বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে একজন শেখ হাসিনা রয়েছেন বলেছিলেন ফারিয়া
।। মসিউল আলম।।
অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এনামুল হক নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করার চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে। সেই মামলার নথিপত্রের ভাষ্য হলো, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানী ঢাকার ভাটারা এলাকায় এনামুল হক নামের ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তিনি এই ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি “হত্যাচেষ্টার” মামলা দায়ের করেন ২০২৫ সালের ৩ মে। (অর্থাৎ তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রায় ৯ মাস পর।) এনামুল হক সেই মামলার আসামিদের তালিকায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকেও যুক্ত করেন। তাঁকে গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করার চেষ্টায় এই অভিনেত্রী (নুসরাত ফারিয়া) কী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, কোনো সূত্র থেকে তা জানা যায়নি। কিন্তু ঢাকার সিএমএম আদালত মামলাটি গ্রহণ করেন এবং আমাদের রাষ্ট্রপক্ষ অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে সেই মামলার আসামি হিসেবে গ্রপ্তার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার আবেদন জানান।
তারপর গতকাল ১৮ মে রোববার নুসরাত ফারিয়া থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আজ ১৯ মে সোমবার সকালে নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার শুনানি চলে। শুনানিতে নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান আদালতকে বলেন, এনামুল হকের দায়ের করা মামলার এজাহার অনুযায়ী তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, সেদিন নুসরাত ফারিয়া বাংলাদেশে ছিলেন না; তিনি পেশাগত কাজে কানাডায় ছিলেন; সেই কাজ শেষ করে বাংলাদেশে ফিরেছেন ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট। নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী তাঁর এই বক্তব্যের প্রমাণ হিসেবে নুসরাত ফারিয়ার ‘পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্র’ আদালতের কাছে জমা দেন।
সিএমএম আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবীর বক্তব্যের বিরোধিতা করতে গিয়ে আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, নুসরাত ফারিয়া অভিনেত্রী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী।…নুসরাত ফারিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বায়োপিকে অভিনয় করেছিলেন। রুপালি পর্দায় তিনি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় করা কোনো দোষের কিছু নয়। কিন্তু তিনি পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন, প্রতিটা ঘরে শেখ হাসিনা রয়েছে। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, যে হত্যাচেষ্টার মামলায় নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল, সেই মামলার অভিযোগ সম্পর্কে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে কিছু বলেননি; তিনি যা–কিছু বলেছেন, বিচারাধীন মামলাটির অভিযোগের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। ‘রুপালি পর্দায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন’,––এইসব অভিযোগের সঙ্গে এনামুল হকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগে দায়ের করা হত্যাচেষ্টার মামলার সম্পর্ক কী?) ঘটনার দিন (১৯ জুলাই ২০২৪) নুসরাত ফারিয়া বাংলাদেশেই ছিলেন না––নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবীর এই বক্তব্য সত্য না মিথ্যা, সে প্রসঙ্গেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কিছু বলেননি।
তথাকথিত ‘হত্যামামলা’ ও ‘হত্যাচেষ্টার মামলা’ দায়ের/গ্রহণ, এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ধরন, আদালতে শুনানি, গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কে/বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা, সরকারের প্রতিনিধিদের বক্তব্য ইত্যাদি লক্ষ করলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে যা প্রতীয়মান হয়, তা হলো স্বৈরাচারী মনোভাব। নিজেদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী আইনের প্রয়োগ–অপ্রয়োগের চেয়ে বেশি স্বৈরাচারী আচরণ আর কী হতে পারে? কারণ আমাদের মানসিক গড়নটাই স্বৈরাচারী, আমরা যে পক্ষই হই না কেন, যে দলই করি না কেন।