ঢাকা, ১৬ মে ২০২৫: গত ১৩ই মে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সামরিক শাখার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আফতাব হোসেনকে বরখাস্ত করেছে। এটি বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাগতিক দেশের সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রথম বরখাস্তের ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে এবং তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে কোনো প্রতিনিধি পাঠানো হয়নি।
রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মিয়ানমারের জান্তা সরকার এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবিত এই মানবিক করিডোরের লক্ষ্য রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জন্য সহায়তা প্রদান এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হিসাবে বর্ননা করা হচ্ছে। তবে, মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই করিডোরের মাধ্যমে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম সহজতর হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত এপ্রিলে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ নীতিগতভাবে এই মানবিক করিডরের প্রস্তাবে সম্মত হলেও এর জন্য কিছু শর্ত আরোপ করেছে। তিনি বলেন, “আমরা কোনো অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থে কিছু যোগাযোগ বজায় রাখা প্রয়োজন।” এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সামরিক উপদেষ্টার কার্যক্রমের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
একইসাথে “মানবিক করিডোর” এর বিষয়টা জনসন্মুখে আনার কারনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকেও চাকরী হারাতে হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য ছিল “মানবিক করিডোর” এর পুরা বিষয়টা খুব গোপনে সেরে ফেলার, যেই কারনে কোন রাজনৈতিক দল বা কোন দেশীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাথে এই বিষয়ে মতামত পর্যন্ত নেয় নাই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা মূলত চালাচ্ছে মার্কিন নাগরিক ড খলিলুর রহমান, উনাকে বরখাস্থ করা হয়।
রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (এএ) এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে এই অঞ্চলে মানবিক সংকট তীব্রতর হয়েছে। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে আসন্ন দুর্ভিক্ষের হুমকি রয়েছে এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশ, যেখানে ইতিমধ্যে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, এই সংকটের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের এই পদক্ষেপকে অনেকে রাখাইন রাজ্যে তাদের ক্ষয়িষ্ণু নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক চাপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে দেশি-বিদেশি মহলে আলোচনা চলছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি। তবে, এটি স্পষ্ট যে রাখাইন রাজ্যের মানবিক করিডর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র হতে পারে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।