।। মনজুরুল হক।।
যে সরকার প্রথম থেকেই ‘মিথ্যা’ আর ‘ধোকাবাজী’ দিয়ে জনগণকে প্রতারিত করছে তাদের বিবৃতির বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন যে বলেছেন-“রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক করিডোর তৈরি করতে চায় জাতিসংঘ। এ বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে নীতিগতভাবে সম্মত আছে অন্তর্বর্তী সরকার।“ এখানে তিনি ‘সম্মত’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। অথচ কক্সবাজার-টেকনাফ-শিলখালী অঞ্চলের জনগণ দেখছে; সেখানে ইতোমধ্যে ‘করিডোর প্রকল্পের কাজ’ শুরু হয়ে গেছে। তৌহিদ হোসেন যু ক্ত রা ষ্ট্রের নাম না বলে ‘জাতিসংঘ করিডোর করতে চায়’ বলেছেন। অর্থাৎ এখানেও অসত্য বয়ান।
📍
তিনি স্বীকার করছেন- “সেখানে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কাজেই আমাদের নিজেদের স্বার্থে কোনও না কোনও ধরনের যোগাযোগ—অর্থাৎ নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে আমরা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে পারি না। কিন্তু আমরা চাইলেও বিচ্ছিন্ন থাকতে পারবো না। দেশের স্বার্থেই আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকা যাবে না।“
📍
আবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি বলেছেনঃ “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জাতিসংঘ বা অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি সরকার!”
📍
এরা বেশ ভালো করেই জানেন যারা এটা করতে চাচ্ছে তারা অমন এক হালি উপদেষ্টা বা ব্যুরোক্র্যাটদের অনুমতির তোয়াক্কা করে না। তিনি এসব ‘বিগ স্টেট গেম’ এবং এর ব্যাকফায়ার বিষয়ে না-ই জানতে পারেন, তাই বলে জিওপলিটিক্যাল এরিনায় ঘোরাঘুরি করা লোকজন জানে না ভাবার কারণ নেই।
📍
এই অঞ্চলে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল জিওপলিটিক্যাল ব্লাডি গেম। সেই গেম-এ ফেঁসে গেছে বাংলাদেশ। চারটি সুপার পাওয়ারের ফ্যাটাল ওয়ারের ‘ওয়ারফিল্ড’ হতে চলেছে বাংলাদেশ ভূখণ্ড। বাংলাদেশকে যুগপৎ মিয়ানমার জুন্টা সেনা, AA, CNF এবং ARSA সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বিপজ্জনকভাবে ভারত-চীন-রাশিয়ার কোপানলে পড়তে যাচ্ছে।
📍
সকলেই জানে যু ক্ত রা ষ্ট্র মিয়ানমারে জুন্টা রেজিমের বিরুদ্ধে। রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্র আরাকান আর্মিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেয় না অথচ রাখাইন রাজ্যের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন! এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে। এখন তারা বাংলাদেশকে ‘বেজ ক্যাম্প’ বানিয়ে ‘মানবিক করিডোর’ নাম দিয়ে রাখাইনে মানবিক (!) সাহায্যের সঙ্গে পাঠানো হবে যুদ্ধাস্ত্র।
📍
কাগজে-কলমে বলা হচ্ছে “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরাসরি জুন্টা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। তারা করিডোর পাহারা দেবে, আরাকান আর্মির কাছে লজিস্টিক পৌঁছানোর ব্যাকআপ ফোর্স হিসাবে কাজ করবে।“ যুদ্ধের পরিভাষায় একে বলে ‘প্রক্সি ওয়ার’। বাংলাদেশ সে না বা হিনী ওই ‘প্রক্সি ওয়ারে’ জড়িয়ে যেতে চলেছে।
📍
