ঢাকা, ২৮ মে ২০২৫: দেশের স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে ‘নরমাল ডেলিভারি কিট’ এবং গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ‘ড্রাগ অ্যান্ড ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট (ডিডিএস) কিট’-এর সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য গৃহীত এই প্রকল্প বর্তমান সরকার বন্ধ করে দেওয়ায় এই সংকট তীব্র হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক মো. ফায়জুর রহমান জানান, কিট সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেবার মান কমেছে এবং রোগীর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। গত সোমবার এই হাসপাতালে মাত্র ৫টি স্বাভাবিক প্রসব এবং ১৩টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। এপ্রিল মাসে মোট ১৭১টি স্বাভাবিক প্রসব এবং ২৭৮টি সিজারিয়ান অপারেশন রেকর্ড করা হয়েছে।
সারাদেশের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন হাসপাতালগুলো একই সংকটের মুখে রয়েছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ডেলিভারি ও ডিডিএস কিটের মজুত শূন্য। পূর্ববর্তী প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন প্রকল্পের প্রক্রিয়া শুরু হলেও জুলাইয়ের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরনো প্রকল্প স্থগিত করে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির নির্দেশ দেয়। ফলে গত নয় মাস ধরে কিট কেনাকাটা বন্ধ এবং মজুত ফুরিয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ দেশের ২২টি আঞ্চলিক পণ্যাগার এবং ৪৯৪টি উপজেলা হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি কিটের মজুত শূন্য। ডিডিএস কিট নেই ৪৭৪টি উপজেলায়। কিছু জায়গায় সামান্য মজুত থাকলেও তা চাহিদা মেটাতে অপ্রতুল।
নরমাল ডেলিভারি কিটে থাকে একবার ব্যবহারযোগ্য গ্লাভস, স্যালাইন, ইনজেকশন, ওষুধ, গজ, তুলা, স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ ১৭ ধরনের উপকরণ। ডিডিএস কিটে থাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক, প্যারাসিটামলসহ ২৫ ধরনের ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট। এই কিটের অভাবে দরিদ্র পরিবারের প্রসূতি মায়েরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ বিভাগের পরিচালক মার্জিয়া হক জানান, রাজস্ব খাত থেকে জরুরি সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং জুনের মধ্যে সরবরাহ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই সংকটকে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও নিম্নগামী হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।