।। মহিউদ্দিন মোহাম্মদ।।
‘বাঙালি’ আর ‘বাংলাদেশী’ এক জিনিস নয়। বাঙালি হলো জাত, জাতি, নির্দিষ্ট খাসলতের মানুষ। তার দৈহিক গড়ন ডিস্টিঙ্কট, চরিত্র স্বতন্ত্র, সংস্কৃতি আলাদা।
সে বাংলাদেশে থাকলেও বাঙালি, কলকাতায় থাকলেও বাঙালি। বহু দশক ইউরোপে কাটালেও সে বাঙালিই থাকে। ইংরেজ হয়ে যায় না।
কিন্তু বাংলাদেশী হলো নাগরিক, বাসিন্দা, রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত নিশান।
একজন বাংলাদেশী পরিণত হতে পারেন ব্রিটিশ বা জার্মান নাগরিকে, ত্যাগ করতে পারেন বাংলাদেশী পরিচয়, এক রাতে। এবং উল্টোভাবে, কোনো পাকিস্তানী, গ্রহণ করতে পারেন বাংলাদেশী নাগরিকত্ব, বাস করতে পারেন ঢাকায়, হয়ে উঠতে পারেন বাংলাদেশী, অনায়াসে।
কিন্তু বাঙালিত্ব? সেটি ত্যাগ করা যায় না। গ্রহণও করা যায় না। গ্রিক থেসিয়াসের পক্ষে সম্ভব নয় বাঙালি হওয়া, বাঙালি নজরুলের পক্ষেও অসম্ভব গ্রিক হওয়া।
আমি বাঙালি, এর সাক্ষ্য লুকিয়ে আছে চোখ, মুখ, ও কন্ঠে; অভ্যাস, বিশ্বাস, ও খাদ্যে। আমি বাংলাদেশী, এর সাক্ষ্য, পাসপোর্ট ছাড়া কোথাও নেই।
পাসপোর্টটি হারিয়ে গেলে জগদীশচন্দ্র আর বাংলাদেশী নন, কেবলই বাঙালি। শাহজালাল কি বাংলাদেশী? হয়তো বা। কিন্তু বাঙালি? মোটেও নন।
সুতরাং, তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি, এমন শ্লোগানকে যারা ‘বাংলাদেশী’ দিয়ে দূষিত করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যটা বোঝা দরকার।
বাঙালি মানে কলকাতার বাসিন্দা নয়, এবং এক্সক্লুসিভলি, বাংলাদেশের বাসিন্দাও নয়। পৃথিবীর সব কোণায় সেঁটে আছে বাঙালির পদছবি। যারা ‘বাঙালি’ শব্দটিকে কলকাতার মালিকানায় ছেড়ে দিতে চায়, তাদের অসুখটা বের করা দরকার।
জাতটাও খুঁজে দেখা দরকার। ওদের জাত কী? শরীরে বাঙালি, মননে আরব? পাকিস্তানী? মালয়? লংকান? কোনটা? নাকি অজানা জাতের বানর? শিম্পাঞ্জির আইকিউ ৪০ থেকে ৫০, মাঝেমধ্যে ৮০-৯০।
একজন বাংলাদেশীর গড় আইকিউ ৭৪, শিক্ষিতদের নাকি আরও কম, তাহলে পার্থক্য তো বেশি নেই, বানরের সাথে।
আমি কিছু চিড়িয়াখানায় বানরের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করেছি। দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হচ্ছে, তাদের চেয়ে সাধারণ নেংটি বানর অধিক বিচক্ষণ।
একটি বানরকে কলা দেখিয়ে সব কাজ করানো যায় না, কিন্তু একজন বাংলাদেশীকে মুলা দেখিয়ে করিয়ে নেওয়া যায় অনেক কাজ।
(৫৭ / ৪০৫ / অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি)