ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে জুলাই আন্দোলনে আহত এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চিকিৎসক, কর্মচারীদের অনেকে আহত হয়েছেন বলে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বেলা ১১টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর দেড়টার দিকে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময় জুলাই আন্দোলনে আহত এবং রোগীর স্বজনদের হামলায় আমাদের চিকিৎসক, কর্মচারীদের অনেকে আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর উনারা হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের উদ্ধার করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত চারজন রোগী হাসপাতালে বিষপান করেন। এটিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, গায়ে হাত তোলা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটে। পরিচালকের কক্ষে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ারও চেষ্টা করেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে হাসপাতালে আসা রোগীরা বিপাকে পড়েন। শিডিউল অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও তা হয়নি। আউটডোরে লাইন থাকলেও টিকিট দেওয়ার লোক ছিল না। রুমের সামনে লোক থাকলেও চিকিৎসক ও কর্মচারীরা ছিলেন না। শুধু জরুরি বিভাগ খোলা ছিল। এ সময় সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাগবিতণ্ডা, ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাসপাতালে। পরে হাসপাতালে অবস্থান করা জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত রোগীরাও এতে যোগ দেন। তারা দেশি অস্ত্র নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর শুরু করেন। বাদ যাননি চিকিৎসকরাও। তাদের সঙ্গে যোগ দেন পাশে জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন জুলাই আন্দোলনে আহতরাও।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত চক্ষু হাসপাতালের কর্মকর্তা মিজানকে বের করে আনছিলেন কয়েকজন। মাথা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরা অবস্থায় তাকে নিয়ে আসা ব্যক্তিরা বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আহতরা মিজানকে আঘাত করেছে।’ চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাপ্রার্থী সবাইকেই দৌড়ে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় শহীদুল ইসলাম নামের একজন সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসককে হামলাকারীরা জাপটে ধরে ফেলেন এবং আঘাত করতে থাকেন। আবার তাদেরই কয়েকজনকে নিবৃত করতেও দেখা যায়। জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত সালমান বলেন, ‘মূলত কয়েক দিন ধরেই ঝামেলা চলছে। আহতদের মধ্যে চারজন বিষ খেয়েছে। এসব বিষয়ে আলোচনা করতে গতকাল পরিচালকের রুমে যাই। সেখানে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিচালককে উদ্ধার করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ (বুধবার) সকাল থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছিল। সেখান থেকে আমাদের ওপর হামলা করবে বলে শুনতে পারি। পরে আবার আমাদের ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেটে তালা দেয়। আমরা তালা ভেঙে বের হয়েছি। গন্ডগোল হয়েছে। তারপর সেনাবাহিনী এসেছে।’