মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেড় বছরে নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা। এর ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৩ লাখ ১৩ হাজার। বাংলাদেশের ইউনূস সরকার মিয়ানমার যুদ্ধে বাংলাদেশের জড়ানোর কথাও স্বীকার করেছে। রোহিঙ্গা চাপের সঙ্গে নতুন করে আরো সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) যৌথভাবে নতুন আসা এসব রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে। তবে এখনো তাদের পরিচয় শনাক্তে আইরিশ স্ক্যানিংয়ের অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ সরকার।
ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়কে চিঠি দিয়ে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট এক দায়িত্বশীল সূত্র।
চলতি বছরের প্রতিদিনই সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত সপ্তাহেই ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার এবং আরও ৫ হাজার ৯৩০ জন আলাদাভাবে বাংলাদেশে এসেছে। নতুন আসা রোহিঙ্গারা ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারের সদস্য।
বাংলাদেশের সীমান্তে নজরদারি থাকা সত্ত্বেও এসব মানুষ কক্সবাজারের ২০টি ক্যাম্পে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ নারী।
নতুন রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবস্থান করছে ক্যাম্প ২৭, ২৬, ২৪, ৯, ১২, ওয়ান-ই, ১৮, ৪, ১৩, ৭, ১৭, ১৫, ৮-ই, ওয়ান-ডব্লিউ, টু-ই, ২৫, ৫, ১০, ১৬, ৩, ১১, ১৯, ২১, টু-ডব্লিউ, এইট-ডব্লিউ, ১৪ ও ২০ নম্বর ক্যাম্পে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, পৃথক ঘর না হলে অন্তত দোতলা ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। সংস্থাটি ক্যাম্পে তাদের বিদ্যমান অবকাঠামোর তালিকাও সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। তবে সরকার এখনো লিখিতভাবে কোনো সাড়া দেয়নি। মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, বর্তমান বাস্তবতায় নতুনভাবে ঘর তৈরি করা কঠিন।
আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “বিরাট সংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য নতুনভাবে ঘর তৈরির জায়গা আমাদের নেই। এটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।”
রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত শুরুর পর থেকেই রোহিঙ্গাদের এই ঢল অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তের নাফ নদ ছাড়াও পাহাড়ি পথ ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
একাধিক সূত্র জানায়, নতুন রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারী ৩ হাজার ৮৯০ জন ও পুরুষ ৩ হাজার ৯৩০ জন। ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারী ২৭ হাজার ১৭৩ জন ও পুরুষ ১৯ হাজার ৮২৫ জন। শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য—এক বছরের নিচে নারী ১ হাজার ২৯০ জন, পুরুষ ১ হাজার ৩২০ জন।
বর্তমানে কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের চেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতিশ্রুত সহায়তা কমে আসায় সংকট আরও গভীর হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউএনএইচসিআর ঘর তৈরির বিষয়ে অনুমতি পেলে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে তহবিল চেয়ে আবেদন জানাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি প্রধান দাতা দেশ বাজেট কমিয়ে দেওয়ায় রোহিঙ্গা সহায়তা কার্যক্রমে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ দেশের জন্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও জনসংখ্যাগত দিক থেকে নতুন চাপ তৈরি করছে। বর্তমান বাস্তবতায় সংকট সমাধানের জন্য বহুপাক্ষিক সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।