ইউনূস নির্বাচন দিবে যারা ভাবছে তারা ‘আহাম্মকের স্বর্গে বসবাস করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শুক্রবার রাতে একটি উন্মুক্ত পাবলিক ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার সময়ে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। একটি গ্রুপ অডিও কলের লাইভে তাঁর এ বক্তব্য শুনেছেন ২৮ হাজারের বেশি মানুষ।
গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সংবাদ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, সাংবাদিক ছাঁটাই ও কিছু গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। এমন এক সময়ে শেখ হাসিনা এই সরাসরি বক্তব্য দিলেন, যখন সরকার যুদ্ধ পরিস্থিতির অজুহাতে ‘জরুরি আইন’ চালু করতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
৫ আগস্ট সেনা ও বিদেশী মদদপুষ্ট গোষ্ঠী সমর্থিত ছাত্রদের অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পরে মুহাম্মদ ইউনূস ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা তিনি জানিয়েছিলেন।
এটা নিয়ে আশার সৃষ্টি হলেও তার পরদিনই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর নয় বরং ২০২৬ সালের জানুয়ারীর মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এরমধ্যেই জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপন এবং সেখান দিয়ে আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছানোর পরিকল্পনা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সমালোচকদের মতে, এই করিডোরের আড়ালে সামরিক কার্যক্রম চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশকে পরোক্ষভাবে সংঘাতে জড়াতে পারে।
শেখ হাসিনা এদিন বক্তৃতায় সম্প্রতি চাকরি হারানো সাংবাদিকদের ঘটনা থেকে শুরু করে আসন্ন নির্বাচন, এবং ইউনূস সরকারের কথিত “যুদ্ধের প্রস্তুতি”—সবই ছিল তাঁর আলোচনার বিষয়বস্তু।
শেখ হাসিনা বলেন,
“যারা বলে ইউনুস নির্বাচন দিবে, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বসবাস করে। দুদিন পর পর একটা ইস্যু তুলে সে। এখন তুলেছে, আমরা যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আছি। সবাইকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলে এক নতুন নাটক শুরু করেছে। নির্বাচনের প্রসঙ্গ যেন কেউ না তোলে, সেজন্যই এসব করছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইউনূস তার চেয়ার ধরে রাখার জন্য ‘যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব’ ধরে আছে। নাটক সে ভালো পারে। হাত নাড়ানো, চোখ-মুখ করুন করে সে একেক সময় একেক নাটক করে। এসব আমরা বহুবার দেখেছি। আর দেখতে চাই না।”
শেখ হাসিনার ভাষ্য, “সে কত বড় নাটকবাজ, আমি জানি। বিভিন্ন সময় গরিবের জন্য টাকা চাইতে আসতো, সাহায্য চাইতো। আমি তাকে এবং গ্রামীণ ব্যাংককে সহযোগিতা করেছি। কান্নাকাটি, করুন মুখ—এসব তার পুরনো অভ্যাস।”
রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ খোলার প্রস্তাব নিয়েও কঠোর মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন,
“সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব শেষ করে দিয়েছে। করিডোরের নামে যা করছে, তা অমানবিক। ওই করিডোর দিয়ে মরনাস্ত্র যাবে মিয়ানমারে, যা লাখো মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। শহিদের রক্তে কেনা বাংলাদেশকে অন্য দেশের মানুষ হত্যায় ব্যবহার করতে দেওয়া যায় না।”
বক্তৃতার শেষ দিকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন,
“ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি কোনো বিভাজন দেখতে চাই না। দেশের স্বার্থে, দশের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।”