আরাকান আর্মির বাংলাদেশ সীমানা লঙ্ঘন, চিন বিদ্রোহীদের মিজোরামের সঙ্গে মার্জ করা, চিন-কুকি-মিজো মিলে আলাদা স্টেট, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ ‘আরসা’ চিফকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে কোয়ালিশন করতে রাজি করানো, রোহিঙ্গা-আরাকানীদের দীর্ঘদিনের বৈরীতা ভুলে একসঙ্গে যুদ্ধে নামার অঙ্গিকার করানো, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ফোর্টিফাই রাইটস’ বাংলাদেশ সরকার, সে না বা হি নী কে আরাকান আর্মির জন্য করিডোর দেওয়ার আহ্বান জানানোর মত ডটগুলো এবার স্ট্রেইট লাইনে রূপ নিতে যাচ্ছে…
📍
আরাকান আর্মি, আমেরিকা ও বাংলাদেশ যে রাখাইন স্টেট-এর ৯০ ভাগ আরাকান আর্মি দখল করে ফেলেছে বলছে, তার পরে কী? সেটা বলছে না। কেন এখনও ‘রাখাইন ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেট’ ঘোষণা করতে পারছে না সেটা চেপে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? কারণ এরা পরবর্তী ঘটনাবলি বিষয়ে হয় জানে না, অথবা মিথ্যাচার করছে।
📍
চীন ঘোষণা করেছে-মায়ানমার সেনাবাহিনী এবং মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (MNDAA) মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। চীন-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর কোকাং অঞ্চলে সীমান্ত গেটগুলো চীনের দিক থেকে পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে।
📍
ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (UWSA) ২০ জানুয়ারী ঘোষণা করেছে- চীন সরকারের নির্দেশে ওয়া অঞ্চল থেকে কোকাং অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে এই গোষ্ঠী।
📍
বর্তমানে, চীন ও মায়ানমারের মধ্যে পাঁচটি সীমান্ত গেট—কিয়িন-সান-কিয়াওত, চিন শোয়ে হাও, ইয়ানলন কিয়াইং, মং কো এবং নামখাম—এমএনডিএএ, তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) সহ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
📍
এরই মধ্যে মিয়ানমার সরকার ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ‘সামরিক শাসনব্যবস্থা বেসরকারী নিরাপত্তা পরিষেবা আইন’ জারি করেছে, যা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোসহ মিয়ানমারে বেইজিংয়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য চীনা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারে অস্ত্র মজুদ, সৈন্য সমাবেশ এবং চীনবিরোধীদের গ্রেফতার করার অনুমতিও দিয়েছে।
📍
গত বছরের ২২ অক্টোবর নিরাপত্তা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের চার মাস পরে এই আইনটি প্রকাশিত হলো। এই আইনটি বিশেষভাবে জুন্টার মিত্র চীনকে একচ্ছত্র অধিকার দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
📍
প্রকল্প এলাকা এখন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় চীনের ইনভেস্টমেন্ট অরক্ষিত হচ্ছিল বলে চীন নিজের হাতে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মিয়ানমারে নিজস্ব নিরাপত্তা সংস্থা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
📍
আইনের মূল বিষয়গুলোঃ আইনটি চীনা সেনা, মার্সেনারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারজুড়ে মোতায়েন করার অনুমতি দিয়েছে, কারণ চীনা প্রকল্প সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
.
