আলি শরিয়তি উবাচ
ভূমিকাঃ
বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র রাষ্ট্র জন্মের আগে থেকেই ক্ষমতার চূড়ায় বসত করে। কথিত আছে আমলারা গাছের আগারটাও খায়, গোঁড়ারটাও খায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও পরিচালনায় বেসামরিক আমলাতন্ত্র অপরিহার্য বলে প্রমাণিত ও স্বীকৃত। তবুও বিভিন্ন সময়ে আমলাতন্ত্রের ওপরে খড়গও কম নেমে আসেনি। অতীতের সকল খড়গ ৫ আগস্টের পরের খড়গকে হার মানিয়েছে। এবারের খড়গ মবতন্ত্রের খড়গ, গ্রেফতারের খড়গ, মামলাবাজির খড়গ, ফোর্স রিটারমেন্টের খড়গ, খড়গের মধ্যে বরং ওএসডি হওয়া অনেক সহনশীল খড়গ। আরও নানারকম হয়রানী তো আছেই, পুরো পরিবারসহ হয়রানি চলছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের অন্যতম সংকট ছিল বনেদি সিএসপি ও ইপিসিএস এর দ্বিমুখী বিরোধ, আশির দশকে এর সাথে যোগ হয়েছিল বিসিএস বিরোধ। আশি, নব্বই ও শূন্য দশক জুড়ে এই ত্রিমুখি বিরোধে আমলাতন্ত্র জেরবার ছিল। জন্মগতভাবেই সিএসপি ও ইপিসিএস বিদায় নিয়েছে, তাদের বিরোধও উধাও হয়েছে। এরপরে একটা স্থিতিশীলতা এসেছিল। কিন্তু এরমধ্যেই শুরু হয়েছে অ্যাডমিন ক্যাডার বনাম অন্যান্য ক্যাডার দ্বন্দ্ব। আর ইন্টেরিম সরকার এই দ্বন্দ্ব নিরসনে মনোযোগ না দিয়ে তথাকথিত সংস্কারের নামে নতুন নতুন সংকট বাড়িয়ে চলছে। পরিকল্পিতভাবে সুশৃঙ্খল আমলাতন্ত্রকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পরিবর্তে পশ্চাৎপদ, রক্ষণশীল ও বিরোধপূর্ণ করে তুলেছে, যা ধ্বংসের নামান্তর। আজকের লেখায় এসব বিষয়ে ফ্যাক্টভিত্তিক ও তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত করে বিষয়গুলো বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো।
লেখায় বেসামরিক আমলাদের অন্তর্ভুক্ত হলেও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক এবং অন্যান্যদের বিষয় উল্লেখ করবো না। নিয়ে লিখবো না। ইতোমধ্যে পুলিশ নিয়ে লিখেছি, অন্যদের নিয়েও লেখার ইচ্ছে রইল।
মামলাঃ
সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে অন্তত ১৬১ জন বেসামরিক আমলার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে, কারণ কোথায় যে কার নামে মামলা দায়ের করানো হয়েছে তা কেবল মামলাবাজেরাই জানেন। এদের অনেকেই চাকরিরত অবস্থায় আসামী হয়েছেন, পরে অবসরে পাঠানো হয়েছে, অনেকেই এখনও চাকরিতে আছেন ওএসডি হয়ে অথবা ফেলে রেখেছেন কোনো অপ্রয়োজনীয় গুপচিতে।
এরমধ্যে ৭৮ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছাড়াও রয়েছেন ৬৭ জন সাবেক ও বর্তমান অতিরিক্ত সচিব, ৩ জন সাবেক যুগ্ম সচিব, ৩ জন সাবেক উপ-সচিব, ২ জন সহকারী সচিব, ১ জন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সাবেক ও বর্তমান ৫ জন কর্মকর্তা, আইসিটি বিভাগের ডেটা সেন্টারের ১ জন সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ বেতারের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্রের ১ জন বর্তমান উপ-পরিচালক, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ১ জন যুগ্ম সচিব রয়েছেন। সাবেক সচিবদের মধ্যে সাংবিধানিক পদে, যেমন-নির্বাচন কমিশন ও পিএসসি ইত্যাদিতে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন অনেকে রয়েছেন। আর মামলার সংখ্যা হিসাব করা খুবই কঠিন, কার নামে যে কয়টা করে মামলা হয়েছে এবং কোথায় হয়েছে তাও উদ্ধার করা মুশকিল।
হত্যা সহ বিভিন্ন মামলার আসামী সিনিয়র সচিব ও সচিবদের মধ্যে ৩ জন সাবেক ক্যাবিনেট সচিব রয়েছেন, যথা- খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, মোঃ মাহবুব হোসেন, কবির বিন আনোয়ার;
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক ৬ জন মুখ্যসচিব, যথা- মোঃ নজিবুর রহমান, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আব্দুস সোবহান সিকদার, ড. আহমেদ কায়কাউস, তোফাজ্জল হোসেন মিয়া;
পাকিস্তান আমলের বনেদি আমলা ৬ জন সাবেক সিএসপি, যথা- এইচ এন আশিকুর রহমান, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, এম এ মান্নান;
৩ জন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), যথা- কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ সিএসপি, কে এম নুরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আউয়াল;
৪ জন সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য, এরমধ্যে ২ জন মন্ত্রী ছিলেন, যথা- এম এ মান্নান সিএসপি, আবুল কালাম আজাদ, ড. মোহাম্মদ সাদিক এবং র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী;
২ জন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান, যথা- ইকবাল মাহমুদ, মোঃ মাইনুদ্দিন আব্দুল্লাহ এবং দুদকের ২ জন সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, আবুল হাসান মনজুর;
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক;
