“বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি করা হচ্ছে”—এমন অভিযোগ এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান ইউনূস সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে ‘বিচারিক প্রহসন’ চালাচ্ছে।
জয় বলেন, “সরকার একদিকে নির্বিচারে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, অন্যদিকে আদালতে তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর ন্যূনতম সুযোগও দিচ্ছে না। আইনজীবীদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। যে কেউ রাজবন্দিদের পক্ষে দাঁড়াতে গেলেই তাকেও গায়েবি মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে, এমনকি মব লিঞ্চিং পর্যন্ত হচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকারের নিয়োগকৃত আইনজীবী হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন, তার অতীত কর্মকাণ্ড নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে জয় বলেন, “আমার মায়ের পক্ষেই সরকার একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছে, যিনি অতীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছিলেন।”
বিষয়টি সামনে আসার পর “বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা কোথায়?”—এই প্রশ্ন ঘুরছে রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে।
কে এই আইনজীবী?
জয়ের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ব্যক্তি হলেন অ্যাডভোকেট আমিনুল গনি টিটু। তিনি পেশাগতভাবে সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হলেও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত জামায়াতপন্থী ঘরানার মানুষ হিসেবে।
তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অতীতে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কট্টর অবস্থানে ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন: “শেখ হাসিনার উচিত যুদ্ধাপরাধীদের মতো শাস্তি পাওয়া। দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র সমাধান।”
এই ব্যক্তি এখন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী! যাকে বিচারের নামে প্রহসন আখ্যা দিয়েছেন সচেতন মহল।
জয় তার বিবৃতিতে বলেন, “বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। যারা কারাবন্দিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াচ্ছেন, তারাও এখন গ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা বা মব লিঞ্চিংয়ের শিকার হচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এটা কোনো বিচার নয়—এটা ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত বিচার নামক প্রহসনের প্রস্তুতি।”
বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয়। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন পেশার মানুষ— সাংবাদিক, শিক্ষক, ক্রীড়াবিদ এমনকি মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের হয়েছে, যার অনেকগুলোতেই নিহত ব্যক্তির মৃত্যুর তারিখ নিয়ে অসঙ্গতি দেখা গেছে। যেমন—২রা জুলাই স্ট্রোকে মৃত ছমেছ উদ্দিনকে দেখানো হয়েছে ‘২রা আগস্ট পলায়নরত অবস্থায়’ হত্যা মামলার ভিক্টিম হিসেবে। তাকে এমনকি জাতীয় বীর আখ্যা দিয়ে কবরে নামফলকও লাগানো হয়েছে। মামলারই ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক, যিনি সাংবাদিকতা থেকে একসময় শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও নানাবিধ অভিযোগ এনেছে ইউনূস সরকার। যদিও এসব অভিযোগের পক্ষে এখনও পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান বা গ্রহণযোগ্য প্রমাণ প্রকাশ করতে পারেনি ইউনূস সরকার। উপরন্তু মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে উপুর্যপরি তার সম্মানহানি করা হচ্ছে।
টিউলিপ অবশ্য নিজে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, বরং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের রেকর্ড অনুসারে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে প্রকাশ্য বক্তব্য থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। উপরন্তু তিনি নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ইন্ডিপেনডেন্ট এথিক্স অ্যাডভাইজর এই বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করেন এবং কোনো অনিয়মের প্রমাণ না পেয়ে টিউলিপকে দায়মুক্তি দেন।
আইন ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা রক্ষার ক্ষেত্রে “পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ” একটি মৌলিক অধিকার। তবে যিনি স্পষ্টভাবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাকেই যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন প্রশ্ন উঠতেই পারে—এটা আদৌ আইন, না কি কেবল রূপায়িত প্রতিহিংসা?