গত ৯ মাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যে নাটকীয় এবং অস্বচ্ছ পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়। গণতান্ত্রিক শাসন, জবাবদিহিতা, ও স্বচ্ছতার যে স্বপ্ন জাতি দেখেছিল, বাস্তবে তা রূপ নিয়েছে একটি সুপরিকল্পিত ‘দখল প্রক্রিয়ায়’। পর্দার আড়ালে কেউ কেউ রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন যার অন্যতম রূপকার ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক মহলে একাধিক নাম উচ্চারিত হচ্ছে আসিফ, মাহফুজ, নাহিদ, সারজিস, হাসনাত—যেন সকল অনিয়ম ও অশুভ পরিকল্পনার দায়ভার তাদের কাঁধেই বর্তায়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, এরা কেবল পুতুল মাত্র। আসল চালক, মূল দিকনির্দেশক আর সুবিধাভোগী ব্যক্তি হলেন ড. ইউনুস স্বয়ং।
এই ৯ মাসে তিনি রাষ্ট্রের ভিতরে ভিতরে এমন ৯টি সুবিধা গ্রহণ করেছেন, যা একাধারে নজিরবিহীন এবং গভীরভাবে দুর্নীতিপূর্ণ। এই ঘটনাপ্রবাহ দেখলে প্রশ্ন উঠে এটি কি কেবল দক্ষতা, নাকি একটি সুগভীর দুর্নীতির ব্লুপ্রিন্ট?
১. নিজের মামলাগুলো ‘অদৃশ্য হাতে’ খারিজ করিয়ে ফেলা
অর্থপাচার, শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত থাকা সত্ত্বেও, ড. ইউনুস অল্প সময়ের ব্যবধানে সব মামলা খারিজ করিয়েছেন। যেখানে সাধারণ নাগরিকদের বছরের পর বছর কোর্টে ঘুরতে হয়, সেখানে তার মামলাগুলো মূহূর্তেই উধাও!
২. ৬৬৬ কোটি টাকার কর ‘মওকুফ’
গ্রামীণ ব্যাংকের বিপুল অংকের বকেয়া কর মওকুফ করে তিনি প্রমাণ করেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহারে তার জুড়ি নেই।
৩. আগামী ৫ বছরের কর মওকুফ নিশ্চিত
রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আঘাত করে ভবিষ্যতের আয়ও করমুক্ত করে নেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কোনো সরকারের আমলে সম্ভব হয়নি।
৪. গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা কমিয়ে আনা
২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে সরকারের অংশীদারিত্ব। এর ফলে নিয়ন্ত্রণ গিয়েছে ‘নামহীন’ প্রাইভেট শক্তির হাতে।
৫. গ্রামীণ ইউনিভার্সিটির অনুমোদন
রাষ্ট্রীয় চ্যানেল ব্যবহার করে ব্যক্তি-ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ যার মূল উদ্দেশ্য জাতি নয়, একক প্রচার।
৬. জনশক্তি রপ্তানিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ
গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেসের মাধ্যমে শ্রমবাজার দখলের পথ প্রশস্ত হয়েছে, যেখানে নিয়ন্ত্রণ যাবে ইউনুস-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর হাতে।
৭. ডিজিটাল ওয়ালেট অনুমোদন
গ্রামীণ টেলিকম পেয়েছে ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমতি, যা দেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় একচেটিয়া আধিপত্য নিশ্চিত করবে।
৮. ৭০০ কোটি টাকার সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল হস্তান্তর
কোনো টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই SSS পদ্ধতিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থ ট্রান্সফার করা হয়েছে গ্রামীণ ট্রাস্টে।
৯. রাষ্ট্রযন্ত্রে নিজের লোক বসানো
প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে তার আত্মীয়, এনজিও-সহকর্মী ও নিজ এলাকার লোকজনকে। একটি সুসংগঠিত নেপথ্য সরকার গড়ে তোলাই যেন এই কৌশলের লক্ষ্য।
এসব ঘটনা এখন আর গুজব নয় সরকারি গেজেট, বোর্ড সভার কার্যবিবরণী, আদালতের রায় এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তেই এসবের সত্যতা মেলে। অতএব, কিছু জুনিয়র কর্মকর্তা কিংবা অল্পবয়সী উপদেষ্টাদের দোষ দিয়ে মূল অপরাধীকে আড়াল করা মানে জাতিকে ধোঁকা দেওয়া।
এখন সময় এসেছে সরাসরি প্রশ্ন করার রাষ্ট্রযন্ত্র কি এখন ‘গ্রামীণ যন্ত্রে’ পরিণত হয়েছে?
এই আগ্রাসন কি নিছক সুযোগ নেওয়া? নাকি এর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক এজেন্ডা ও বহুজাতিক দাতাদের চাপ?
সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ কি এক ব্যক্তির উচ্চাশা, আন্তর্জাতিক লবি আর এনজিওতন্ত্রের পাঁকে।