রাজশাহীর পুঠিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে পুকুর খননের ঘটনা আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—বাংলাদেশ জাতি হিসেবে যতটা অগ্রসর হয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ঠিক ততটাই পশ্চাৎমুখী রয়ে গেছে। এরা এখনো সংখ্যালঘু মানেই দুর্বল, আর দুর্বল মানেই শিকার—এই নোংরা সামন্তবাদী মানসিকতা নিয়ে সমাজের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নয়, বিএনপির সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। এটা কোনো আজগুবি অভিযোগ নয়, ইতিহাস যার সাক্ষী। তাদের জন্মই হয়েছে পাকিস্তানপন্থী আদর্শ নিয়ে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান বাদে বাকি সবাই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। সেই পাকিস্তানি মনোভাবেই তারা বারবার সংখ্যালঘুদের জমি দখল, বাড়িঘরে আগুন, গুজব ছড়িয়ে হামলা, ধর্ষণ, হত্যা—এসব কুখ্যাত কাণ্ড ঘটিয়েছে এবং ঘটিয়ে যাচ্ছে। কখনও ‘ভোট না দিলে খবর আছে’, কখনও ‘ধর্মীয় উসকানি দিয়ে বাড়িঘরে আগুন’—এই হচ্ছে বিএনপির ফর্মুলা।
পুঠিয়ার গোড়াগাছিতে যা ঘটেছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা হচ্ছে একটা ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত #সংখ্যালঘু নিধনের অংশ। জমি লিজ নেওয়ার নাটক, অস্ত্রের মুখে সই করিয়ে নেওয়া দলিল, ভুয়া নাম ব্যবহার করে কাগজপত্র বানানো, তারপর সেই দলিল বিএনপির নেতার নামে ট্রান্সফার করে নেওয়া—সবই পূর্বপরিকল্পিত ভূমিদস্যুতার সচেতন প্রক্রিয়া।
আবুল কালাম নামের এই ব্যক্তি শুধু দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির প্রাক্তন বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক না, তিনি মূলত একজন ফায়দা হাসিলকারী রাজনৈতিক গুণ্ডা। যেভাবে তিনি রাতে ভেকু চালিয়ে জমি কেটে পুকুর খননের চেষ্টা করেছেন, সেটা কোনো সাধারণ দখলদারির ঘটনা না। এটা সংখ্যালঘু হিন্দু কৃষকদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার স্পষ্ট বার্তা: “এই দেশে তোমাদের নিরাপত্তা নেই, জমি নেই, ঠাঁই নেই।”
পুকুর খনন নয়, এটা আসলে মাটি খুঁড়ে হিন্দুদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা। যখন কৃষকরা বাধা দিতে গেছে, তখন আবুল কালামের বাহিনী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এটা কেবল সহিংসতা নয়, এটা সন্ত্রাস। এটাই বিএনপির আসল চেহারা—ক্ষমতার বাইরে থাকলে তারা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে, আর ক্ষমতায় গেলে ভূমি দখল, সংখ্যালঘু নিধন, এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাটে মেতে ওঠে। তাদের রাজনীতির উৎসই হলো হিন্দুবিদ্বেষ, ধর্মীয় বৈষম্য, আর পাকিস্তানি প্রেতাত্মার চেতনা।
একটা গোটা সম্প্রদায়ের জমি কৌশলে লিখে নিয়ে, ভুয়া লিজ বানিয়ে রাতের অন্ধকারে ভেকু চালিয়ে ‘পুকুর’ বানাতে চাওয়া কোনো “উন্নয়ন কাজ” নয়—এটা ধর্মীয় দমননীতি। আবুল কালামের বাহিনী যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই—বিএনপির নেতৃত্বেই এই দেশে সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন আজও সাংগঠনিকভাবে পরিচালিত হয়।
আবুল কালাম দাবী করছেন তিনি জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে পুকুর কাটছেন—এটা এমন এক হাস্যকর মিথ্যাচার, যা কেবল বিএনপির মুখেই মানায়। কারণ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন—পুকুর খননের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাহলে এই মিথ্যা বলার সাহস কোথা থেকে আসে? উত্তর একটাই—বিএনপি মানেই মিথ্যাচার, সন্ত্রাস আর লুটপাট। আর সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার চালানো তাদের রাজনৈতিক চরিত্রের অংশ, কৌশল না।
আজ এই হামলা, কাল আরেকটা দখল, পরশু আরেকটা আগুন—এইভাবেই বিএনপি তাদের ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনীতি এগিয়ে নিতে চায়। তাদের কাছে সংখ্যালঘু মানেই টার্গেট, ভীতিকর নয়, সুবিধাজনক শত্রু। তারা জানে, রাষ্ট্র যদি দুর্বল থাকে, সংখ্যালঘুদের উপর চড়াও হতে সবচেয়ে সহজ। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে বারবার তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এটাই বিএনপির রাজনীতি—নির্যাতন, জমি দখল, অস্ত্রের ভয়, এবং অসত্যের জোরে সংখ্যালঘুদের মাটি থেকে হটিয়ে দেওয়া। এটা কোনো বিচ্ছিন্নতা না, এটা তাদের রাজনৈতিক রক্তপ্রবাহে মিশে থাকা এক নৃশংস আদর্শ।
সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভূমি দখলের মাধ্যমে ‘রাজনৈতিক আধিপত্য’ কায়েমের যে চেষ্টা চলছে, তা যদি আজ রুখে না দেওয়া হয়, তাহলে আগামীকাল এ দেশের মাটি শুধু মুসলমানদের নয়, সেই মুসলমানদেরও হবে না যারা মানবতাবাদে বিশ্বাস করে। তখন এই দেশ হবে কেবল তাদের—যারা অস্ত্রের মুখে দলিল করায়, আর ভেকুর দাঁত দিয়ে সহ-নাগরিকের ঘর-বাড়ি-ভূমি খুঁড়ে গিলে ফেলে।
বাংলাদেশ এমন দেশ ছিল না, হবার কথাও না। কিন্তু বিএনপি এটাকে সেই পাকিস্তানি রূপেই ফিরিয়ে নিতে চায়, যেখানে ধর্মের নামে নিপীড়নই নিয়ম, আর মানবতা এক অচল মুদ্রা।