।। এম হাবিব ।।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের আবারও জনসমর্থন ফিরে পাওয়ার একাধিক কারণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও দলটি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে নানা সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে, তবুও বিকল্প রাজনীতির দুর্বলতা আওয়ামী লীগের জন্য আবারও সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন এক সন্ধিক্ষণ চলছে, যেখানে আওয়ামী লীগ তার অপরাধ ও ব্যর্থতার দায়ে জনসমর্থন হারালেও, আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে সত্যিকারের কোনো দল গড়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক শক্তির এই শূন্যতা আওয়ামী লীগের জন্য পুনরায় ফিরে আসার একটি বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি করছে।
বর্তমানে যারা নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছেন, তাদের নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং আদর্শিক বিভ্রান্তি সাধারণ মানুষের আস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি যারা অতীতের শাসনব্যবস্থার বিরোধী ছিলেন, তারাও এখন নেতৃত্ব সংকটে। জনসাধারণ বিভ্রান্ত এবং ক্লান্ত, তারা এমন কিছু দেখতে চায় যা পরিচিত, স্থিতিশীল এবং ন্যূনতমভাবে দায়িত্বশীল।
যেসব রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা নারীর অধিকারের মতো বিষয়কে বিতর্কের কেন্দ্রে আনছে, তারা জনগণের ঐতিহাসিক আবেগ ও মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করছে। এটি তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর বদলে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
যে কোনো রাজনৈতিক দল জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চাইলে তাকে জনগণের ইতিহাস, আত্মপরিচয় ও আবেগকে সম্মান করতে হবে। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘সমাজের অগ্রগতির ধারা’ এই দুই ভিত্তিকে এড়িয়ে গিয়ে কেউ দীর্ঘমেয়াদে জনমত অর্জন করতে পারবে না। বরং এর বিরোধিতা করলে, জনগণ পুনরায় পূর্ববর্তী শক্তি আওয়ামী লীগের কাছেই ফিরে যেতে পারে, যদি বিকল্প কোনো দল বিশ্বাসযোগ্য না হয়।
বর্তমান সময়ে মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ সংগঠকদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা বা ইতিহাস বিকৃতির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা কেবল ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে না, বরং একটি আত্মরক্ষামূলক মনোভাবকে উসকে দিচ্ছে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নেতৃত্বের অভাব, আদর্শহীন অবস্থান, সব মিলিয়ে দেশে একটি ‘সক্ষম বিকল্পের’ অভাব স্পষ্ট। এই শূন্যতা পূরণে আবারও সেই পুরনো আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সম্ভাব্য কিছু কারণও আছে:
প্রথমত, জামাতের মতো নেতাহীন ও বিতর্কিত আদর্শধারী দল যদি বিএনপির বিকল্প হিসেবে উঠে আসতে চায়, তা সাধারণ মানুষ কখনও সহজে মেনে নেবে না। মানুষের রাজনৈতিক স্মৃতি ও আদর্শের প্রতি আনুগত্য এখনও অনেকাংশে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতিগত আত্মপরিচয়ের সাথে গভীরভাবে জড়িত।
দ্বিতীয়ত, যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং নারীর অধিকারের মতো মৌলিক বিষয়ে বিতর্ক তৈরি করছে, তারা নিজেরাই নিজেদের জনপ্রিয়তা ক্ষয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ এ ধরনের বিভ্রান্তি ও ইতিহাস বিকৃতিকে সহজে ক্ষমা করে না। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগই আবার সেই “নিরাপদ আশ্রয়” হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
তৃতীয়ত, এনসিপির মতো বিকল্প শক্তিগুলোর ‘পলিটিক্যাল ক্যালিবার’ এখনও জাতির কাছে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হয়ে ওঠেনি। তারা আওয়ামী লীগের বিকল্প হবার মতো আদর্শ, কাঠামো ও সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে পারেনি, যা একটি বড় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে।
চতুর্থ, আওয়ামী লীগ সবসময় দুটি শব্দের উপর ভর করে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান গড়ে তুলেছে, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিশীলতা। এই দুটি শব্দ যেসব দল অবজ্ঞা করে বা দূরে রাখতে চাইবে, তারা কিন্তু জনসাধারণের আবেগ ও চেতনার জায়গা অর্জন করতে পারে না।
এদিকে তাজউদ্দীন আহমেদের মতো প্রামাণ্য মুক্তিযোদ্ধাদের যখন অবমূল্যায়ন বা ইতিহাস বিকৃতির মতো ঘটনা ঘটে, তখন জনগণ আত্মপরিচয় রক্ষার চেতনায় আরও বেশি ঐতিহ্যবাহী শক্তি আওয়ামী লীগের দিকে ফিরে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ আবারও রাজনৈতিক ভাবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ তৈরি হতে পারে।( লেখক: যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতা)