ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান তার টুইটে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগকে ‘নাৎসি’ বা ‘ফ্যাসিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করার প্রবণতার সমালোচনা করেছেন।
তিনি মনে করেন, এ ধরনের ভাষার প্রয়োগ শুধু ভুলই নয়, বরং এটি রাজনৈতিক দমন-পীড়নকে বৈধতা দেয়।
বার্গম্যানের মতে, এই ধরনের শব্দের প্রয়োগ মূলত কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা বা তার সমর্থকদের কারাগারে পাঠানোর মতো পদক্ষেপকে জনমনে ন্যায্যতা দেওয়ার অপচেষ্টা।
তিনি তার টুইটে উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ১৬ই জুলাই পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসন একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন হিসেবে বিবেচিত হলেও, এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি চরম রূপ ছিল। এটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শাসনামলের ধারাবাহিকতারই অংশ। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি’র শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বার্ষিক গড় আওয়ামী লীগের তুলনায় বেশি ছিল। তবুও বিএনপিকে কেউ এখন ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘নাৎসি’ বলে অভিহিত করে না।
বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সংগঠনের উপর বিধিনিষেধের ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের শাসন বিএনপির তুলনায় কখনো কখনো বেশি কঠোর ছিল। তবে এটি পূর্ববর্তী শাসনেরই ধারাবাহিকতা।
বার্গম্যান উল্লেখ করেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নিশ্চিতভাবেই কারচুপি করত, যদি সেনাবাহিনী দুই বছর আগে হস্তক্ষেপ না করত।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অতীতের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ঘটালেও, বার্গম্যান মনে করেন, এই তিন সপ্তাহের ঘটনা, যতই নৃশংস হোক, আওয়ামী লীগকে ‘নাৎসি’ বা ‘ফ্যাসিস্ট’ বলার জন্য যথেষ্ট নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘স্বৈরশাসক’ বা আওয়ামী লীগের শাসনকে ‘স্বৈরতন্ত্র’ বলাও সঠিক নয়। হাসিনার পতনের আগে কোনো নিরপেক্ষ গণমাধ্যম, যেমন এএফপি (যেখানে বর্তমান প্রেস সেক্রেটারি কাজ করতেন), এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেনি। এই শব্দগুলোকে অত্যন্ত রাজনৈতিক ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
বার্গম্যানের মতে, শেখ হাসিনা যদি স্বৈরশাসক হতেন, তাহলে তিনি ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, নিউ এজের মতো স্বাধীন গণমাধ্যম বন্ধ করে দিতেন এবং বিএনপি ও জামায়াতকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতেন।
বার্গম্যান জোর দিয়ে বলেন, সত্য ও প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে ভাষা ব্যবহার করা উচিত, যা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার পথ সুগম করে। এমন ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়, যা রাজনৈতিক দমন-পীড়নের উদ্দেশ্যকে সহজ করে।
সূত্র: ডেভিড বার্গম্যানের টুইট, ২৩ মে ২০২৫।