।।ইমতিয়াজ মাহমুদ।।
এমনকি নির্বাচিত সরকারেরও অনেক সময় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পুনঃনির্বাচন দেওয়া বিধেয় হয়ে পড়ে। এইটাই গণতন্ত্র। কোন দেশেই অনির্বাচিত সরকার থাকা সমীচীন নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু কোন না কোনোভাবে একটা বৈধ পন্থা প্রয়োজন হয় যেটা থেকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে যে কেউ বলে দিতে পারে যে জনগণ সরকারে এই দলকে চায় বা সেই দলকে চায় বা এই ব্যক্তিকে চায় বা সেই ব্যক্তিকে চায়। নৈর্ব্যক্তিক হওয়া প্রয়োজন কেননা এমনিতে একজন ব্যক্তির বা একদল ব্যক্তির মনে হতে পারে যে দেশের মানুষ আমাকেই চায়- সেরকম মনে হওয়ার আসলে কোন বাস্তব গ্রহণযোগ্যতা নেই।
দেশে কখনো কখনো অনির্বাচিত সরকার চলে আসে- বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে এই বাস্তবতা আর কে বেশী জানবে! বৈধভাবে, অবৈধভাবে, নিতান্ত অনিবার্য বাস্তব প্রয়োজনে বা একান্ত গায়ের জোরে নানাভাবে এইধরনের সরকার ক্ষমতা দখল করে। আমাদের সংবিধানেও কয়েক বছরের জন্য এরকম অনির্বাচিত সরকারের বৈধ বিধান ছিল- তিন মাসের জন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকবে এটা কেউই চায় না- কেউ না, এরকম না চাওয়ার বাস্তব বৈধ কারণও আছে। সংবিধানের বিধান ইত্যাদি বাদ দিলেও, রাষ্ট্র যেহেতু জনগণের রাজনৈতিক সংস্থা, জনগণই সরকার গঠন করবে এটাই কি বিধেয় নয়?
আমাদের এই সরকার বৈধ কি অবৈধ সে আলোচনা না হয় এখন বাদই দিলাম- বাস্তবতা হচ্ছে যে এরা নিজেরাই নিজেদের নাম দিয়েছে ‘ইন্টারিম’ বা বংলায় ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ সরকার, এবং এরা ক্ষমতায় আছে। অনেকেই বলেন যে এই সরকারের পক্ষে দেশের মানুষের সমর্থন আছে। দেশের মানুষের সমর্থন আছে বলে এরা যেটা বুঝাতে চান সেটা হচ্ছে যে দেশের অনেক মানুষ ওদের পক্ষে আছে। থাকতে পারে, যারা এই সরকারকে সমর্থন করেন, এমনকি ওরা সংখ্যাগরিষ্ঠও হতে পারে। কিন্তু এইসব মানুষ ওদেরকে ইন্টারিম হিসাবেই সমর্থন করে, স্থায়ী পাঁচ বছর মেয়াদি সরকার নয়। এরা তো ইন্টারিম হিসাবেই এসেছেন, স্থায়ী সরকার হিসাবে ওদেরকে সমর্থন করার কথাই ওঠে না।
ইন্টারিম সরকার কেন দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকবে? তাইলে তো এরা ক্ষমতা জবরদখলকারী হয়ে গেলো। আপনারা নাকি ভাল মানুষ, বড় বড় ডিগ্রী আছে, বিদেশী পাসপোর্ট আছে। আপনারা কেন জবরদখল করে ক্ষমতায় থাকবেন। নির্বাচন করে আসুন, তাইলে আমার মত লোকজন আর আর আপনাদের ক্ষমতায় থাকা নিয়ে এলেবেলে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। নির্বাচনে জিতে এসে সংবিধান পাল্টে ফেলুন বা সেইরকম নানাকিছু করেন। মানা করেছে কেউ? কিন্তু নির্বাচন করে আসুন- আসলেই যদি জনগণ আপনাদের চায় তাইলে আপনারা অনেক আসন পাবেন। বৈধ হবার সুযোগ যেহেতু আছে তাইলে কেন খালি খালি নিজেদের গায়ে অবৈধ জবরদখলকারীর তকমা লাগাবেন?
আরেকটা জরুরী ব্যাপার আছে। দেশে একটা পার্লামেন্ট থাকতে হয়। পার্লামেন্ট না থাকলে সরকারের জবাবদিহিতা থাকে না, সেটা তো একটা ব্যাপার বটেই। মুল ব্যাপারটা হচ্ছে যে পার্লামেন্ট না থাকলে একজন দুইজন ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার নানাপ্রকার আইনকানুন হয়। নৈতিকভাবে এইরকমভাবে একজন দুইজন মানুষের ইচ্ছার বা ওদের পছন্দমত আইন করা তো ঠিক না। আইন করবেন জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসাবে- সেটা হতে পারে পার্লামেন্টে। কয়েকজন ব্যক্তি ওরা যত বুদ্ধিমান বা পণ্ডিতই হন না কেন, ওদের তো আর সেই নৈতিক অধিকার নেই ওদের পছন্দ আমার উপর চাপিয়ে দেওয়ার। পার্লামেন্ট থাকতে হয়। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকতে হয়।
নির্বাচন দিন। মানুষকে নিজের পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করুণ। এইটাই ইন্টারিমের কাজ। এবং এই কাজটা জরুরী, নির্বাচনটা তাড়াতাড়ি ডাকুন। দেশে এমন কোন বাস্তব পরিস্থিতি নাই যার জন্যে নির্বাচন বন্ধ রাখতে হবে। এখনো চাইলেই আপনারা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করতে পারবেন। দেশের সকল রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে আসুক। দেশটাকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফেরত আসার সুযোগ করে দিন। নির্বাচন দিতে দেরি করলে আপনারা নিজেরাও বিপদে পড়তে পারেন। বলা যায়না, বেশী দেরি করলে আওয়ামী লীগ আবার লোকপ্রিয় দলে পরিণত হতে পারে, ফিরে আসতে পারে ক্ষমতায়। সে তো আরেক ইয়ে হয়ে যাবে আরকি।
মেহেরবানী করে নির্বাচন ডাকুন। এছাড়া আরও কোন পথ নাই- এবং মানব সভ্যতার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এইটাই সকলের জ্ঞাত সর্বোত্তম পথ।
লেখক: সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক।