।। মনজুরুল হক।।
কার্যকারণ ছাড়া কোনও ঘটনা ঘটে না। আজকে যে ইউনূসগং এবং সেনাবাহনীর মুখোমুখি অবস্থান, এর পেছনে জিওপলিটিক্যাল কো-ইন্সিডেন্স আছে। ইউনূসগং শুরু থেকে ভারতবিরোধিতা করে খুঁচিয়ে আসছিল যেন ভারত এখানে নাক গলায়, কোনওভাবে ইনভেড করে। তাহলে তারা বিশ্বকে দেখাতে পারবে ‘উই আর ইন ডেঞ্জার’। দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৯০ শতাংশ অ্যান্টি-ইন্ডিয়া মেন্টালিটির মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে ‘দেশ রক্ষার লড়াই’-এ নামিয়ে দিয়ে দীর্ঘদিনের জন্য নির্বাচন ইস্যু মাটিচাপা দেওয়া যাবে।
🔘
প্যাহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এবং তার ব্যাকফায়ারে পাকিস্তানের হাঁটুমুড়ে বসে পরাজয় স্বীকার করা দেখে এবং একইসঙ্গে ভারত চিকেনস নেক সংলগ্ন অঞ্চলজুড়ে ‘অপারেশন তিস্তা প্রহার’ চালু করায় ইউনূসগং হতাশ এবং ভীত।
🔘
মার্কিনকে করিডোর দিয়ে এবং চীনের পাকিস্তানের পাশে না দাঁড়ানো দেখে চীনের ওপর আস্থা হারিয়েছে। খোদ মার্কিনের গুডবুকেও থাকতে পারেনি। মিয়ানমার, ভারত, রাশিয়া, চীন কেউই তার করিডোর গেম ভালোভাবে নেয়নি।
🔘
এই ইস্যুতেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধ চরমে উঠেছে। শুরু থেকেই তাদেরই দয়ায় ক্ষমতায় বসে সেনাপ্রধানকে একাধিক বার অপসারণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ বন্দর ও করিডোর নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে। সেনাবাহিনি বলটা ছুঁড়ে দিয়েছে ইউনূসগং-এর কোটে।
🔘
পদত্যাগ নাটক শেষ হয়েছে। এই যে তিনি বলছেন-‘তোমরা সংযত না হলে পদত্যাগ করব’। কাদের সংযত হতে বলছেন? তাদেরকে মব ভায়োলেন্স করার লাইসেন্সই তো তিনি দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ‘মব’ শব্দটাই এতদিন সেভাবে ছিল না।
এর পর কী ঘটতে পারে?
🔘
প্ল্যান-A
আজ ২৪ তারিখ বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে ‘লীগ ফিরে আসছে’ এই ভীতি ছড়িয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত টাইম পারচেজ করা। একইসঙ্গে এই দুই দলের ঐক্য দেখিয়ে সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া। প্রয়োজনে বিএনপির দাবীকৃত কয়েকজন উপদেষ্টার বহিষ্কার মেনে নেওয়া। জামায়াত তো রাজি আছেই, বিএনপিও সরকারকে আরও সময় দিতে রাজিও হবে।
🔘
প্ল্যান-B
প্ল্যান-এ ফেল করলে জামায়াত নেতৃত্বাধীন র্যাডিক্যাল ইসলামিস্টদের ‘গ্রীণ সিগনাল’ দিয়ে রাজধানীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা, যা পরবর্তীতে আর ছড়িয়ে পড়লে ক্রমে সেটা বাইরের শক্তিকে ইনভল্ভ করাবে। দেশ গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
🔘
প্ল্যান-C
সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে আগের মত আবারও ‘পক্ষের নিউক্লিয়ার্স’কে সংগঠিত করে ‘ইন্টারনাল ক্যু’র চেষ্টা করা। প্রয়োজনে মার্কিন ‘ফায়ার ড্রিল’ শেখাতে আসা গ্রুপের ওপর হামলা করিয়ে মেরিন সেনাকে ডেকে আনা। অর্থাৎ পরাশক্তিগুলোকে ক্যাওয়াস-এ জড়িয়ে ফেলা।
🔘
প্ল্যান-D
বশংবদ প্রচার মাধ্যম সক্রিয় করে তাদের পক্ষে জনমত গড়ে তুলে সেটাকে ‘সারা দেশের জনগণ চাইছে’ বলে ক্ষমতা সংহত করা। ইতোমধ্যে সেইসব মিডিয়া ও সুশীল সমাজ মাঠে নেমে পড়েছে। তারা ক্রমাগতভাবে প্রচার করতে থাকবে-‘দেশের এই ক্রান্তিকালে শাসনতান্ত্রিক শূন্যতা হলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, তাই তাদেরকে আরও কিছু দিন সময় দিতে হবে’।
🔘
প্ল্যান-E
শেষ পর্যন্ত কোনও কিছু না হলে এখনকার প্রধান ব্যক্তিদের নিয়ে, বিএনপি-জামায়াত, এনজিও সুশীলদের নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করা, যারা বর্তমান সরকারেরই নতুন ফর্মেট হবে। সেই সরকারই প্রফেসর ইউনূসকে সেইফ একজিট দেবে।
🔘
এই সকল প্ল্যান ফেল করলে সরাসরি সেনার সাথে আপোসে বসে সেইফ একজিট চাওয়া। যদিও সেইফ একজিট দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও বর্হিশক্তি আশ্বস্ত করেনি। তার পরও সংঘাত এড়াতে সেনা রাজি হলে তিনি চলে যাবেন।
🔘
ইতোমধ্যে তার জন্য আরও দুঃসংবাদ হলো ভারত আজ ও কাল দুদিন আন্দামান-নিকোবর কোস্টাল জোনে এয়ার রেস্ট্রিকশন জারি করেছে। অর্থাৎ ওই অঞ্চলে কোনও এয়ার ড্রিল হতে যাচ্ছে। মিয়ানমার জুন্টা সেনা স্থল আক্রমণ এড়িয়ে রাখাইনে এয়ার অ্যাটাক জোরদার করেছে। এখন পর্যন্ত বাস্তবতা- জাতিসংঘের করিডোর প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে। সুতরাং জাতিসংঘের কাছে এবং মার্কিনের কাছে তিনি এখন ‘ডেড হর্স’। মার্কিনীরা কখনও ডেড হর্সে বাজী ধরে না।
🔘
আমরা জানি না, হয়ত আরও কোনও মেটিক্যুলাসলি ডিজাইন করা আছে তার। সেটা আছে বলেই তিনি সিম্পল একটা নির্বাচন দিয়ে জনগণের কাছে প্রাতঃস্মরণীয় হওয়ার বদলে জীবনপণ লড়াই করে লংলাইফ ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন। ২৪ মে ২০২৫ তলিয়ে যাবে?