কুষ্টিয়া, ২৩ মে ২০২৫: কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে প্রায় দেড় শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী গাজী কালু-চম্পাবতী মেলা বসানোকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের জেরে মেলার দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে, ফলে মেলা বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, মঙ্গলবার (২০ মে ২০২৫) মেলা চলাকালীন জামায়াতের নেতাকর্মীরা মেলায় অশ্লীলতা ও জুয়ার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানাতে যান। এ সময় বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়, যা দ্রুত পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে রূপ নেয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাদের শেখ (৬৫) জানান, “মেলা দেখতে গিয়েছিলাম, দেখি দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। জামায়াতের লোকজনের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল।”
জামায়াত নেতাদের দাবি, মেলায় অশ্লীল কার্যকলাপ ও জুয়া চলছিল, যার প্রতিবাদে তারা বাধা দিতে গেলে বিএনপির সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। অপরদিকে, বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, জামায়াত-শিবিরের শতাধিক কর্মী টুপি পরা অবস্থায় হাঁসুয়া, রামদা, লাঠিসোটা নিয়ে মেলার অন্তত ৩০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।
সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো গ্রেপ্তার বা মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি। মেলার মাঠে ভাঙচুরের চিহ্ন এবং বন্ধ দোকানপাট পরিদর্শনে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, এই ঘটনায় মেলার ঐতিহ্যবাহী আবহ নষ্ট হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গাজী কালু-চম্পাবতী মেলা ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ওরস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এটি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত, যেখানে গাজী, কালু ও চম্পাবতীর মাজারে মানত করতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন।
এই সংঘর্ষের ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং ঐতিহ্যবাহী মেলার সমাপ্তি ঘটিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। এই ঘটনা আবারও ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভেদের কারণে সামাজিক সম্প্রীতির উপর আঘাত হানার ঝুঁকি তুলে ধরেছে।