চীনা প্রকল্পগুলোতে কোনও অপরাধ সংঘটিত হয়, তাহলে চীনা নিরাপত্তা সংস্থাগুলো অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। এর অর্থ হল চীনা দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ, চীনা কারখানায় ভাঙচুর, অথবা চীনা প্রকল্পগুলোতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। চীন তাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে গড়ে তোলার জন্য মিয়ানমারকে প্রায় ৬৮৬ হাজার ডলার দিয়েছে।
📍
এবার সমীকরণ মেলানো যাকঃ চীনের ৯ বিলিয়ন ডলারের বিশাল কিয়াউকপিউ প্রজেক্ট কেবল একটা বন্দর নয়। এখানে চীন গড়ে তুলেছে আস্ত একটা টাউনশিপ। এখান থেকে অয়েল পাইপ লাইন মিয়ানমারের বুক চিরে চলে গেছে কুনমিং পর্যন্ত। ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে চীনা এক্সপোর্টে প্রায় ৬০ ভাগ এই কিয়াউকপিউ পোর্ট দিয়ে যায়। এই পুরো টাউনশিপ, সী-পোর্ট, নিরাপত্তা দল থাকার ব্যবস্থাসহ কিয়াউকপিউকে বলা যায় ‘লিটল চীন’।
📍
একইভাবে সিটওয়ে বন্দরে রয়েছে ভারতের ইনভেস্টমেন্ট, যেটা ‘কালাদান মাল্টিমোডাল করিডোর’ নামে খ্যাত। এই করিডোর দিয়ে ভারত ‘সেভেন সিস্টার্স’ থেকে থাইল্যান্ডের রনং বন্দর পর্যন্ত বাণিজ্য করার প্রজেক্ট করছে।
📍
সেইসঙ্গে রয়েছে রুশ-মিয়ানমার যৌথ Dawei Strategic Port Project. রাশিয়া যে শুধু এই প্রজেক্ট রক্ষার জন্য শক্তি প্রয়োগ করবে তেমন নয়। কাগজে-কলমে চীন মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য মিত্র হলেও জুন্টা সেনাবাহিনীর চিফ তথা মিয়ানমারের টাটমাডো জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের অস্ত্রভাণ্ডারের প্রায় পুরোটা রাশিয়ার দেওয়া। মনে রাখতে হবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে ইনভেড করলে সর্বপ্রথম যে দেশটি সমর্থন জানায় তার নাম মিয়ানমার! ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি সেনা পাঠিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার দুটি দেশ-উত্তর কোরিয়া আর মিয়ানমার।
📍
সুতরাং মিয়ানমারজুড়ে চীনা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থলগ্নি জলে পড়ে যাক কিংবা আমেরিকা AA, CNF এবং ARSA কে নিয়ে ত্রিশক্তি বানিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ‘পাহারাদার’ হিসাবে খাঁড়া করে দিয়ে রাখাইন দখল করে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট রাখাইন স্টেট’ ডিক্লেয়ার করবে এবং মিয়ানমারকে টুকরো টুকরো করে মিনারেলস হাতিয়ে নেবে…. ব্যাপারটা হ্যামবার্গারে কামড় দেওয়ার মত সহজ নয়। রাশিয়া তার স্ট্রাটিজিক্যাল অ্যলাই মিয়ানমারকে রক্ষার জন্য ফুল থ্রটলে মুভ করবে। তা যদি না হতো তাহলে দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রায় চল্লিশটি এথেনিক গ্রুপের সশস্ত্র প্রতিরোধে টাটমাডো আর তার চিফ জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের পতন ঘটে যেত এতদিনে। মিং অং হ্লাইং সম্পর্কে বিশ্বের অন্যতম ন্যরেটিভ- General Min Aung Hlaing is arguably ‘the most powerful man in the land’. Even foreign governments – including China and the US – appear unwilling to stand in his way!
📍
লেটেস্ট ডেভেলপমেন্টসঃ
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ রিপোর্টে বলেছে-“আরাকান আর্মি মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে দশ লক্ষেরও বেশি লোকের একটি প্রোটো-স্টেট গঠনের চেষ্টা করছে।“
জাতিসংঘের তথ্য মতে সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মি উভয়ই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, শিরশ্ছেদ, অপহরণ এবং জোরপূর্বক নিয়োগ।
📍
জেনারেল মিন অং হ্লাইং, ৫০তম রাখাইন রাজ্য দিবসের বার্তায় MNDAA এবং TNLA এবং AA-কে সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
📍
এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (MNDAA) ৩ ডিসেম্বর ঘোষণা করেছে যে তারা চীনের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা করবে এবং তাদের সৈন্যরা গুলি চালানো বন্ধ করবে।
📍
২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে মায়ানমারের কেন্দ্রীয় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি MNDAA, TNLA এবং AA কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোষণা করেছে।
📍
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ আরাকান আর্মি ঘোষণা করেছে যে তারা সামরিক সমাধানের পরিবর্তে রাজনৈতিক উপায়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি সমাধান করতে সর্বদা প্রস্তুত।
