।। সাইফুর রহমান মিশু।।
এত আয়োজন, এত প্রাণের বিসর্জন, এত আহত মানুষের আর্তনাদ—সবই যেন এক সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। যেনো এরা কেউই মানুষ নয়, কেবলমাত্র ব্যবহৃত টিস্যু পেপারের মতো—চাহিদা মিটলেই ছুঁড়ে ফেলা।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমনই কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ যে, এই ভূখণ্ডে যেই পরাশক্তি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে, সে শুধু দক্ষিণ এশিয়াই নয়—সমগ্র এশিয়া অঞ্চলে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগে প্রচলিত ছিল, “ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য কখনো অস্ত যায় না।” যদিও তারা একে একে তাদের উপনিবেশ হারিয়েছে, তবুও সেই অঞ্চলগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা তারা আজও ছাড়েনি।
আজকের আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ—সোজা সৈন্য পাঠিয়ে দখল নয়, বরং কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়। এই মানসিকতা এসেছে সেই পুরনো ব্রিটিশ উপনিবেশিক ডিএনএ থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত “ডীপ স্টেট”—যারা পর্দার আড়াল থেকে বিশ্বজুড়ে রাজনীতি ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে।
বিশ্ব এখন কিছু “সভ্য” মুখোশ পরা সংস্থার যুগে প্রবেশ করেছে—যেমন জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠন। এসবের “মানবিকতা” এখন যেন ছদ্মবেশ মাত্র। তারা যেই অঞ্চলকে টার্গেট করে, সেখানে নিজেদের অনুগত “পাপেট” বসিয়ে সেই অঞ্চলকে কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে।
১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল—দক্ষিণে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটির অনুমতি দিলে তারা স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। বঙ্গবন্ধু সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর কাছে দেশের একটি ইঞ্চি জমিও ছিল অমার্জনীয়। তাঁর এই অনমনীয়তায় মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়েও চরম মূল্য দিতে হয়েছিল—নৈরাজ্য, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, এবং একদিন পরিবারসহ প্রাণ হারানো।

একই ধরনের প্রস্তাব শেখ হাসিনার কাছেও এসেছে। কিন্তু তিনি ছিলেন তাঁর বাবার মতোই দৃঢ়চেতা। দেশের সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে কোনো ছাড় দেননি। তার পরিণামও আমরা দেখেছি—২০২৪ সালের জুলাইয়ে পরিকল্পিত সন্ত্রাস এবং তাঁর সরকারের পতন।
“মানবিক করিডোর” নামে জাতিসংঘ যে চাপে সিদ্ধান্ত নেয়—তা ইতিহাসে একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে, মূলত এক প্রকার আগ্রাসন বৈধ করার পন্থা মাত্র। রাখাইন রাজ্যে সহায়তা পাঠানোর নামে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর তৈরির পেছনেও একই যুক্তরাষ্ট্র-ঘনিষ্ঠ কৌশল কাজ করছে।
এখন কিছু কঠিন সত্য বলি—জনগণ চাইলেই কিছু বদলাবে না, আর না চাইলেও কিছু রক্ষা পাবে না, কারণ এরা ক্ষমতায় এসেছে নির্দিষ্ট একটি এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। তাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সরে যাবে না। আর তাদের কাজ শেষ হবার আগেই বদলে যেতে পারে এই দেশের মানচিত্র। শুরু হতে পারে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ, খাদ্য সংকট, এবং কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুতি।
একদিন ইতিহাস নিরপেক্ষভাবে বিচার করবে—কে ছিল এই সময়ের মীরজাফর, আর কে ছিল সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। এবং এই পাপেট সরকার ও তাদের পেছনের শক্তি—২০২৪ সালকে একটি বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে স্মরণীয় করে রাখবে।