এছাড়াও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার, তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, পিএসসির সদস্য, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান/পরিচালক, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ইত্যাদি পদে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক সিনিয়র সচিব ও সচিবদের মধ্যে রয়েছেন- মোজাম্মেল হক খান, উজ্জল বিকাশ দত্ত, হেলালুদ্দীন আহমদ, আব্দুল মান্নান হাওলাদার, আনিসুর রহমান, আব্দুল মালেক, মরতুজা আহমেদ, লোকমান হোসেন মিয়া, পবন চৌধুরী, জাফর আহম্মদ খান, এম আসলাম আলম, কামাল উদ্দিন আহম্মেদ, হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, খন্দকার শওকত হোসেন জুলিয়াস, সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শাহ কামাল, ফয়েজ আহমেদ, এম এ এন সিদ্দিক, নজরুল ইসলাম খান, ইব্রাহীম হোসেইন খান, মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, চৌধুরী মো. বাবুল হাসান, সুরাইয়া বেগম, সম্পদ বড়ুয়া, জুয়েনা আজিজ, নাছিমা বেগম, আকতারী মমতাজ, প্রশান্ত কুমার রায়, মুহিবুল হক, মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, সাজ্জাদুল হাসান, এন এম জিয়াউল আলম, সালাহ উদ্দিন, শহীদউল্লা খন্দকার, আব্দুল মান্নান, মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী, শাহজাহান আলী মোল্লা, শ্যামল কান্তি ঘোষ, ইকবাল খান চৌধুরী, নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, বরুণ দেব মিত্র, আলাউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাসিম, রফিকুল ইসলাম, জিল্লার রহমান, অপরুপ চৌধুরী, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আমিনুল ইসলাম খান, ইসমাইল হোসেন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, আবু হেনা মোরশেদ জামান, ওয়াহিদা আক্তার, জাহাংগীর আলম, এ কে সামছুদ্দিন আজাদ চৌধুরী, মোঃ সামছুল আরেফিন এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বীর বিক্রম।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব শায়লা ফারজানা শিউলি, মোখলেসুর রহমান সরকার, মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, এনামুল হাবীব, রাব্বী মিয়া, এস এম আলম, তন্ময় দাস, মো. তোফায়েল ইসলাম, মো. শওকত আলী, সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, কামরুন নাহার সিদ্দীকা, মো. আবদুল আওয়াল, মো. হামিদুল হক, দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, ফয়েজ আহাম্মদ, মো. মাসুদ করিম, উম্মে সালমা তানজিয়া, আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস, তপন কুমার বিশ্বাস, হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, মোঃ আমজাদ হোসেন খান প্রমুখ; সাবেক যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস ও মোঃ ওয়াহেদুল ইসলাম; সাবেক উপ-সচিব আহমেদ কবির; সাময়িক বরখাস্ত সহকারী সচিব তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি ও সাইফুল ইসলাম এবং তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা বাংলাদেশ বেতারের চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন উপ-পরিচালক;
[এসকল কর্মকর্তাদের মাঝে অনেককেই ২০১৮ এর নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য বাধ্যতামুলক অবসর দেওয়া হয়েছে । যাঁদের অনেকেরই চাকুরি আরো ৮/১০ বছর পর্যন্ত ছিল।]
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব একেএমজি কিবরিয়া মজুমদার, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সাবেক যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবদুল বাতেন এবং ইসি সচিবালয়ের এনআইডি শাখার সাবেক পরিচালক ফরহাদ হোসেন।
মামলাবাজির উর্বর ভূমি বর্তমান বাংলাদেশে গত অক্টোবরে সরকারী তিতুমীর কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও বর্তমান বিএনপি নেতা মোহাম্মদ জামান হোসেন খান নামে একজন বাদীর দায়ের করা মামলায় ১৯৬ জন আসামীর মধ্যে ৫৩ জন আসামী হলেন সাবেক সচিব। এর আগে মার্চ মাসে ভাটারা থানায় দায়ের করা একটি মামলায় ৭০ জন আমলাকে আসামী করা হয়েছে।
গণহারে মামলা করার প্রবণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বর্তমান সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোখলেস উর রহমানকেও সম্প্রতি একটি মামলায় আসামী করা হয়েছে।
গ্রেফতারঃ
ইতোমধ্যে ২১ জন সাবেক ও বর্তমান আমলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬ জন সিনিয়র সচিব/সচিব রয়েছে, যথা- শমসের মবিন চৌধুরী বীর বিক্রম, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, এম এ মান্নান সিএসপি, আবুল কালাম আজাদ, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মোঃ নজিবুর রহমান, হেলালুদ্দীন আহমদ, আমিনুল ইসলাম খান, ইসমাইল হোসেন, মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মুহিবুল হক, শাহ মোঃ কামাল, মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, জাহাঙ্গীর আলম, এন এম জিয়াউল আলম প্রমুখ। এছাড়াও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোঃ আমজাদ হোসেন খান, সাবেক উপ-সচিব র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, বর্তমান সহকারী সচিব সাইফুল ইসলাম, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব একেএমজি কিবরিয়া মজুমদার এবং আইসিটি বিভাগের ডেটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকত উল্লাহ গ্রেফতার হয়েছেন।
বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরের নামে চাকরিচ্যুতঃ
অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রে একধরণের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করেছে। যারা বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে ইতোমধ্যে ১০ জন সচিব, ২০ জন অতিরিক্ত সচিব সহ অনেককে অবসরে পাঠিয়েছেন। সিনিয়র সচিব ও সচিবদের মধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো কর্মকর্তারা হলেন, যথা- জাহাঙ্গীর আলম, মো. ইসমাইল হোসেন, মোসাম্মৎ শাহানারা খাতুন, মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাঈদ মাহবুব বেলাল হায়দার, মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল, সোলেমান খান, মো: কামরুল হাসান, জাকিয়া সুলতানা, আবু হেনা মোরশেদ জামান। সচিব ছাড়াও ২০ জন অতিরিক্ত সচিব, ১ জন যুগ্ম সচিব এবং ১ জন উপ-সচিব রয়েছেন। এছাড়া ১ জন কর কমিশনারকেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার, যিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের জামাতা।
যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসকে বরখাস্ত করেছে সরকার। ২ জন সহকারী সচিবকেও সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
এছাড়া আরও কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে, যেমন-মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, সংখ্যালঘু, ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা ইত্যাদিকে অপরাধ গণ্য করেও অবসর, শাস্তিমূলক পদায়ন ইত্যাদি করা হচ্ছে।
সংখ্যালঘু প্রসঙ্গঃ
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে সচিবালয়কে হিন্দুয়ালয় উল্লেখ করে সংখ্যালঘু অফিসারদের একটি তালিকা ঘুরছে। এই তালিকার উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত ও ভীম চরণের মতো অনেক অফিসার ৮/১০ বছর আগেই অবসরে চলে গেছেন। খুঁজলে হয়ত পাওয়া যাবে কেউ কেউ মারাও গেছেন। শুধুমাত্র জন্মগতভাবে সংখ্যালঘু হবার প্রাকৃতিক অপরাধে গত ১৬ বছরে প্রশাসনে যত সংখ্যালঘু অফিসার চাকরি করেছে সবার নাম জুড়ে দিয়েছে। যাতে সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ন করার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এটা নিশ্চিত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপপ্রচার।
তাছাড়া বাস্তবতা কি বলে?
সরকারি কর্মচারী বাতায়নের (https://gems.gov.bd/employee-list) তথ্য বিশ্লেষণের ফলে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রশাসনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণ হিন্দু জনগোষ্ঠীর তুলনায় বরং কম। নিচে পর্যায়ক্রমে প্রশাসনে কর্মরত হিন্দু কর্মকর্তাদের পরিসংখ্যান ধরছি-
১৫ জন সিনিয়র সচিবের মধ্যে ১ জন হিন্দু (৬.৬৭%), ৬৭ জন সচিবের মধ্যে একজনও হিন্দু নেই (০০%), ৩৭৪ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে ১৭ জন হিন্দু (৪.৫৪%), ১০৩৩ জন যুগ্ম সচিবের মধ্যে হিন্দু ৪৯ জন (৪.৭৪%), ১৪০২ হন উপ-সচিবের মধ্যে হিন্দু ৮৩ জন (৫.৯২%), ৫৫ জন সিনিয়র সহকারী প্রধানের মধ্যে হিন্দু ৪ জন (৭.২৭%), ২০৩৪ জন সিনিয়র সহকারী সচিবের মধ্যে হিন্দু ২১৩ জন (১০.৪৭%), ১৫৫২ জন সহকারী সচিবের মধ্যে হিন্দু ১২৬ জন (৮.১১%)। সামগ্রিকভাবে প্রশাসনে হিন্দু কর্মকর্তার সংখ্যা ৪৯৩ জন, যা মোট কর্মকর্তার মাত্র ৭.৫২%। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, দেশে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৭.৯৫%। অর্থাৎ আনুপাতিকভাবে প্রশাসনে হিন্দুদের উপস্থিতি তাদের জনসংখ্যার তুলনায় ০.৪২% কম। এরচেয়েও বড় কথা হলো মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে ধর্মীয় বিভাজন বিবেচনায় চাকরি-ব্যবসা কিছুই বিবেচনাযোগ্য নয়। এরপরেও প্রতিক্রিয়াশীল চক্র নানাভাবে মানুষকে উস্কানি দেয়, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করে। এজন্যই সময়ের অপচয় করে হলেও এসবের জবাব দিতে হয়।
এখন সিদ্ধান্ত পাঠকের, গুজবে কান দিবেন নাকি সত্যতা উপলব্ধি করেবন।
কাজে যোগদানে বাধাঃ
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, সংখ্যালঘু, ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং অতীতে ভালো পোস্টিং-এ ছিলেন এরকম অফিসারদেরকে শাস্তি হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এরপরে সচিবালয়ের বাইরে কোন অধিদপ্তর বা এরকম কোথাও বদলি পদায়ন করা হয়। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গোপনে নির্দেশ দেয়া হয় যোগদানের সুযোগ না দিতে। এভাবে অনেকেই যোগদান করতে না পেরে পুনরায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত যেতে বাধ্য হন। অসংখ্য অফিসার এরকম অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।
