কুখ্যাত রাজাকার এটিএম আজহারকে মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস দিয়েছে ইউনুসের ক্যাঙ্গারু কোর্ট। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কুখ্যাত এই রাজাকারকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ ও হুমকি দিয়ে আসছিল জামায়াত।
১৯৭১-এ আজহার জামায়াতের সে সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। পদাধিকার বলেই আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার ছিলেন তিনি, যে বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম দমনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য। আজহারের বিরুদ্ধে ছয়টি গুরুতর মানবতাবিরোধী অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের মধ্যে দুটি গণহ’ত্যা, একটি ধ’র্ষণ, চারটি হ’ত্যা এবং অ’পহরণ, আটক, নি’র্যাতনের তিন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমানিত।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃ’ত্যুদণ্ড দেয়, যা ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ বহাল রাখে। রায় বহাল রাখলে এলাকায় খুশির মাতন উঠে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ১:
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর শাখার সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ নেতা) ও রংপুর শহরের আয়কর আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলী ওরফে জররেজ মিয়াসহ ১১ জনকে অ’পহরণ করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সাতদিন আটক রেখে নি’র্যাতন চালানো হয়। এরপর ৩ এপ্রিল তাদের রংপুর শহরের দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে ব্রাশফা’য়ার করে হ’ত্যা করে আজহারের লোকজন। এ সময় দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে মন্টু ডাক্তার আহত হলেও বেঁচে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার শরীরে সেই গুলির জখম ছিল।
অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আজহার ট্রেনে করে নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ট্যাক্সেরহাট রেলগুমটিতে যান। সেখান থেকে ধাপপাড়া যাওয়ার পথে দুই পাশের একাধিক গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায় তারা। ধাপপাড়ায় পৌঁছে তারা মোকসেদপুর গ্রামে গুলি চালিয়ে ১৪ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে হ’ত্যা করে।
অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল দুপুর ১২টা থেকে ৫টার মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আজহারুল ইসলাম রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিলের আশেপাশের গ্রামে হামলা চালিয়ে এক হাজার দুইশর বেশি নিরীহ হিন্দু গ্রামবাসীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। এছাড়া আরো অন্তত দুইশ’ লোককে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এছাড়া গ্রামগুলোর বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।
অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে বদর বাহিনীর সদস্য ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর শাখার সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলাম কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপকের স্ত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গু’লি করে হ’ত্যা করে।
অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর শাখার সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যরা এবং স্থানীয় বিহারীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের তথ্য সংগ্রহ করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করত। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা অনেক পরিবারের সদস্যদের অ’পহরণ, আটক ও নি’র্যাতন চালানো হয়। ওই সময়ের মধ্যে রংপুর শহর এবং আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মনসুরা খাতুনসহ অসংখ্য নারীকে ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধ’র্ষণসহ শা’রীরিক নি’র্যাতন চালানো হয়।
অভিযোগ ৬: একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় শওকত হোসেন রাঙাকে নির্যাতন করেন অভিযুক্ত এটিএম আজহার। এরপর রাঙার ভাই ও ছাত্রলীগের কারমাইকেল কলেজ শাখার ছাত্রলীগ কর্মী রফিকুল হাসান নান্নুকে রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে অ’পহরণ করে রংপুর কলেজের শহীদ মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন ও জখম করা হয়। পরে নাসিম ওসমান নামের এক অবাঙালির সহায়তায় নান্নুকে ছাড়িয়ে আনেন তার বড়ভাই সাজ্জাদ জহির।
জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে এটিএম আজহারের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দলটি রাজধানীর পল্টনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত এই বিষয়ে আরও সোচ্চার হয়েছে। দলের আমির ড. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা ইউনুস প্রশাসনের কাছে আজহারের মুক্তি ও দলের নিবন্ধন পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
বর্তমানের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এর চীফ প্রসিকিউটর (রাজাকার গোলাম আযমের আইনজীবী) এর হস্তক্ষেপে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদনের ওপর আপিল শুনানির অনুমতি দেয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা এটাই প্রথম কোনো মামলা যে মামলায় রিভিউ থেকে মূল আপিল শুনানির অনুমতি দিয়েছিল আদালত।
প্রথম দিনের আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ বেঞ্চ পরবর্তী শুনানির জন্য আদেশ দেন।
আজকের শুনানিতে তার মৃত্যুদন্ড রায় থেকে খালাস দিয়েছে ইউনুসের ক্যাঙ্গারু কোর্ট। মূলত ইউনুসের সাথে এসব ডিল অনেক আগেই হয়েছে। এখন শুধু সুযোগ বুঝে খোপ মেরেছে।