বাংলাদেশে বর্তমানে যে ‘গণমামলা’ ও ‘গণআসামি’ নামক ঘৃণ্য প্রক্রিয়া চলছে, তা কেবল আইন ব্যবস্থার অপব্যবহার নয়, এটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—একই মামলায় শ’খানেক মানুষকে আসামি করে রাখার অদ্ভুত, অথচ পরিকল্পিত এক কৌশল, যেখানে আসামিরা হয়তো ঘটনাস্থলেও ছিলেন না। অথচ তাদের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে তদন্ত, জারি হচ্ছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, চলে আসছে পুলিশি হয়রানি, আর নেপথ্যে গড়ে উঠছে এক অদৃশ্য চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।
এই সিন্ডিকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ইউনুস নামক ব্যক্তি, যিনি গণতন্ত্রের মুখোশ পরে এক ভয়ঙ্কর কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থাকে মজবুত করে চলেছেন। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে যিনি ক্ষমতার চূড়ায় বসেছেন, তিনি আজ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছেন নিজের নিরাপত্তার বলয় তৈরির জন্য, ভিন্নমত দমন করার জন্য এবং সর্বোপরি—অর্থ উপার্জনের উৎস হিসেবে। পুলিশি তৎপরতা, গোয়েন্দা নজরদারি, মামলা পরিচালনা—সব কিছুর মধ্যে লুকিয়ে আছে ঘুষের চিহ্ন, আর তা কেবল নির্দোষ নাগরিকদের জীবনের শান্তি নষ্ট করছে না, দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা চূর্ণ করছে।
গণমামলার নামে এই যে র্যান্ডমলি নাম ঢোকানো—এটা যেন আধুনিক যুগের ব্ল্যাঙ্ক চেক। পুলিশ-দলদসরা জানে, কোনো এক বিক্ষোভ বা রাজনৈতিক সমাবেশ হলে তার ওপর ভিত্তি করে ১০০–২০০ জনের নামে একাধিক ধারায় মামলা দেওয়া হবে, যাদের বড় অংশের নাম মামলার সময় জানা যাবে না—‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে রেখে দেওয়া হবে যেন পরে পছন্দমতো ভেতরে ঢোকানো যায়। এভাবে একজন দিনমজুর, একজন গার্মেন্টকর্মী বা একজন শিক্ষার্থীও হয়ে উঠতে পারে রাষ্ট্রদ্রোহী কিংবা ‘উপদ্রবকারী’। এরপর শুরু হয় দালাল চক্রের খেলা—‘আপনার নাম মামলায় আছে, টাকা দেন ম্যানেজ করে দেই’। চাঁদার তালিকা বড়, কিন্তু বিচার নেই।
এটা কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, এটা একধরনের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য। এবং যারা রাষ্ট্র চালায়—তাদের প্রত্যক্ষ মদদ ছাড়া এই অপরাধ সম্ভব নয়। ইউনুস এই ব্যবস্থার মাথা, যিনি আইনের চোখে সাধারণ নাগরিকদের অপরাধী বানিয়ে রেখেছেন, যেন তারা কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।
সংবিধান, মানবাধিকার, আইনের শাসন—এই সব শব্দ এখন এ দেশের শাসনকাঠামোর কাছে মূল্যহীন। কারণ ইউনুস এবং তার অনুগত অ-সরকার এসব শব্দকে অর্থহীন করে তুলেছে। আইন এখন আর ন্যায়ের হাতিয়ার নয়, এটি শাসকের লাঠি। মামলা এখন আর অপরাধ দমনের উপায় নয়, এটি জনতার মুখ বন্ধ রাখার ফাঁদ।
এই অবস্থায় যারা চুপ করে থাকছে, তারা এই দমননীতির মৌন অংশীদার। যারা কলম ধরে, যারা সত্য বলে, তাদের জায়গা এখন আদালতের বারান্দায়, হাজতির ঘরে। দেশে যেন প্রতিটি থানাই একটি করে দমনশালা, প্রতিটি এজাহার যেন একটি করে নির্যাতনের লাইসেন্স।
এটি কোনো সাধারণ পরিস্থিতি নয়। এটি একটি নিষ্ঠুর, ঠান্ডা মাথার, সুপরিকল্পিত নিপীড়ন যন্ত্রের অভ্যন্তরীণ চিত্র—যার মূল লক্ষ্য, জনগণকে আতঙ্কিত রাখা, পঙ্গু করে রাখা, আর অর্থ-সুরক্ষায় ইউনুসের আসন মজবুত রাখা। ইতিহাস এর বিচার করবে—তবে প্রশ্ন হচ্ছে, আজ যারা ভুগছে, তাদের বাঁচার আশ্রয় কোথায়?