ওএসডিঃ
আমলাতন্ত্রে সরকারের ক্র্যাশ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে অসংখ্য অফিসারকে ওএসডি বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বানিয়ে রাখা হয়েছে। সঠিক হিসাব বলা কঠিন, তবে ১৭ নভেম্বরের পত্রিকার তথ্য মতে, গত তিন মাসে সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সচিব/সচিব পর্যায় পর্যন্ত ৮০ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল। এরমধ্যে অন্তত ১৭ জন সিনিয়র সচিব ও সচিব ছিল। এরপরে ফেব্রুয়ারিতে আরও ৩৩ জন যুগ্ম সচিবকে একযোগে ওএসডি করা হয়েছে। বিভিন্ন ধাপে ১৫ জন অতিরিক্ত সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে, যাদের অনেককে পরে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়েছে। উপসচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব সহ অগণিত অফিসারকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে।
ফেইসবুকে লেখালেখির কারণেও ওএসডি, বরখাস্ত ও মামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
সচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যে কেউ চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরেও চলে গেছেন। বাকীরা অপমান সহ্য করে হলেও চাকরিতে থাকছেন। কারণ এহেন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করলে হত্যা সহ নানান হয়রানিমূলক মামলায় জীবন তছনছ হয়ে যাবে। ঠিক এই কারণ অনেকেই স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে পারছেন না, নইলে এতদিনে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়া অফিসার শূন্য হয়ে যেতো আমলাতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়।
বর্তমান ক্যাবিনেট সচিব ওএসডিনামা নামে দুঃখের কাহিনি সম্বলিত একটি বই লিখেছেন। এই বইয়ের রিভিউ লিখেছিলেন বর্তমান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত রিভিউতে তিনি লিখেছেন, ১৯৮২ সালের রেগুলার বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শেখ আবদুর রশীদের মতো অফিসারের অন্তত দুইবার ক্যাবিনেট সচিব হওয়া উচিত। ৫ আগস্টের পরে সত্যি সত্যিই ভদ্রলোক ক্যাবিনেট সচিব হয়ে গেলেন। কিন্তু ফাওজুল কবির খান কিংবা শেখ আবদুর রশীদ নিশ্চয়ই স্বীকার লরবেন যে, ১১তম বিসিএসে প্রথম হওয়া অলরাউন্ডার অফিসার আবু হেনা মোরশেদ জামানের অন্তত তিনবার ক্যাবিনেট সচিব হওয়া উচিত। কিন্তু তাঁকেও প্রথমে ওএসডি ও পরে অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে ইউনূস-ফাওজুল-রশীদ গং। ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মে এটার উত্তর ফিরে ফিরে আসবে না?
পাসপোর্ট বাতিল ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাঃ
অন্তত ২৬ জন শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট বাতিল/ স্থগিত করেছে, যার ফলে তাদের বিদেশ যাত্রাও বন্ধ হয়েছে। এরমধ্যে ১৭ জন সাবেক সিনিয়র সচিব ও সচিব রয়েছেন, অন্যরা বিভিন্ন পদবীর কর্মকর্তা।
সামাজিকভাবে হেনস্থাঃ
৮৪ জন আমলার অফিসার্স ক্লাবের মেম্বারশিপ বাতিল করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৭ জনই সাবেক ও বর্তমান সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। বর্তমান কর্মকর্তার মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মোঃ জসীম উদ্দিন অন্যতম।
সরকারের নির্দেশে গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা। দুর্নীতির কল্পিত গল্প ছড়ানো।
১৭ নভেম্বরের পত্রিকার তথ্য মতে, গত ৩ মাসে ৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানীর উদ্দেশে বিভাগীয় মামলা করা হয়। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বমোট ১৮৭০ জনকে বদলি করা হয়।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলঃ
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই ঘোষণা করেছিল, প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে এবং নতুন কোন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে পুরানো নিয়োগ বাতিল করার পাশাপাশি নতুন নিয়োগও মহাসমারোহে চালু রেখেছে।
১৪ আগস্ট একদিনেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ ১১ জন সচিবের চুক্তি বাতিল করা হয়েছিল। এই সংখ্যা পরে আরও বেড়েছে। গত ১৭ নভেম্বরের পত্রিকার তথ্য মতে, ৩ মাসে ১০১ জনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছিল।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সহ আবু হেনা রহমাতুল মুনিম, কে এম আবদুস সালাম, সড়ক, এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরী, লোকমান হোসেন মিয়া, মোঃ খাইরুল ইসলাম মান্নান, সত্যজিৎ কর্মকার, মোকাম্মেল হোসেন, বেগম ওয়াহিদা আক্তার, মো. আলী হোসেন, মো. হুমায়ুন কবীর, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, মোঃ ফজলুল বারী প্রমুখ।
এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের শীর্ষ ২৪ কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যাদের মধ্যে অধিকাংশই অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদা ওবং কয়েকজন সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন।
অবসরভোগী বৃদ্ধ ও প্রতিক্রিয়াশীলদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগঃ
১৭ নভেম্বরের পত্রিকার তথ্য মতে, গত ৩ মাসে ৬৫ জনকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সহ নিয়মিত অফিসারদের পদায়নও ছিল। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কাদেরকে দেয়া হয়েছে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। যারা অন্তত ৯/৮/৫/৩ বছর পূর্বে স্বাভাবিক অবসরে গিয়েছিলেন তাদেরকে ধরে এনে দ্রুততম সময়ে একাধিক প্রমোশন দিয়ে সিনিয়র সচিব বানিয়ে নিয়মিত পদে বসানো হয়েছে। এদের অনেকেই বয়োবৃদ্ধ, সত্তরের উপরে বয়স। বলাবাহুল্য আওয়ামী লীগ আমলের সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগগুলো ছিল অবসরের ধারাবাহিকতায়। চাকরি থেকে অবসরের দীর্ঘ সময় পরে ধরে এনে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কিন্তু ইন্টেরিম সরকার এই রেওয়াজ ভেঙ্গে পছন্দের ব্যক্তিদের খুঁজে এনে পদোন্নতি দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব দিয়েছে।
সরকার যেসব বৃদ্ধদের কয়েক ধাপ পদোন্নতি দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে, তারা হলেন- ক্যাবিনেট সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ, মুখ্য সচিব মোঃ সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন সচিব ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোঃ আবদুল মোমেন, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, মহিলা ও শিশু সচিব বেগম মমতাজ আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব মোঃ এহছানুল হক, আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ সহ অন্যান্য সচিব হলেন এম আকমল হোসেন আজাদ, ড. এম মাহফুজুল হক, মোঃ নেয়ামত উল্লাহ ভুঁইয়া, এ জে এম সালাহউদ্দিন নাগরী, ড. কাইয়ুম আরা বেগম উল্লেখযোগ্য। এদের কাউকে চাকরির ধারাবাহিকতায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়নি, সবাইকে দীর্ঘ অবসর যাপনের পরে তথাকথিত বঞ্চিত কোটায় ধরে এনে আমলাতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের রমরমা মওসুমে সরকার ইলাহী দাদ খান নামক খাদ্য ক্যাডারের একজনকে অবসর থেকে ডেকে এনে খাদ্য সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু নিয়োগের পরেই বেরিয়ে এলো তাঁর বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির মামলা ও বিভাগীয় মামলা চলমান। অবশেষে একদিনের মাথায় সেই নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার।
ড. শেখ আবদুর রশীদ ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির ও পরে জামায়াতে ইসলামীর থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন। মোঃ সিরাজ উদ্দিন মিয়া আবদুল মান্নান ভুঁইয়ার এপিএস ছিলেন এবং ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উগ্র-বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতা ছিলেন। নাসিমুল গনি নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের পিএস ছিলেন। ড. মোঃ আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এম আকমল হোসেন আজাদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পিএস ছিলেন। এ এস এম সালেহ আহমেদ বেগম খালেদা জিয়ার পিএস ছিলেন। ড. এম মাহফুজুল হক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিএস ছিলেন।
শিশু ও মহিলা সচিব বেগম মমতাজ আহমেদ বিদেশি নাগরিক বলে তাঁর সহকর্মীরা পত্রিকায় মন্তব্য করে জানিয়েছেন।
গণহারে পদোন্নতিঃ
১৭ নভেম্বরের পত্রিকার তথ্য মতে, গত ৩ মাসে সিনিয়র সচিব/সচিব পদে ১২ জন, গ্রেড-১ পদে ৩ জন, অতিরিক্ত সচিব পদে ১৩৫ জন, যুগ্মসচিব পদে ২২৬ জন, উপসচিব পদে ১২৫ জন, অন্যান্য ক্যাডারে ২২১ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব (নন-ক্যাডার) পদে ৯ জন এবং সহকারী সচিব (নন-ক্যাডার) পদে ৩৭ জনসহ সর্বমোট ৭৬৮ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এটা প্রথম তিনমাসের পরিসংখ্যান, এরপরের ছয় মাসে আরও অন্তত দ্বিগুণ পদোন্নতির ঘটনা ঘটেছে। আমলাতন্ত্র যেখানে পিরামিডাকৃতির হয়, উপরে ছোট আর নিচের দিকে বড় পরিসরে থাকে। কিন্তু বর্তমান আমলাতন্ত্র পদোন্নতির ভারে মাথা মোটা গোঁড়া চিকন অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
