।।কবির য়াহমদ।।
মুহাম্মদ ইউনূস যদি ব্রিটেনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তবে সেই সাক্ষাতের স্থান কোথায় হবে? হাউস অব কমন্সে টিউলিপ সিদ্দিকের অফিসে, নাকি যে হোটেলে ওঠবেন মুহাম্মদ ইউনূস, সেখানে?
সাক্ষাতের স্থান নিয়ে একটা হালকা লড়াই এখানে হলেও হতে পারে।
টিউলিপ সিদ্দিক মুহাম্মদ ইউনূসকে তার অফিস হাউস অব কমন্সে মধ্যাহ্ন ভোজ অথবা বিকেলের চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন।
দাওয়াতের ভেন্যুর মধ্যে একটা কিন্তু আছে। এখানে বিশাল এক রাজনীতি আছে। আছে অপমানের অভিসন্ধিও।
বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকার টিউলিপ সিদ্দিককে অপমান করেছেন, এখন ব্রিটেনে বসে সাক্ষাতের ভেন্যু বিষয়কে আলাপে সুযোগ পেয়ে সে অপমান ফিরিয়ে দিলেন ইউনূসকে।
এটাকে সম্ভবত ব্রিটিশ বুদ্ধি বলে! টিউলিপ জন্মসূত্রে ব্রিটিশ বলে তার ‘ব্রিটিশ’ ছাপ এখানে রেখে দিলেন!
ধারণা করছি, টিউলিপের মুখোমুখি হতে চাইবেন না মুহাম্মদ ইউনূস। প্রথম কারণ তিনি জানেন টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তার সরকারের যে অভিযোগ সেটা চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার। প্রতিহিংসা বলছি কারণ যুক্তরাজ্য স্বতন্ত্রভাবে এই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করেছিল। এবং তদন্তের স্বার্থে টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন। এবং গত জানুয়ারিতে তদন্ত কর্মকর্তা লরি ম্যাগনাস টিউলিপ সিদ্দিককে অভিযোগমুক্ত বলে ঘোষণা দেন।
সাক্ষাৎ না হওয়ার দ্বিতীয় কারণ মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে বিদ্বেষ পোষণ করেন। সে কারণে টিউলিপ-ইউনূসের সাক্ষাতের সুযোগ কম।
তৃতীয় কারণ মুহাম্মদ ইউনূস টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফেললে, ব্রিটিশ মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় টিউলিপকে নিয়ে তাদের অপপ্রচারের বিষয়টি প্রকাশ্য হয়ে যাবে। ইউনূস চাইবেন বিদেশিদের কাছে তাদের প্রচারণার জায়গাটা জিইয়ে রাখতে।
চতুর্থ কারণ মুহাম্মদ ইউনূস অনিমতান্ত্রিক হলেও সরকারপ্রধান, তিনি অন্য একটা দেশের একজন এমপির সঙ্গে এভাবে সাক্ষাৎ করবেন কেন? এটা প্রটোকলের সঙ্গে যায় না।
অবশ্য মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে দশমাসে দশের বেশি বিদেশ সফর করেছেন, তাতে তিনি নিজেই প্রটোকল সম্পর্কে একজন চূড়ান্ত রকমের অসচেতন মানুষ। বিভিন্ন দেশের এনজিওদের আমন্ত্রণ পেলেই উড়াল দেন। এখনো তিনি যেন একজন এনজিও ব্যক্তিত্ব।
সেদিন ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় একজন মন্তব্য করল চীন-ইন্দোনেশিয়া বা কোন দেশের কোন এনজিও যদি কোন মাছের আড়ত উদ্বোধনে ডাকে তাকে, তবে সেখানেও তিনি হাজির হয়ে যেতে পারেন। আমি অবশ্য সে মন্তব্যে একমত হতে পারিনি। আমার একমত-দ্বিমতে অবশ্য কোন কিছু বদলে যায় না।
তবে এখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়্যার স্টারমার যদি ইউনূসকে টিউলিপের সঙ্গে সাক্ষাতের ‘পরামর্শ’ দিয়ে ফেলেন, তখন তার অন্য কিছু ভাবার সুযোগ থাকবে না। অবশ্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সেটা করবেন বলে মনে হয় না। করা উচিতও নয়।
ব্রিটেনে অভিযোগমুক্ত টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি হিসেবে পরিচিত নন, তিনি লেবার পার্টি দলীয় নির্বাচিত এমপি, সাবেক মন্ত্রী। তিনি ওখানকার একটা সংসদীয় আসনের প্রতিনিধিত্ব করেন, প্রতিনিধিত্ব করেন লেবার পার্টিকে। সুতরাং এখানে বসে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার টিউলিপকে নিয়ে যা ইচ্ছে তা বলতে পারলেও ওখানে সেটা অসম্ভব। ‘চায়ের দাওয়াত’ স্রেফ শিষ্টাচার। তবে ওই শিষ্টাচারের আড়ালে রয়েছে ব্রিটিশ রাজনীতি।