সম্প্রতি প্রকাশিত “দ্য অ্যাপোস্টেসি ট্র্যাপ” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সহিংস উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিস্তার লাভ এবং কৌশলগত পদক্ষেপের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
যদিও এই প্রতিবেদন বাংলাদেশকে তালেবানের মতো উগ্রবাদীভাবাপন্ন রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দাবি করা করছে বিশেষ মহল।
ইউএনডিপি’র অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান SecDev এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। বাংলাদেশে এর সহয়তাকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে রয়েছে রূপান্তর নামে একটি এনজিও। যা পরিচালিত হয় সরাসরি USAID-এর অর্থায়নে।
তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন একটি বিষয়ে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরের জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের জন্য উগ্র মৌলবাদীদের মাধ্যমে সহিংসতা ঘটিয়েছিল, তাতে অর্থায়ন ও পরিকল্পনা করেছে, তারাই আবার এখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে সোচ্চার! এটা বেশ সন্দেহজনক।
বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ইসলামপন্থি উগ্রবাদী দলগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের সকল কার্যক্রমকে বৈধতা দিচ্ছে, কারাগার থেকে শত শত জঙ্গিকে মুক্ত করে দিয়েছে, তাদের সভা-সমাবেশের সুযোগ দিচ্ছে, আবার অন্যদিকে সেই সরকারের বিদেশি বন্ধুরাই এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তালেবান রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরছে। এর পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো ফেসবুকে ১৯.৫ মিলিয়নসহ মোট ৩০ মিলিয়ন ফলোয়াড় যোগাড় করেছে, যা নারী বিষয়ক বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রচারণার ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে। উগ্রবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সমমনা মিত্ররা নারীর সমান উত্তরাধিকার ও অভিন্ন পারিবারিক আইনের প্রস্তাবকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
এছাড়া, যৌন হতাশাগ্রস্ত বেকার তরুণদের দারিদ্রকে কাজে লাগাচ্ছে। জুলাইয়ের আন্দোলন ও পরবর্তী হতাশাজনক পরিস্থিতি ব্যবহার করে তাদের উস্কে দিচ্ছে। আল-কায়েদার মতাদর্শীরা দাওয়াতি কার্যকম ও প্রচারণার নামে ১,৩০০টির বেশি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে।
তবে সমালোচকদের মতে, এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের উগ্র-ইসলামপন্থি কার্যক্রমকে অতিরঞ্জিত করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে।
তাদের মতে, সরকার একদিকে এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে, তাদের কার্যক্রমকে উপেক্ষা করছে বা বৈধতা দিচ্ছে; অন্যদিকে এ ধরনের প্রতিবেদন দেশকে অস্থিতিশীল হিসেবে উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর জন্য বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করতে পারে বলে অভিমত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন দ্বৈত নীতি একটি দেশের আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান এবং স্বচ্ছ নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যেন বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার এই প্রচেষ্টা বন্ধ হয়।