কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মূল কারণ, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি আমদানি-রপ্তানি করা প্রতিটি পণ্যের ওপর পৃথকভাবে কর দাবি করছে। এই দাবিকৃত কর না দেয়ায় পণ্যবাহী জাহাজ ও নৌযান আটকে দিচ্ছে সংগঠনটি, ফলে কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বন্দরে।
সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ জান্তা সরকারের কাছ থেকে আরাকান আর্মির হাতে চলে যাওয়ার পর থেকেই বারবার এমন সমস্যার মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এর আগেও বেশ কয়েকবার মিয়ানমার থেকে আসা পণ্যবাহী জাহাজ নাফ নদীর মাঝপথে আটকে দেয় আরাকান আর্মি। এতে করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলমান বাণিজ্য কার্যক্রমে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে টেকনাফ বন্দরের গুদামে পড়ে আছে মিয়ানমারে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত কোটি টাকার সিমেন্ট, আলুসহ বিভিন্ন পণ্য। একইভাবে মিয়ানমারের রপ্তানিকারকদের পাঠানো পণ্যও নাফ নদীর ওপারে আটকে আছে। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহেতাশামুল হক বাহদুর বলেন, “আমরা নিয়ম মেনে বৈধভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা করছি এবং সে দেশের সরকারের কাছেই কর পরিশোধ করছি। তাহলে একটি সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মিকে আবার কর দেব—এটা কীভাবে সম্ভব?”
তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা এখনও পণ্য পাঠাতে আগ্রহী, কিন্তু মাঝপথে বাধা পাওয়ায় তারা নিরুপায়। এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলকে অবহিত করা হয়েছে।
টেকনাফ বন্দরের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, “গত ১২ই এপ্রিল থেকে বন্দরে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আদান-প্রদান পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে শুধু ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, সরকারেরও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।”
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, “বন্দরের অচলাবস্থার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এটি একটি রাষ্ট্রীয় বিষয়, এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেই এর সমাধান আসবে। আমরা প্রশাসনিকভাবে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত জানাচ্ছি।”
এই অচলাবস্থার দীর্ঘস্থায়ী হলে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা দ্রুত কার্যকর কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।