শিকার হতো, তাহলে হয়তো পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হতো, হেলিকপ্টার নামতো, প্রেস ব্রিফিং হতো প্রতি ঘণ্টায়। কিন্তু যেহেতু এটা কোনো ক্ষমতাবান মানুষের সমস্যা না, তাই সেটাও “মীমাংসা” হয় আড়াই কোটি টাকায়।
এই দেশকে নরক বানিয়ে রাখা ইউনুস ও তার সরকার আজ নিজেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধ্বংসের সবচেয়ে বড় প্রতীক। যারা বিদেশিদের চোখে দেশের নিরাপত্তা, সম্মান আর আস্থা সব কিছু ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে—তাদের হাতে দেশ কি নিরাপদ? এই প্রশ্ন এখন কেবল অভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও উঠবে।
বাংলাদেশ এখন এক বন্দি রাষ্ট্র—যেখানে মানুষ শুধু শাসকের দয়ায় বাঁচে। এবং যেদিন দয়া উঠে যাবে, সেদিন জিম্মি হবে আরও তিনজন, আরও পঞ্চাশজন, আর সরকার তখনও বলবে—”দেশ উন্নয়নের রোল মডেল”।