লন্ডন: আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস নৃত্যের সার্বজনীন ভাষা উদযাপন এবং নৃত্যকে অনুপ্রাণিত করার একটি দিন। ১৯৮২ সালের ২৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট (ITI), আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস প্রতিষ্ঠা করে। এই দিবসের শুরু হয়েছিলো আধুনিক ব্যালে-র জনক জঁ-জর্জেস নোভেরের জন্মদিনকে সম্মান জানাতে।
তাই এ দিবসকে সামনে রেখে নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের যুক্তরাজ্য শাখা নৃফাবা ইউকে, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, বিলেতের বাংলাদেশিদের মিলন স্থল পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হামলেটস – এর আলতাব আলী পার্কে, প্রথমবারের মতো একটি নৃত্য সমাবেশের মাধ্যমে নৃফাবা ইউকে’র শুভ সূচনা করেছে।
গত বছর, ২০২৪ এর ২৭ মে এই শাখার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিলো নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী নৃত্যসারথি লায়লা হাসানের উদ্যোগে, এবং ২০২৫ এর ২৬ এপ্রিল তার বাস্তবায়ন ঘটলো।

নৃফাবা ইউকের সভাপতি আনন্দের সাথে বলেন – ধীরে ধীরে টরণটো, আমেরিকা’র পাশাপাশি ইউকে তেও নৃফাবা ইউকে এর একটি শাখার আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম হলো। আর সে আয়োজনে, লন্ডনের প্রতিভাবান ও স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পীরা রং বেরঙের পোশাক পড়ে আলতাব আলী পার্কের চারদিকে একটি শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই আয়োজনের সূচনা করে। শোভাযাত্রার পর সকল নৃত্যশিল্পী এবং সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে আলতাব আলি পার্কের স্মৃতিস্তম্ভের সামনে বিলেতের নৃত্য শিল্পীরা নৃত্যের বিভিন্ন ধারা প্রদর্শন করে। উক্ত অনুষ্ঠান শুরু হয় কাজী ফারহানা আকতারের রাবিন্দ্রিক ‘নৃত্য এসো হে বৈশাখ’ এর মাধ্যমে, তারপর সোনিয়া সুলতানা ও মনিরুল ইসলাম মুকুল আঞ্চলিক নৃত্য এবং সেমি ক্লাসিক্যাল নৃত্য পরিবেশনা করেন, রুবাইয়াত শারমিন ঝরা ও গঙ্গা রায় উপজাতীয় নৃত্য, নীহারিকা ভৌমিক কত্থক ও মণিপুরি নৃত্যের মিশ্রণ, শেখ কাদের আঞ্চলিক নৃত্য, মেহবুবা লিথি নজরুল সঙ্গীতের সাথে সাধারণ নৃত্য, রশিদ লাবু পরিবেশনা করেন লোক নৃত্য এবং সবশেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে ‘নাচ ময়ূরী নাচরে’ নজরুল সঙ্গীতের সাথে সোহেল আহমেদের সাধারণ নৃত্যের মাধ্যমে, যেখানে প্রত্যেকটি নৃত্যশিল্পী অংশ নেন।
আকর্ষণীয় এই আয়োজন উপস্থিত দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এ ছিল সত্যি দেখার মতো একটি আয়োজন যা আলতাব আলি পার্কে বিলেতের মাটিতে এই প্রথম আয়োজিত হলো।

অনুষ্ঠান শেষে নৃত্যশিল্পীরা ঢাক ঢোল বাজিয়ে বাদ্যের তালে তালে নাচসহ শোভাযাত্রা সহকারে ব্রিক্লেন পরিদর্শন করেন। পথচারীদের মাঝে যেন এক আনন্দ উৎসবের জন্ম নিয়েছিল। তাঁরা গাড়ি থামিয়ে, রাস্তা আটকিয়ে শিল্পীদের সাথে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। নৃফাবা ইউকের সভাপতি বলেন ‘আমি এ দেশে আছি ২৫ বছর ধরে কিন্তু সকল নৃত্যশিল্পীদের সমন্বয়ে এরকম আয়োজন কখনো দেখিনি’। এ আয়োজনে ট্রিওআর্টস, সোনিয়ায ফিউশন, আপনঘর এবং বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস ইউকে ছাড়াও অভিনেত্রী রুকসানা হাসি সোনিয়া, বাদল রহমান, শায়লা শারমিন, রুমি হক, সাহাব আহমেদ এবং কাউন্সিলার শাহিদ আলি’র সহযোগিতায় অনুষ্ঠান আরও প্রাণবন্ত হয়েছে।
অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও গ্রন্থনায় ছিলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী রুবাইয়াত শারমিন ঝরা এবং আরও যারা নৃত্যে অংশগ্রহন করেন তাঁরা হলেন নৃফাবা ইউকের সম্পাদক মেহবুবা লিথি, সহ ও প্রচার সম্পাদক সোহেল আহমেদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক সোনিয়া সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ফারহানা আকতার, মনিরুল ইসলাম মুকুল, নীহারিকা ভৌমিক, শেখ কাদের জয়, রশিদ লাবু, গঙ্গা রায়I ‘শুদ্ধ নৃত্যের জয় হোক’ ছিলো এবছরের ইউকে নৃত্যশিল্পীদের পক্ষ থেকে নৃত্য দিবসের স্লোগান। নৃত্যশিল্প যে অন্যান্য শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ, এই কথাটি নৃত্যশিল্পীরা সংস্কৃতিমনা দর্শকদের আবারও মনে করিয়ে দেন। তাঁরা, ছোট বড় আগ্রহী সকলকেই শুদ্ধ নৃত্য শিক্ষার প্রতি আহবান জানান।