।। আনসার আহমেদ উল্ল্যাহ।।
লন্ডনে ‘নারী নির্যাতন প্রতিবাদী মঞ্চ’ এর আয়োজনে নাচ, গান, নাটক ও আবৃত্তির মাধ্যমে প্রতিবাদী অনুষ্ঠান
২৬ শে মে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে সংগঠিত নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক নারী পুরুষ এবং নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা।
বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীনের প্রাণবন্ত উপস্থাপনা এবং সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন হাসানের সূচনা বক্তব্য, দলীয় নৃত্য, পথ নাটক, সংগীত ও আবৃত্তির মাধ্যমে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মূল আলোচক অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান ও ড. হাসনীন চৌধুরীর নারী নির্যাতন প্রতিরোধে তাদের জোড়ালো বক্তব্য তুলে ধরেন। এ ছাড়া এই প্রতিবাদী আয়োজনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, সৈয়দ এনাম, পুষ্পিতা গুপ্ত, স্নিগ্ধা মিষ্টি ও অন্যান্যরা। নারী নির্যাতন বন্ধে বিভিন্ন শ্লোগান সম্মিলিত পোস্টার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে উপস্থিত সকলে শোভাযাত্রা সহকারে জাগরণের গান পরিবেশন করে ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্ক প্রদক্ষিণ করেন।
‘জাগো নারী জাগো’ ও ‘ভয় কি মরণে’ গানের সাথে নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন বুলবুল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস বাফা ইউ কে’র শিল্পীবৃন্দ। বাংলাদেশের নৃত্যে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত নৃত্য শিল্পী রুবাইয়াত শারমিন ঝরা, কাজী ফারহানা আখতার ও মেহেবুবা লিথি। পথ নাটকে অংশগ্রহণ করেছেন, মাহফুজা তালুকদার, ইফফাত আরা খানম, নূরুল ইসলাম, মুজিবুল হক মণি, হেলেন ইসলাম, হীরন বেগ ও মতিউর তাজ। বৃন্দ আবৃত্তিতে অংশ গ্রহণ করেছেন ঊর্মি মাযহার, শাহাব আহমেদ বাচ্চু, স্মৃতি আজাদ, ধনঞ্জয় পাল ও শতরূপা চৌধুরী। একক কবিতা আবৃত্তি করেন কবি শামীম আজাদ, ডেভিড লী মর্গ্যান ও জাসমীন চৌধুরী। গান পরিবেশন করেন একাত্তরের কন্ঠ যোদ্ধা হিমাংশু গোস্বামী ও বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাহিরন জান্নাত। ঢোল বাজিয়েছেন সোহেল।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনুষ্ঠানে সংহতি জানিয়ে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন লোকমান হোসেন, আবু মুসা হাসান, দেওয়ান গৌস সুলতান, মেফতাহুল ইসলাম ও ফয়জুর রহমান খান প্রমুখ।
আরো যারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন, মাহমুদ এ রউফ, ড. আনসার আহমেদ উল্লাহ, সৈয়দ আনাস পাশা, প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ, হামিদ মোহাম্মদ, মাহমুদ হাসান মিঠু, আলিমুজ্জামান, আহবাব হোসেন, সৈয়দ হামিদুল হক, অসীমা দে, সত্যব্রত দাস স্বপন, নিধি, সংস্কৃতি কর্মী সমিরুন চৌধুরী, রিনা কবির, দিলরুবা ইয়াসমিন রুহী, হাফসা নুর প্রমুখ।
বাংলাদেশে বর্তমানে নারীরা বাড়ীতে, কর্মক্ষত্রে, বাসে, লঞ্চে হর হামেশাই নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারী ধর্ষণ এখন প্রতিনিয়ত ঘটছে এবং বেড়ে যাচ্ছে । নারীর প্রতিকৃতিতে জূতো পেটা এবং নারীর বস্ত্র হরনের মত লজ্জাজনক কর্মকাণ্ডে সমগ্র নারীজাতি আজ অপমানিত। নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়।
দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের পেশা, পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজ-সজ্জা, মাথায় কাপড় না দেয়া নিয়ে, এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে একা স্বাধীনভাবে বাইরে বেড়াতে বের হলেও প্রকাশ্যে হয়রানি এবং জনসমক্ষে নির্যাতন ও মারপিট করা হচ্ছে। কিছু মানুষ তথাকথিত মব তৈরি করে এগুলো করছে আর অনেকে তামাশা দেখার আনন্দে তাতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। আবার কেউ কেউ মোবাইলে লাইভ করে, ছবি তুলে বা ভিডিও করে স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করছে। অনেকে আবার এগুলোকে জনতার বিচার বলেও দাবি করছে।
সকল বয়সের, সকল শ্রেণি-পেশার নারীই প্রতিনিয়ত ঘরে-বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, এমন কি আনন্দানুষ্ঠানেও যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও দলগত ধর্ষণ সহ নানা ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বা এই আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকছে। এটা নতুন কোন বিষয় নয় তবে নারীর উপর এই অপরাধ ‘নারী নির্যাতন প্রতিবাদী মঞ্চ’ চায় না, তাই এর বিরুদ্ধে তারা আওয়াজ তুলছেন । নারীর উপর সকল ধরনের হয়রানি, নির্যাতন, সহিংসতা, অবিচার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে জোরালো ভূমিকা রেখে, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রত্যেক অপরাধীর বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। নারীর জীবন সহিংসতামুক্ত হউক, নারীর অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত হউক।
অনুষ্ঠানের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আয়োজকদের পক্ষে মাহফুজা তালুকদার। সম্মিলিতভাবে দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে প্রতিবাদ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।