এভাবে পদোন্নতির বিষয়টি কেমন হয়েছে? এই বিষয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে সরাসরি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের প্রশাংসা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোখলেস উর রহমান বলেছিলেন, “আপনারা জানেন, মাত্র ১৩ দিনে এই সরকার তিনটা স্তরের পদোন্নতি দিয়েছেন, মাত্র ১৩ দিনে। সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপ সচিব, উপ সচিব থেকে যুগ্ম সচিব, যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্তি সচিব।“ এমন হাস্যকর ও যুক্তিহীন গণপদোন্নতির ইতিহাস বাংলাদেশে আর ঘটেনি, সম্ভবত বিশ্বেও বিরল নজির হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিঃ
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইন্টেরিম সরকার শেখ হাসিনার আমলে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মূল্যায়নে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল। কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে প্রশাসনের আড়াই হাজারের বেশি কর্মকর্তা ‘বঞ্চনার শিকার’ হয়েছেন বলে মনে করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এদেরকে মূল্যায়ন করতেই কমিটি গঠন করেছিল।
এই কমিটির কাছে আবেদন জমা হয়েছিল ১৫৪০টি। এরমধ্যে থেকে কমিটির সুপারিশে ৭৬৪ জনকে সচিব, গ্রেড-১, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপ-সচিবের মর্যাদা দিয়েছে সরকার। তারমধ্যে ৭২ জনকে সচিব, ৪১ জনকে গ্রেড-১, ৫২৮ জনকে অতিরিক্ত সচিব, ৭২ জনকে যুগ্ম সচিব এবং ৪ জনকে উপ-সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছে সদাশয় সরকার।
এত সংখ্যক পদোন্নতি দেবার পরেও আরও ৭৭৬ জন নিজেকে পদোন্নতিবঞ্চিত মনে করেন এবং তারাও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির আবেদন করে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন। হয়ত তারাও জনগণের ট্যাক্সের পয়সার সৎকারের সুযোগ পাবেন!
ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে। রিভিউ কমিটিতে আবেদন না করেও প্রশাসন ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের কবিরুল ইয়াজদানি খানকে গ্রেড-১ পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন। এমনকি যে তারিখ থেকে তাকে অতিরিক্ত সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, সে তারিখে তিনি অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতাই অর্জন করেননি। একই ব্যাচের কর্মকর্তা আহসানুল হক স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়েছিলেন। অথচ তিনিও বঞ্চিত হিসাবে আবেদন করেছেন এবং ভূতাপেক্ষ যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। একাধিকবার পদোন্নতিবঞ্চিত ১৯৮২ (বিশেষ) ব্যাচের নুসরাত জামান বিগত সরকারের আমলে অবসরের আগ পর্যন্ত ওএসডি ছিলেন। কিন্তু তিনিও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। অথচ একই ব্যাচের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান এনডিসিকে সচিব হিসাবে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনোই পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন না।
১৯৮৪ ব্যাচের সুষেন চন্দ্র দাস, খালেদা পারভীন এবং রিয়াজ আহমেদ অতীতে নিয়মিত পদোন্নতি পেলেও এবার বঞ্চিত হিসাবে প্রথমজন সচিব ও বাকী দুজন গ্রেড-১ পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন। এই ব্যাচের জসিম উদ্দিন মাহমুদকে যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি না দিয়ে সরাসরি অতিরিক্ত সচিব হিসাবে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ একই ব্যাচের আবুয়াল হোসেন অতীতে ৯ বার পদোন্নতিবঞ্চিত হলেও তিনি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হননি। ১৯৮৫ ব্যাচের ফুয়াদ হোসেন কখনও পদোন্নতিবঞ্চিত হননি। পক্ষান্তরে ড. আশরাফুল ইসলাম ৯ বার পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু ফুয়াদ হোসেন সচিব হিসাবে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেলেও ড. আশরাফুল ইসলামের আবেদন বিবেচনা করা হয়নি।
রিভিউ কমিটির সুপারসিহ নিয়েও নানান প্রশ্ন উঠেছে। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিলেও তাদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয়নি। এছাড়া রিভিউর জন্য আবেদন না করা, স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়া, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করা কর্মকর্তা এবং দুদক মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিকেও ওই কমিটি সুপারিশ করেছিল। আর এই সুপারিশের আলোকেই ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খুঁজলে হয়ত পদোন্নতির তালিকায় অদক্ষ, অসৎ, নারী কেলেঙ্কারি, জ#ঙ্গিবাদী, মুক্তিযুদ্ধের চেতাবিরোধী এবং ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের অনেক সমর্থকও পাওয়া যাবে। এরকম নানান অসংগতি, পক্ষপাত ও কোটারি বিবেচনায় এই ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির তালিকা করা হয়েছে। অবশ্য দুষ্ট লোকেরা বলেন, ড. মোঃ মোখলেস উর রহমানের সাথে যারা গোপন চুক্তি করেছেন তারাই পদোন্নতি পেয়েছেন!
