দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের ধারা আরও এক ধাপে গভীর হলো। বুধবার একদিনেই বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। মূল্যসূচকের বড় পতন, কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরের ব্যাপক ধস আর বিনিয়োগকারীদের চরম হতাশা—সব মিলিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যেন ধ্বংসস্তূপে রূপ নিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এর পাশাপাশি দীর্ঘদিনের মন্দা, বিনিয়োগ সুরক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা, আইসিবির নিষ্ক্রিয়তা ও বাজারে তরলতার অভাব—সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা রীতিমতো সর্বস্বান্ত।
বুধবার বাজারে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৪৯ পয়েন্ট কমে গেছে। এর ফলে একদিনেই বাজার মূলধন থেকে মুছে গেছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এই পতনে আতঙ্কিত হয়ে মতিঝিলে বিক্ষোভে নামেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। তারা ‘কাফন মিছিল’ বের করে বিএসইসি ও আইসিবির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসেনি। ৯৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়লেও লেনদেন কমে এসেছে ১৫০ কোটির বেশি। বাজার মূলধন বাড়লেও তা আগের দিনের পতনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে আজকের উত্থান কেবল এক ধরনের ‘টেকনিক্যাল বাউন্স’। মৌলিক কোনো পরিবর্তন বা আস্থা ফেরানোর মতো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
বুধবার বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা যে ‘কাফন মিছিল’ করেছেন, তা শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ নয়, বরং বাজারে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের চরম অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ। একজন বিনিয়োগকারী বলেন, “আমার ১৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ এখন মাত্র ৪ লাখ! এই বাজার আমাদের জীবন শেষ করে দিচ্ছে।”
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এমনিতেই ডলার সংকট, আমদানি নির্ভরতা ও মূল্যস্ফীতির চাপে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন আরও বড় সংকেত দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন, কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্য ভেঙে পড়ছে এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে আস্থার সংকট প্রকট হচ্ছে।