বিদেশি চাপ ও অর্থায়ন প্রত্যাহারের মতো চরম প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু তিন বছরে পা দিল। ২০২২ সালের ২৫শে জুন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করেন। পরদিন ২৬শে জুন, এটি খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য।
দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপন করে সেতুটি দেশের যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনীতির গতিপথই বদলে দিয়েছে।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে, গত তিন বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৭টি যানবাহন, যার বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫০৭ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৬০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিন বছরে যানবাহন ও টোল আদায় (অর্থবছর অনুযায়ী):
২০২২-২৩ অর্থবছর:
যানবাহন – ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৯৯টি
টোল – ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ টাকা
২০২৩-২৪ অর্থবছর:
যানবাহন – ৬৮ লাখ ১ হাজার ৩৭৪টি
টোল – ৮৫০ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা
২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত (চলতি হিসাব):
যানবাহন – ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩৩৪টি
টোল – ৮৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ২ হাজার ৫৫০ টাকা
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদ বলেন, “গত তিন বছরে যানবাহনের সংখ্যা ও টোল আদায়ের চিত্র তুলে ধরেছি। প্রতিবছরই এর প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তৈরি হয়েছে নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনাও।
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করে, তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সাহসিকতার সঙ্গে নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। পরে সেই অভিযোগের কোনো প্রমাণ না মেলায় বিশ্বব্যাংকও সমালোচনার মুখে পড়ে।
ফলে পদ্মা সেতু এখন কেবল একটি যোগাযোগ অবকাঠামো নয়—বরং এটি দেশের আত্মবিশ্বাস, সক্ষমতা ও রাজনৈতিক দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবেই ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।