📍
মস্কোতে বিজয় দিবসের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সামরিক কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের জন্য রাশিয়ায় একটি প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে মিয়ানমার। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে ড্রোন কিনছে। মায়ো সেট অং জানান তারা গত মাসে রাশিয়া থেকে ১০০টি ড্রোন কিনেছে।
📍
এদিকে আসিয়ান সভাপতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ১৭ই এপ্রিল থাইল্যান্ডে মিন অং হ্লাইং-এর সাথে শান্তি আলোচনা করেন এবং ১৯-২০শে মার্চ নয়াদিল্লিতে মালয়েশিয়া এবং ভারতের যৌথ সভাপতিত্বে ১৪তম আসিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিশেষজ্ঞ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকও করেছেন।
📍
৬ সেপ্টেম্বর রয়টার্স জানায়-মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, আরাকান আর্মি বিষয়ে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) বলেছে; তাদের যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর সাথে ‘সমঝোতা’ করেছে। তারা একে অপরকে আক্রমণ করবে না, কারণ তারা উভয়ই পশ্চিম মিয়ানমারের প্রধান বিদ্রোহী বাহিনী আরাকান আর্মির সাথে লড়াই করছে।
📍
আরাকান আর্মিকে সমর্থনকারী রাখাইনের বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে গভীর মতভেদ রয়েছে। কিছু রোহিঙ্গাকে আরাকান আর্মি জোর করে সেনাবাহিনীতে ঢুকিয়েছে। মে মাসে আরাকান আর্মি বুথিডংয়ের কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়, যা তখন পর্যন্ত মিয়ানমারের বৃহত্তম রোহিঙ্গা বসতি ছিল। RSO হল প্রতিবেশী বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির এবং রাখাইনে ক্ষমতার জন্য লড়াইরত বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে একটি।
📍
আবার চীন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং চীনের নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের মধ্যে হাইগেং চুক্তির আরেক দফা আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এতে অংশ নেয়নি। ইতিমধ্যে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এই সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে। যে কারণে এমএনডিএএ, টিএনএলএ এবং আরাকান আর্মি ৬ আগস্ট যৌথ বিবৃতি জারি করে চীন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই অঞ্চলে বিমান হামলা বন্ধ করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।
📍
ওদিকে জেনারেল মিন অং হ্লাইং রাশিয়ায় শুভেচ্ছা সফর করেছেন গত ৪ মার্চ। মস্কোর ক্রেমলিন প্রাসাদে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। জেনারেলের সাথে সভায় উপস্থিত ছিলেন আরও ৫ জেনারেল। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সহকারী, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা।
📍
অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে তৌহিদ হোসেন এবং পররাষ্ট্র দপ্তর মানবিক করিডোর বিষয়টাকে যত সহজ-সরল ভাবছেন আদতে বাস্তবতা এর উল্টো। ‘আমাদের কিছু শর্ত আছে’, ‘আরাকান আর্মির সাথে আলোচনা না করে উপায় নেই’-এর মত ন্যাকা ন্যাকা কথা আর মিয়ানমারের বাস্তবতা এক নয়।
📍
এখন কীভাবে মিয়ানমারকে টুকরো করা হবে? কোন রিবেলসদের নাশকতার জন্য পুশ করা হবে? কে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের হেরোইন বিজনেসের দখল নেবে? সবকিছুর ফ্যাটাল গ্রাউন্ড মিয়ানমারের বহুমুখি যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকেই ‘বিক্রি’ করে দিচ্ছেন। এখন ভুলক্রমেও যদি বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়িয়ে যায় তাহলে ভারত-চীন-রাশিয়ার শত্রু হিসাবে পরিগণিত হবে বাংলাদেশ।
📍
এর ফলাফল হবে বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ সাইজ নিয়ে ‘ইন’ করবে, কিন্তু ‘আউট’ হবে খণ্ডিত সাইজ নিয়ে। ইউএস ব্যাকড আরাকান আর্মি সাপোর্ট প্রক্সি ওয়ারে জড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ আর্মি, আরাকান আর্মি (AA), চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (CNF) এবং ARSA । ওয়ার-ল্যান্ড হিসাবে ব্যবহার হবে বাংলাদেশ। আমেরিকান প্ল্যানে বাংলাদেশ ‘গাজা’ হবে না ‘দামেস্ক’ হবে সেটা যখন অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা হয়ে সামনে আসবে তখন আর কিছু করার থাকবে না। ২৯ এপ্রিল ২০২৫