বাংলাদেশ, যে দেশের জন্ম হয়েছিল এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, আজ সেই দেশ চলছে বিদেশি প্রেসক্রিপশনে। নিজেদের কোনো স্বকীয় নীতি নেই, নেই কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সহ বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তির চাপ ও ফর্মুলায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে নিরাপত্তা, অর্থনীতি, অবকাঠামো—সবকিছুতেই বিদেশি হস্তক্ষেপ ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, আইএমএফ-এর শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব বোর্ডের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব যা একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অন্যতম স্তম্ভ, সেটিকেই দুর্বল করে দেওয়া হলো কিছু বৈদেশিক ঋণের বিনিময়ে।
অন্যদিকে, দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র নিউমু রিং টার্মিন্যালকে তুলে দেওয়া হয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে। ইন্টারনেট পরিসেবা, যা একটি দেশের নিরাপত্তা ও তথ্য নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত, সেটিও নামমাত্র মূল্যে তুলে দেওয়া হয়েছে বিদেশিদের হাতে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা ক্যাম্প তুলে নেওয়া হচ্ছে, যেন পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে এলাকা ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আর সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো, মিয়ানমার করিডোরের নামে সেন্টমার্টিন দ্বীপে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনের ছক এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে মার্কিন সামরিক দখলের দিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও সামরিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
একের পর এক সিদ্ধান্তে স্পষ্ট যে, দেশ এখন আর শুধুমাত্র একটি গণতান্ত্রিক সরকারের দ্বারা নয়, বরং বিদেশি স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু নাগরিক ও গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিদেশি নাগরিক আজ দেশের শাসনক্ষমতায়, নীতিনির্ধারণী বোর্ডে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ওপর তাদের দখল প্রতিষ্ঠা করছে।
আরও ভয়াবহ চিত্র হলো, সরকার এখন স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসন ও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়ে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে, যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাস করে, সেই স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিনা অপরাধে গণহারে গ্রেফতার চলছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতি নিছক রাজনৈতিক বৈষম্য নয়, বরং এটি স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তি, ভূখণ্ড ও আদর্শ সবকিছু আজ এক গভীর সংকটে। এ সংকট থেকে উত্তরণে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য, স্বকীয় নীতির বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের পুনরুত্থান।