ইউনূস সরকার যখন মহান মুক্তিযুদ্ধকে রিসেট বাটনে ফেলতে চাচ্ছে তখন বাহাত্তরের সংবিধানের জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এই চার মূলনীতিকে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে দেশের বাম দলগুলো। এতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন কিছুটা আশাবাদী হয়েছেন।
এছাড়া বামদল গুলো প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের অতিরিক্ত ক্ষমতা হ্রাসে ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)’ গঠনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, এতে দ্বৈত প্রশাসনের সৃষ্টি হবে এবং ‘সুপার গভর্নমেন্ট’ গঠিত হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের অংশীজনরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম দফার সংলাপে এসব মতামত তুলে ধরেছেন।
বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের মতো বাম দলগুলো বিস্তারিত সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব না দিলেও ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের ওপর লিখিত ও মৌখিক মত দিয়েছে তারা।
সিপিবি ও বাসদ সংবিধানের মূল চার নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সংসদের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন, প্রাদেশিক ব্যবস্থা ও গণপরিষদ নির্বাচন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। তারা সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে। সংবিধানের ৭(ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রস্তাব দিলেও মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করা হয়—এমন যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ জাসদ।
সংসদে নারীদের জন্য ১০০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর পদে দুই মেয়াদের সীমা, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী এক ব্যক্তি হওয়ার বিষয়ে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে বামরা।
বাসদ জাতীয় সনদ প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, মৌলিক মতপার্থক্যের জায়গা বাদ দিয়ে যেসব বিষয়ে আংশিক ঐকমত্য সম্ভব, তা নিয়ে এগোতে হবে। বাংলাদেশ জাসদ ৭ মার্চের ভাষণ সংবিধান থেকে অপসারণের বিরোধিতা করে এবং পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বহাল রাখার পক্ষে মত দেয়। এছাড়া আদিবাসী শব্দটি সংবিধানে সংজ্ঞাসহ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
বাসদ (মার্ক্সবাদী) সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পাশাপাশি, এক ব্যক্তি যেন টানা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী বা দলীয় প্রধান না হতে পারেন—এমন বিধানের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রস্তাবও তুলেছে।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তাদের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, চার মূলনীতির ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারে ঐকমত্য সম্ভব।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার দরকার। অর্থ, পেশিশক্তি ও প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করার কথা বললেও, বাম দলগুলো এ বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়নি।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান মত দেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হবে, সেগুলো অধ্যাদেশ ও প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর করা যেতে পারে। আর যেসব বিষয়ে মতভেদ থাকবে, তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ রেখে সংসদের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।