।। বিশেষ রির্পোট।।
২০ মে—চুকনগর গণহত্যা দিবস। মাত্র চার ঘণ্টায় কী পরিমাণ মানুষকে হত্যা করা সম্ভব? হয়তো ভাবতে পারেন, তিন-চারশ, কিংবা ছয়-সাতশ জন! কেউ কেউ হাজার খানেকের কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা আরও ভয়াবহ।
১৯৭১ সালের ২০ মে, বৃহস্পতিবার, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে সংঘটিত হয় মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ এবং স্বল্প সময়ে সংঘটিত বৃহত্তম গণহত্যা। এ দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাত্র ২২ জন সৈন্য নিয়ে চার ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার নিরস্ত্র শরণার্থীকে হত্যা করে।
খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ ভদ্রা নদী পাড়ি দিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে। তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন চুকনগর বাজার এলাকায়।
সকাল ১১টার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুটি দল একটি ট্রাক ও একটি জিপে করে চুকনগরের উত্তরে ‘কাউতলা’ নামক স্থানে এসে উপস্থিত হয়। সেখান থেকে তারা শুরু করে নির্বিচার ব্রাশফায়ার। পাতখোলা বাজার এলাকা থেকে শুরু হওয়া এই হত্যাযজ্ঞ ছড়িয়ে পড়ে চুকনগর বাজার পর্যন্ত এবং চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
রক্তবন্যায় রঞ্জিত হয় ভদ্রা নদীর পানি। স্বাধীনতার বহু বছর পর পর্যন্ত স্থানীয়রা সেই নদীর মাছ পর্যন্ত খেতে দ্বিধা করতেন।
চুকনগরের সেই ভয়াবহ দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, একটি জাতিকে নিধনের চেষ্টায় কী পরিমাণ বর্বরতা চালানো হতে পারে। অথচ আজও এই শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক চলে, চলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি এবং পাকিস্তানপ্রীতির লজ্জাজনক প্রকাশ।
চুকনগর গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও এক জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের উদাহরণ।
আজ ২০ মে, চুকনগর গণহত্যা দিবসে আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই সেইসব শহীদদের প্রতি, যাঁরা স্বাধীনতার আশায় প্রাণ দিয়েছিলেন।