এহেন বাস্তবতায় ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিকে ভুতুড়ে পদোন্নতি বলাই সঠিক হবে।
অস্থিরতা ও কাজে মন্থর গতিঃ
৫/১০ পূর্বে অবসরে চলে গেছেন, কিন্তু ধরে এনে সচিবের চেয়ারে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এনালগ যুগের এসব অফিসারেরা বর্তমান বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে কাজে দক্ষতা দেখাতে পারছেন না। অনেক সিনিয়র সহকারী সচিবকে ১৩ দিনের মাথায় অতিরিক্ত সচিব বানানো হয়েছে। এদের কারও উপসচিব/জেলাপ্রশাসক, যুগ্মসচিব বা বিভিন্ন অধিদপ্তরের পরিচালক অথবা অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, ইত্যাদি পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে অতিরিক্ত সচিবের চেয়ারে বসলেও কাজে ঠনঠন। তাছাড়া পদোন্নতিও দেয়া হয়েছে অদক্ষ ও অসৎ কর্মকর্তাদের, যারা এই দুই কারণে অতীতে পদোন্নতি পাননি। ইন্টেরিম সরকারের নীতিই হলো অদক্ষ, অসৎ ও অনভিজ্ঞদের দিয়ে সরকার চালাবে। দক্ষ, সৎ ও অভিজ্ঞদের সরকার থেকে, পারলে দেশ থেকেও বের করে দিবে। এমনকি অদক্ষ ও সৎ অফিসারের চেয়ে দক্ষ ও অসৎ হলেও প্রশাসনযন্ত্র কিছুটা সচল থাকে, সেটাও বিবেচনা করা হয়নি। ফলে সচিবালয়ে দক্ষ, সৎ ও অভিজ্ঞরা অস্থিরতায় ভুগছেন আর সরকারের আস্থাভাজন অদক্ষদের অকর্মণ্যতায় মন্ত্রণালয়গুলোতে ফাইলের পর ফাইল স্তূপ জমলেও ফাইল নড়ছে না।
মব সৃষ্টি করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে বাধাদানঃ
দেশ এক নতুন প্রজাতির মানুষের উত্থান ঘটেছে। তারা সমন্বয়ক, তারা বিপ্লবী, তারা দেশের নতুন ইজারাদার। তাদের ধমকে ও দাপটে মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয়, উপজেলা পর্যায়ের এসি-ল্যান্ড থেকে শুরু করে সচিব, কেউ কাজ করতে পারছে না। ফলে সকল অফিসারেরা শুধু ‘টাইম পাস’ করে রুটি-রুজির জন্য চাকরি টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে। মবসন্ত্রাসের কবলে ইতোমধ্যে অনেক আমলা হেনস্থার শিকার হয়েছেন। ইউনূস গং এই মবসন্ত্রাসীদের প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আমলারা ভয়ে কুপোকাত হয়ে কেবল জীবন বাঁচাতে মরিয়া!
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের তামাশাঃ
সরকার অনেক সংস্কার কমিশন করেছেন। কিন্তু এসব সংস্কার কমিশন কোন রাষ্ট্রদর্শনের আলোকে সংস্কারের প্রস্তাব দিবেন তা খোলাসা করেননি। তারা কি কি সংস্কার করবেন এবং কোন খাতে কেন সংস্কার প্রয়োজন সেই ব্যাখ্যাও আজ অব্দি কেউ দেয়নি। তবুও সংস্কার কমিশনগুলো মহাসমারোহে রাষ্ট্রের পয়সার সৎকার করে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করছেন। এসব সংস্কার প্রস্তাব রাষ্ট্র, জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে মকারি বৈ কিছু নয়। এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনও পিছিয়ে নেই। তাদের প্রস্তাবনার ফলেই সচিবালয় এখন উত্তপ্ত, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ ফেলে রাস্তায় নেমে এসেছে। দিনশেষে এসব সংস্কারের তামাশা দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করবে বলে অনুমান করা যায়।
আমলাতন্ত্রের বেসরকারীকরণঃ
বঙ্গবন্ধুর সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, পূর্ত সহ প্রায় আটটি মন্ত্রণালয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে এক্সপার্ট ব্যক্তিদের সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পরিকল্পনা কমিশন সাজিয়েছিলেন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের দিয়ে। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী বঙ্গবন্ধুর এই উদ্যোগ তেমন সফল হয়নি। এজন্য অন্তত একটা প্রধান কারণ উল্লেখ করা যায় যে, আমলাতন্ত্রে বহিরাগতদের প্রবেশ একেবারেই মেনে নেয়া হয় না। এক্ষেত্রে তারা দলমতের উর্ধে ঐক্যবদ্ধ। যদিও সামরিক শাসনামলে সামরিক কর্তারা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ প্রশাসনিক পদে বসে সচিবালয় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তাতে কোন সমস্যা হয়নি।
জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন আমলাতন্ত্র ভেঙ্গে দিয়ে দুর্বল করে দিবেন। কিন্তু পারেননি, উল্টা পরে আমলাদের দিয়ে মন্ত্রীদের ফাইল ওয়ার্কিং বিষয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ড. ইউনূস এক্ষেত্রে একেবারেই ভিন্ন তরিকা গ্রহণ করেছেন। আশিক চৌধুরী, শেখ মইনউদ্দিন, ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, লুৎফে সিদ্দিকী, ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব, আবদুস সামাদ মৃধা, ড. আমিনুল ইসলামের মতো বিদেশি বাঙালিদের ধরে এনে, অথবা দেশে থাকা লামিয়া মোরশেদ, মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ, এম গোলাম আব্বাস এবং এবং মোহাম্মদ এজাজের মতো জ#ঙ্গিদেরকে প্রশাসনের বিভিন্ন চেয়ারে ও দায়িত্বে বসিয়ে দিয়েছেন। এটা আমলাতন্ত্রকে ভেঙ্গে দিয়ে দুর্বল করার গোপন বাসনা নাকি সারাবিশ্ব তন্ন তন্ন করে বাটপারদের ধরে এনে সম্মানিত করার বিশেষ ব্যবস্থা তা বলা কঠিন। অবশ্য এটাকে আমলাতন্ত্রের বেসরকারীকরণ বললেও ভুল হবে না।
ভবিষ্যৎ পরিণতিঃ
স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর সরকার আমলাতন্ত্রে স্বাধীনতাবিরোধিদের চিহ্নিত করতে একটি বিধান চালু করেছিলেন। সেটা ছিল জাতীয় প্রয়োজনে কিন্তু তৎকালীন সুশীল সমাজ, তথাকথিত প্রগতিশীল এবং উগ্র বাম ও ডানপন্থীরা তীব্র সমালোচনা করেছিলেন এবং এখনও করেন। অথচ ২০২৫ সালে তথাকথিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অনেকগুলো আজব প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। যা কোটারি স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হবে। অথচ এটা নিয়ে সুশীল, প্রগতিশীল ও উগ্র বাম-ডান কারও মুখে রা নেই। সবগুলো বিষয় নিয়ে আপাতত লিখছি না। তবে সচিবালয়ে বিক্ষোভের বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। এই অধ্যাদেশটি মূলত জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে তৈরি হওয়া বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে করা হয়েছে। যা নিয়ে উত্তাল সচিবালয়। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ক) সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে;
খ) অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন;
গ) অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তাঁর কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন; এবং
ঘ) যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
বঙ্গবন্ধুর সরকার স্বাধীনতাবিরোধিদের খুঁজে বের করতে স্কিনিং এর ব্যবস্থা করেছিলেন, কিন্তু ইউনূস সরকার বাসার বাজার করে দিতে অনীহা প্রকাশ করলেও চাকরিচ্যুতির আইন বানিয়েছে। এর যে কী ভয়াবহ অপপ্রয়োগ হবে এখন এবং ভবিষ্যতে তা অকল্পনীয়। এরচেয়ে ‘গয়রহ’ অধ্যাদেশ আর হয় না। ৫৪ বছর পরে এসে আমরা কি দেখছি- বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে নাকি পেছনে ফেরত যাচ্ছে?
আরও কয়েকটি বিপদজনক কাজ করেছে সরকার বাহাদুর। গণহারে ভূতাপেক্ষ ও সপ্তাহান্তে তিনটি পদোন্নতি দিয়ে রাষ্ট্রের অঢেল অর্থের অপচয় করছে। ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিপ্রাপ্তরা ঘরে বসে কাজ না করে রাষ্ট্রের টাকা নিয়ে গেলো। অন্য পদোন্নতিপ্রাপ্তরা অভিজ্ঞতাবিহীন শীর্ষ পদে আসীন হলো এবং সুযোগ সুবিধা নিয়ে নিল।
গণহারে ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো। গ্রেফতার, দুদকে মামলা, পাসপোর্ট বাতিল ইত্যাদি করে চলেছে।
এসব বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই যে বাজে রেওয়াজের প্রক্রিয়া শুরু করলেন ইউনূস গং, এর ভবিষ্যৎ পরিণতি কি হতে পারে তা ভেবেছেন? আজকে যারা চাকরিচ্যুত হচ্ছেন, ওএসডি হচ্ছেন, পদোন্নতিবঞ্চিত হচ্ছেন, তারাও কি অদূর ভবিষ্যতে একই প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধাসহ সবকিছু ফেরত পাবে না? তারা কি এই অপমানের শোধ নিবে না? আমার ধারণা বিনা শাস্তিতে কেউ পার পাবে না এবং সেটা খুব বাজেভাবে ঘটবে। একদিন এইদেশে নির্বাচন হতেই হবে এবং যে দলীয় সরকারই ক্ষমতায় বসুক, এসবের জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে ইউনূস গং এবং সুবিধাভোগীদের। এতে আমলাতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিন্তু তা ঠেকানোর রাস্তাও বন্ধ করেছে ইউনূস সরকার।
প্রশ্ন হলো- অনির্বাচিত, অসাংবিধানিক এবং কথিত নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার এরকম দৃষ্টিকটু ও নোংরা প্রতিক্রীয়াশীল আচরণ করছে ঠিক কোন বিবেচনায়? তাছাড়া এভাবে বেসামরিক আমলাতন্ত্রকে ধ্বংস করে ঠিক কি অর্জন করতে চান ড. মুহাম্মদ ইউনূস?
বিদ্রঃ লেখায় উল্লেখিত সংখ্যাগুলো প্রতিদিন পরিবর্তন হয়ে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া পত্রিকায় প্রাপ্ত তথ্যের ভুলে আমারও ভুল হতে পারে। এই বিষয়টি পাঠক বিবেচনায় রাখবেন।