।।মাহবুব জামান।।
অভাবনীয় এক অর্জন অথচ……
গত ২ জুন জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত হোল রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
কী বিরাট এক জাতীয় অর্জন অথচ প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া অথবা সোশ্যাল মিডিয়াতে টু শব্দটি নাই।
দুয়েকটা পত্রিকায় মফস্বল সংবাদ দাতার নিউজ হয়েছে এটা ! ধন্যবাদ,সংবাদদাতা বৃন্দ।
এর মাধ্যমে আমরা পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী পৃথিবীর ৩৩ তম দেশ হলাম।
এ এক বিরাট অর্জন!
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার একটি গ্রাম রূপপুর।পদ্মা নদীর পাড়ে ছোট্ট একটি গ্রাম।
রূপপুরে এই প্রকল্পের অভিযাত্রা রূপকথার মত মনে হয়।
আমাদের ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি এই প্রকল্পের কথা !
১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে একটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে।
সেই মতে ১৯৬৩ সালে এর যথাযথ স্থান হিসাবে রূপপুর নির্ধারিত হয়।সে পরিকল্পনায় ২৬০ একর জমিও অধিগ্রহন করা হয়।
এমনকি ১৯৬৭ সালে কিছু দালান কোঠা, আবাসিক ভবনও নির্মান করা হয়।
১৯৬৯ সালে বেলজিয়ামের সহায়তায় ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হয়।
কিন্তু ১৯৭০ সালে এই প্রকল্প বাতিল করা হয়।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন এই প্রকল্প পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ সালে একটি ফরাসী কোম্পানি এই প্রকল্পের feasibility study করে এবং প্রকল্প viable বিবেচিত হয়।
১৯৮৭ সালে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের দুটি কোম্পানি দ্বিতীয় বার স্টাডি করে এবং ৫০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র করার পরামর্শ দেয়।
তারপর দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন ৬০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেয়।
সেই প্রস্তাব অনুযায়ী ২০০৮সালে চীনের সহায়তায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত হয়।সেটাও কার্যকর হয় নি।
অবশেষে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে এই পরিকল্পনা অনুমোদন হয়।
সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার রাস্ট্রীয় মালিকানাধীন নিউক্লিয়ার কোম্পানি রোসাটম-এর সাথে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন চুক্তি স্বাক্ষর করে।
পুনরায় যাত্রা হোল শুরু।তারই ফলশ্রুতিতে আজ আমাদের পারমানবিক শক্তি জগতে প্রবেশ।
অথচ, নীরবে-নি:শব্দে চালু হয়ে গেলো রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।কেন???
কারণ, আমরা দেশের চেয়ে বেশী ভালোবাসি দল, আর দলের চেয়ে বেশি নেতাকে।
তাই এটা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলে যদি বিগত সরকারের অর্জন বেড়ে যায় !!! তাই এই সুনসান নীরবতা। আশ্চর্যজনকভাবে মিডিয়াও চুপচাপ।
অন্যকে ছোট করে কেউ কোন দিন বড় হয় না, নিজেকেই বড় প্রমাণ করতে হয়।
তাছাড়া এটা কোন দল বা নেতার অর্জন নয়।
এটা সমগ্র দেশ ও জাতির অর্জন।আমাদের দেশ এক অনন্য উচ্চতায় উঠে গেল।আমরা এখন পারমানবিক ক্লাবের মেম্বার।
নানা চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এই সফলতা। এর ফলে দেশের প্রায় ১৬০০ মেধাবী প্রকৌশলী রাশিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই পারমানবিক প্রকল্পে যুক্ত হোল।এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যেই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও মাস্টার্স কোর্স চালু হয়েছে। এ পর্যন্ত কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১২ হাজার প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ,কর্মচারী,নির্মাণকর্মীর।এই সংখ্যা অচিরেই ২০ হাজারে উন্নীত হবে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে দেশের এই বিরাট অর্জন উদযাপন করি। জয় বাংলা !!!
লেখক: রাজনীতিক ও বিশ্লেষক।